আসামে বিদেশিদের চিহ্নিত করতে জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকার (এনআরসি) কাজ হচ্ছে আসাম চুক্তি অনুসারে। এবার পুরো দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী থেকে মুক্ত করার ঘোষণা দিলেন অমিত শাহ। ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি হিসেবে নয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেই তিনি রাজ্যসভায় এ ঘোষণা দেন।
Advertisement
সুপ্রিম কোর্টের তদারকিতে আসামে এনআরসি চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে তা শেষ করতে হবে। কিন্তু কাজ যে ঠিকভাবে এগোচ্ছে না, প্রকৃত নাগরিকেরা বাদ পড়ছেন, কার্যত তা স্বীকার করে নিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। রাজ্যসভায় তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টকে সময় বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছে। এর পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় ও আসাম সরকার উভয়েই শীর্ষ আদালতে আর্জি রেখেছে, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ২০ শতাংশ ও বাকি জেলাগুলোতে ১০ শতাংশ এনআরসি তথ্য যাচাই করতে দেয়া হোক।
বৃহস্পতিবার পুরো দেশে বিদেশি সন্ধান ও বিতাড়নের ঘোষণা দেন অমিত শাহ। রাজ্যসভায় সমাজবাদী পার্টির সদস্য জাভেদ আলি খান জানতে চেয়েছিলেন, আসামের পরে দেশের বাকি রাজ্যগুলোতেও কি জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা তৈরি হবে? জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা খুবই ভালো একটা প্রশ্ন। আসামের এনআরসি আসাম চুক্তির অঙ্গ। তবে বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারেও এ কথা রয়েছে। এবং তার ভিত্তিতেই এই সরকার নির্বাচিত হয়ে এসেছে। দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি থেকে অবৈধভাবে বসবাসকারী অনুপ্রবেশকারীদের খুঁজে বের করবে সরকার। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে তাদের ফেরত পাঠানো হবে।’
আরও পড়ুন : নোবেলজয়ী নাদিয়াকে ট্রাম্পের প্রশ্ন, কি জন্য পুরস্কার পেয়েছিলেন?
Advertisement
আনন্দবাজার বলছে, শুধুমাত্র একটি মাত্র রাজ্যে এনআরসি তৈরি করতে গিয়েই হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। পুরো ভারতে সেই প্রক্রিয়া চালু করতে গেলে কী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে তা নিয়ে আশঙ্কা বাড়িয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণা।
আসামে প্রথম চূড়ান্ত খসড়ায় ৪০ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়েছে। নাম তোলার জন্য ফের আবেদন করেছেন ৩৬ লাখ মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সেনা-আধাসেনা বাহিনীতে কাজ করার পরও বাদ পড়েছে অনেকের নাম। সন্দেহজনক ভোটার (ডি-ভোটার) তকমা দিয়ে বন্দি শিবিরে পাঠানো হয়েছে অনেককে।
একই পরিবারে কারও নাম থাকছে, কেউ বাদ পড়ছেন। এর জেরে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। তালিকায় নাম তোলার আবেদন নিয়ে শুনানি হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। রাজ্যসভায় এই প্রসঙ্গ উঠেছিল।
আরও পড়ুন : ডুবেছে বন, প্রাণ বাঁচাতে ঘরে ঢুকে বিছানা দখলে নিলেন বাঘ মামা!
Advertisement
এক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এনআরসির ভুলভ্রান্তি দূর করার জন্য কেন্দ্রের কাছে অনেক আবেদন এসেছে। ২৫ লাখ মানুষের সই করা আবেদনপত্র পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি। কেন্দ্রের কাছেও তা জমা পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার এনআরসি তৈরির সময়সীমা বাড়ানোর অনুরোধ রেখেছে শীর্ষ আদালতের কাছে।’
ভারতীয় এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি, ‘কোনো প্রকৃত নাগরিক বাদ পড়বেন না। কিছু দেরি হতে পারে, কিন্তু ত্রুটিমুক্ত এনআরসিই তৈরি হবে।’
এসআইএস/পিআর