বিনোদন

শুরুতেই হুমায়ূন স্যারের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়ে গেলো : ফেরদৌস

বাংলা সিনেমায় রুচির যখন খরা চলছিল, সেই সময় বাংলা সিনেমায় তিনি নিয়ে এসেছিলেন ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ নিয়ে। মিষ্টি লুকের সেই নায়ক আর কেউ নন তিনি হলেন ফেরদৌস। ঢালিউডের সীমানা পেরিয়ে কলকাতার টালিউডে তিনি সমান জনপ্রিয়। হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় একটি নাটকে ও দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। হুমায়ূন আহমেদকে বাবার মতো ভালোবাসতেন তিনি। আজ হুমায়ূনের মৃত্যুবার্ষিকীতে সেসব দিনের নানা কথা জাগো নিউজের কাছে তুলে ধরেছেন ফেরদৌস। আলাপের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

Advertisement

জাগো নিউজ : হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কবে প্রথম দেখা হয় আপনার? জাগো নিউজ : স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল একুশে বইমেলায়। এটা ১৯৯৫ সালের দিকের কথা। তখন আমি শুধুই স্যারের লেখার ভক্ত। এর কিছুদিন পরে এফডিসিতে দেখা হয় তার সঙ্গে। আমার ‘হঠাত বৃষ্টি’ সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পরে ১৯৯৮ সালের দিকে স্যার আমাকে ফোন করলেন একটি নাটকে অভিনয়ের জন্য। আমার সিনেমা সুপারহিট হয়েছে। আমি তো নাটকে অভিনয় করবো না। না বলে দিলাম। হুমায়ূন আহমেদ স্যারের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়ে গেলো প্রথম আলাপেই।

জাগো নিউজ : হায় হায়, শুরুতেই.. এরপর তো নাটকটিতে অভিনয় করেছিলেন। সেই গল্পটা শুনতে চাই।ফেরদৌস : আম্মা যখন শুনলেন, স্যার আমাকে ফোন দিয়ে দিয়েছিলেন! উনি বললেন, হুমায়ূন স্যার যেটা বলছেন সেটা করে ফেলো। আম্মা কিছু বললে আর না করা যায় না।

নাটকটির নাম ছিলো ‘এসো’। পরে নাটকটিতে অভিনয় করলাম। এই সময় স্যারের সঙ্গে একটা ভালো বণ্ডিং তৈরি হয়ে গেলো। স্যারকে বললাম, আমি আপনার সিনেমায় অভিনয় করতে চাই। স্যার বললেন, ‘সেটা নিশ্চয় হবে। এরপরের স্যারের পরিচালনায় ‘চন্দ্রকথা’ ও ‘আমার আছে জল’ সিনেমায় অভিনয় করি। আমাদের মধ্যে বাবা-ছেলের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। খুব কাছের মতো হতো তাকে।

Advertisement

জাগো নিউজ : নির্মাতা হিসেবে হুমায়ূন আহমেদের যে গুণ আপনাকে মুগ্ধ করতো…ফেরদৌস : উনি যে দৃশ্যটি শুটিং করবেন বলে স্পটে আসতেন। সেটা শুটিং করার সময় শুটিংস্পট ও অভিনয় শিল্পীর প্রকৃতি দেখে সেই চরিত্রটিকে ইমপ্রুভ করতেন। যেমন আমার মনে পড়ে, যখন চন্দ্রকথা সিনেমার শুটিং করতে যাই। আমাকে মেকাপ দেওয়া হয়েছে। স্যার দেখে বললেন, ‘ওকে তো গ্রামের গরিব ছেলের মতো লাগছেন না।’ পরে স্যার আমার পকেটে একটা আয়না ও চিরুনি দিয়ে দিলেন। চরিত্রটি এমন দাঁড়ালো ছেলেটি তার রূপচর্চার ব্যাপারে যত্নশীল। স্যার বলে দিলেন, ‘তুমি মাঝে মধ্যে আয়না-চিরুনি প্রপস হিসেবে ব্যবহার করবা। এটা স্যার সব সময় করতেন। আমার ভীষণ ভালো লাগতো। উনি যেহেতু নিজে লিখতেন এবং খুব ভালো একজন চিত্রনাট্যকার ছিলেন, সেই হিসেবে ইম্প্রুভাইজেশনগুলো আমার দারুণ লাগতো। তিনি চরিত্রগুলো খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতেন। অভিনয় করতে অনেক সহজ হতো।

