অর্থনীতি

আরও কমেছে পেঁয়াজের ঝাঁজ, সবজি-কাঁচা মরিচের দাম চড়া

রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা কমেছে। এ নিয়ে টানা দুই সপ্তাহ পেঁয়াজের দাম কমলো। অবশ্য এর আগে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছিল।

Advertisement

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কমলেও দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে কাঁচা মরিচের। সেই সঙ্গে দাম বেড়েছে বেশিরভাগ সবজির। টানা বৃষ্টির কারণে কাঁচা মরিচ ও সবজির দাম বেড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া, খিলগাঁও অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

কারওয়ানবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের পাল্লা ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৩২ থেকে ৩৪ টাকা। গত সপ্তাহে বাজারটিতে পেঁয়াজের পাল্লা বিক্রি হয় ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজির দাম পড়ে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা। এ হিসাবে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪ টাকা কমেছে।

Advertisement

আরও পড়ুন>> ২৫ টাকার পেঁয়াজ ৫০ হয় কীভাবে?

খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, যেসব বাজারে গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছিল, তা এখন কমে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কিছুটা নিম্নমানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকা কেজি। তবে কিছু কিছু বাজারে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ কেজি ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ৫০ টাকা কেজি ছিল। অর্থাৎ সব বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা কমেছে।

পেঁয়াজের দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী মিলন বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছিল। দাম যেভাবে বেড়েছিল তাতে মনে হচ্ছিল পেঁয়াজের কেজি ৮০-৯০ টাকা হয়ে যাবে। তবে সেই শঙ্কা কাটিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের দাম আবার কমেছে। গত দুই সপ্তাহে কেজিতে প্রায় ১৫ টাকা কমেছে পেঁয়াজের দাম।

রামপুরার ব্যবসায়ী কামাল বলেন, সাধারণত কোনো পণ্যের দাম বাড়লে কমতে একটু সময় নেয়। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে এবার পেঁয়াজের দাম বেড়ে খুব দ্রুত কমে গেছে। দুই সপ্তাহ আগে যে পেঁয়াজ ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছি, তা এখন ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। অবশ্য এর আগে এ পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছি।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে কেনই বা বাড়লো, আবার কেনই বা কমলো তার কোনো যুক্তিসংগত কারণ আমরা দেখছি না। হঠাৎ দাম বাড়া-কমার কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কারণ বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনে আমাদের কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে।

এদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহের মতো সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে টমেটো, শসা ও গাজর। বাজার ভেদে পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে টমেটোর দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা।

আরও পড়ুন>> ‘৮০ টাকার আদা ১৬০ টাকা কেন?’

গাজার বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে গাজরের দাম কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে শসা আগের সপ্তাহের মতো ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

শসা, টমেটো ও গাজরের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া করলার দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। ঝিঙ্গা, ঢেঁড়স, উসি ও ধুন্দুলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। কাকরোল গত সপ্তাহের মতো ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

পটল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকা। দাম বাড়ার এ তালিকায় রয়েছে বেগুনও। গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বেগুনের দাম বেড়ে হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

অপরিবর্তিত থাকা সবজির মধ্যে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। বরবটির কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কচুর লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস।

বেশিরভাগ সবজির পাশাপাশি দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচের। কাঁচা মরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম পোয়ায় বেড়েছে ১০ টাকার বেশি।

সবজি ও কাঁচামরিচের দামের বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী জুয়েল বলেন, এখন টমেটো, শসা ও গাজরের মৌসুম না, তাই এগুলোর দাম বেশ চড়া। আর অন্য সবজি ও কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে বৃষ্টির কারণে। বৃষ্টি থামায় দু-একদিনের মধ্যে কিছু সবজির দাম কমে যাবে বলে আমাদের ধারণা।

এদিকে মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বয়লার মুরগির আগের সপ্তাহের মতো ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে লাল লেয়ার মুরগি। গরুর মাংস বাজার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি।

এমএএস/এমএসএইচ/এমকেএইচ