দেশজুড়ে

সিরাজগঞ্জে দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি, খাবার সংকট

সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ হার্ডপয়েন্ট এলাকায় ১৮ সেন্টিমিটার বেড়ে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৬টি ইউনিয়নের দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

Advertisement

যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার্ত মানুষেরা উঁচু বাঁধ, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিচ্ছে। ইতোমধ্যে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। তবে সীমিত আকারে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হওয়ায় অধিকাংশ বন্যার্ত মানুষের ভাগ্যে ত্রাণ জুটছে না। ফলে বানভাসি মানুষ খাদ্য সংকটে রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রণজিত কুমার সরকার জানান, শুক্রবার সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ডপয়েন্টে যমুনার পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১৪.৩৫ মিটার। যা বিপৎসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার ওপরে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে কাজিপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এদিনে পানি বৃদ্ধি অনেকটা কমেছে। শুক্রবার সকালে পানি বাড়লেও বিকেল থেকে কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যমুনার ভাঙন থেকে রক্ষায় উপজেলার মেঘাই, নতুন মেঘাই, পাইকড়তলী, কুনকুনিয়া ও পলাশপুর গ্রামের দেড় হাজার পরিবারকে রক্ষায় নির্মিত রিং বাঁধটি গত মঙ্গলবার মেঘাই আটাপাড়া অংশে ধীরে ধীরে বিস্তৃতি হয়ে বাঁধটির প্রায় ৭০ মিটার এলাকা ভেঙে গেছে। এতে প্রবল বেগে পানি ঢুকে পড়ে ওই পাঁচটি গ্রাম মুহূর্তেই প্লাবিত হয়ে যায়। ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি পরিবারের ঘরে শুকনো খাবার নেই। নেই রান্নার জ্বালানিও। নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় মিলছে না বিশুদ্ধ খাবার পানি। শৌচাগারের ব্যবস্থা না থাকায় বাড়ছে বিড়ম্বনা। এদের বেশির ভাগ মানুষই বন্যার পানির মধ্যে নৌকায় ও ঘরের ভেতর মাচান উঁচু করে অতি কষ্টে দিন-রাতযাপন করছেন। শুকনো খাবারের তীব্র সংকটে পড়েছে পানিতে আটকে থাকা পরিবারগুলো।

Advertisement

আর যারা ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু বাঁধ ও পাকা সড়কসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তারাও পড়েছেন নানা দুর্ভোগে। সেই সঙ্গে শত শত মানুষ একসঙ্গে বাঁধ ও পাকা সড়কের দুই ধারে ঝুঁপড়ি ঘর ও পলিথিনের তাঁবু টানিয়ে পরিবার-পরিজন, গবাদিপশু নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যায় সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, শাহজাদপুর, বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলার ৩৬টি ইউনিয়নের দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে ৩৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই পেয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার বন্যার্ত মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪টি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও ৫৫ হাজার ৭২৪টি পরিবার। এদের মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৯৫৯টি। ১ হাজার ৩৪৭টি বাড়িঘর সম্পূর্ণ এবং ২৭ হাজার ৬৩৩টি বাড়িঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ১৬৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে আরও ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) হাবিবুল হক বলেন, জেলার প্রায় ৭ হাজার ৫৪১ হেক্টর জমির পাট, রোপা আমন, আউশ ও সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে।

সিরাজগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ইতোমধ্যেই বন্যা দুর্গতদের জন্য ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোতে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে গেছে। স্ব-স্ব ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সেগুলো বিতরণ কার্যক্রম চলছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৩৫৩.৩ মেট্রিক টন চাল, ৫ লাখ টাকা ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মজুত রয়েছে ৩৪৬.৭ মেট্রিক টন চাল, ৩ লাখ টাকা। আরও ৫ লাখ টাকা, ৫শ মেট্রিক টন চাল ও চার হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ আনার প্রক্রিয়া চলছে। তবে কোনো বন্যার্ত মানুষ যেন বাদ না যায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Advertisement

ইউসুফ দেওয়ান রাজু/আরএআর/এমএস