জাগো নিউজ : শেষ কবে দেখা হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে ?ফেরদৌস : স্যার যখন নিউইয়র্ক থেকে চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশে আসলেন সেই সময় দেখা করেছিলাম। স্যারের ধানমন্ডির বাসার পাশেই আমার মেয়ের স্কুল ছিল। একদিন মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে স্যারের বাসায় গেলাম। তার ব্যবহারে মোটেও তাকে অসুস্থ মনে হয়নি। উনি বসে বসে স্ক্রিপ্ট লিখছিলেন। আমাকে বললেন, ‘দেখো এখনো কাজ করে যাচ্ছি।’ আমার মেয়েকে চকলেট দিলেন। ওইটাই ছিল তার সঙ্গে শেষ দেখা।

জাগো নিউজ : আপনার অভিনয় নিয়ে তার কোনো কমেন্ট কিংবা তার এমন কোনো আচরণ যেটা আপনাকে বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছে…ফেরদৌস : হুমায়ূন স্যার আমার নাম ধরে ডাকতেন না। আমাকে সব সময় ‘নায়ক’ বলে ডা্কতেন। এটা খুব পজেটিভভাবে বলতেন, আমাকে খুব ইন্সপায়ার করতো। আমি জীবনে সত্যি সত্যি নায়ক হতে চেয়েছিলাম। স্যারের এই স্বীকৃতি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।

জাগো নিউজ : হিমু ও মিসির আলী হুমায়ূন সৃষ্ট এই দুইটি চরিত্র খুব আলোচিত। ব্যক্তি হুমায়ূনকে কাছে থেকে হিমু নাকি মিসির আলী মনে হতো? ফেরদৌস : তাকে আমার হিমুর মতো মনে হতো। হিমুর মতো পাগলামিটা তার মধ্যে আমি বেশি দেখেছি। হঠাৎ করে মানুষকে চমকে দিতে পছন্দ করতেন। শুটিংয়ের সময় বৃষ্টি আসলো, উনি বললেন, চলো বৃষ্টিতে ভিজি। সত্যি সত্যি শুটিং বন্ধ করে সবাইকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে শুরু করতেন। ইচ্ছে হলো সবাইকে ডেকে নিয়ে সুইমিংপুলে লাফ-ঝাঁপ শুরু করলেন। উনি এমনই ছিলেন। মন যা চাইছে সেটাই করতেন। আর মিসির আলী তো যা করে অনেক চিন্তা ভাবনার পর সেটা করে। আমার মনে হয় হিমু অনেক বেশি হুমায়ূন আহমেদকে রিপ্রেজেন্ট করে।

Advertisement

জাগো নিউজ : আজ হুমায়ূন আহমেদের ৭ম মৃত্যু বার্ষিকী, এই দিনে তার ও আপনার ভক্তদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?ফেরদৌস : হুমায়ূন আহমেদ শারীরিক ভাবে আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ সার্বক্ষণিকভাবে আমাদের সঙ্গে আছেন, আজীবন থাকবেন। বাংলাভাষা যতদিন থাকবে ততদিন তিনি অমর হয়ে থাকবেন। তাকে নিয়ে চর্চা হবে, তার সিনেমা, নাটক, গান, লেখা নিয়ে আলোচনা হবে। এগুলো চিরস্থায়ী। অল্প কিছু গান করে গেছেন এগুলো কালজয়ী হয়ে আছে। আমাদের উচিৎ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তার কাজগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়া।

এমএবি/এলএ/এমএস