প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। তারপরও আমাদের শিল্পায়নের দিকে যেতে হবে। কারণ শিল্পায়ন না করলে আমরা উন্নয়ন করতে পারব না। তিনি বলেন, শিল্পায়নের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই যেন কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ‘বার্ষিক সম্মিলন ২০১৯’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব শেখ ইউসুফ হারুন। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকিস্তানি সিভিল সার্জনরা অনেকেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করতেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে তখন সিভিল সার্জনের অনেক সদস্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন এবং জীবন উৎসর্গ করেছেন।
Advertisement
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য একটাই, সেটা হলো এই বাংলাদেশকে নিয়ে। আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। এই বাংলাদেশকে আমরা এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই যাতে বিশ্বদরবারে বাঙালি মাথা উঁচু করে চলতে পারে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে সারাবিশ্বে বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা একটা সম্মান পেয়েছি। আমাদের বলা হতো বীরের জাতি। কিন্তু ৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে সে সম্মান হারিয়ে যায়। এরপর এই দেশ পরিচিত হয় খুনিদের দেশ, দুর্ভিক্ষের দেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ হিসেবে। এমনকি সর্বশেষ ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে এদেশ পরিচিত হয় বিশ্বদরবারে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ভিক্ষুকের জাতিকে কেউ সম্মান করে না। তাকে হত্যা করার পর সেই জাতিতে পরিণত করেছিল ভিক্ষুকের জাতিতে।
সিভিল প্রশাসনের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের কল্যাণে এই কর্মসূচি প্রদান করা এবং তা বাস্তবায়ন করার জন্য আপনারা কাজ করবেন। এটাই আপনাদের কাছে কামনা। অন্ন-বস্ত্র-চিকিৎসা-বাসস্থান-শিক্ষা সব মৌলিক অধিকার যেন মানুষের পূরণ হয়। এ লক্ষ্য নিয়ে আপনারা কাজ করবেন। আমাদের জনসংখ্যা বেশি এবং জমির স্বল্পতা রয়েছে। আমাদের প্রত্যেকটি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে কৃষিজমির যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেটা মাথায় রেখে। শিল্পায়নের দিকে আমরা এগিয়ে যাব পরিকল্পিতভাবে। তাহলে আমরা অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে পারব। আমরা চাই আমাদের দেশটা সুন্দরভাবে গড়ে উঠুক। কিন্তু প্রতিনিয়ত আমাদের প্রাকৃতিক বিপর্যয়র সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানই এ-রকম। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেন মানুষের জানমালের ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, যেকোনো দুর্যোগ আমরা মোকাবিলা করতে পারি সেটা আমরা বিশ্বে প্রমাণ করেছি। এটা আমাদের করতে হবে। আবার মাঝে মাঝে মনুষ্য সৃষ্ট কিছু দুর্যোগ আসে সেটিও আমরা সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছি। ভবিষ্যতে যেন এই ধরনের দুর্যোগ আর না আসে সে জন্য আপনারা যারা মাঠপ্রশাসনে যারা কাজ করেন তাদেরকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যেমন খাদ্য নিরাপত্তা দিতে পেরেছি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। এখন আমাদের দৃষ্টি হলো পুষ্টির দিকে। পুষ্টি নিরাপত্তা দিয়ে আমরা স্বাস্থ্যবান জাতি মেধাবী জাতি গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশ হবে জাতির পিতার ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। সে দিকে লক্ষ্য রেখে যখনই আমরা সরকার গঠন করেছি তখন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নিয়েছি। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
Advertisement
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা আরও দূরে যেতে চাই। ২০২১ সাল পর্যন্ত কর্মসূচি প্রণয়ন করেছি। আমরা ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০ হাতে নিয়ে এগিয়ে যাব। বাংলাদেশকে আরও উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ার জন্য। ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং ২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করব। ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হবে সবচেয়ে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। আমরা ইতোমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধি অর্জনে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছি। অবশ্য আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে বাংলাদেশ প্রতিটা ক্ষেত্রেই যেন প্রথম স্থান অধিকার করে। সেভাবে আমরা এগিয়ে যাব। ২০৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা শতবর্ষ পালন করব। তখন আমাদের মতো বৃদ্ধরা হয়তো থাকব না কিন্তু নতুন প্রজন্ম যারা আসবে তারা যেন একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ পায়, সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা পরিকল্পনা দিয়েছি।
এফএইচএস/বিএ