আইন-আদালত

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস অব্যাহত রাখতে হবে : হাইকোর্ট

আদালতের নির্দেশে বাজার থেকে প্রায় সাড়ে ৩৬ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ জব্দ ও ধ্বংস করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রশংসা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ জব্দ ও ধ্বংস এবং অভিযান পরিচালনায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ‘অ্যাপ্রিশিয়েট’ করেছেন হাইকোর্ট।

Advertisement

আদালত বলেন, এ কাজ প্রশংসনীয়, তা চলমান রাখতে হবে। ওষুধের বিষয়ে জনসাধারণ, ব্যবসায়ী ও উৎপাদনকারী সবাইকে সচেতন হতে হবে। এছাড়া ওষুধের পাতায় মেয়াদ, উৎপাদনের তারিখ ও মূল্য স্পষ্ট এবং বড় হরফে বাংলা ও ইংরেজিতে লেখার ব্যবস্থা করতে হবে।

আদেশ অনুযায়ী ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দাখিলের পর বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

আদালতে আজ রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। ভোক্তা অধিকারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুজ্জামান কচি।

Advertisement

সারাদেশে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ ও বিক্রি বন্ধ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার/ধ্বংস করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য গত ১৮ জুন আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ।

নির্দেশনা অনুযায়ী দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, হাইকোর্টের নির্দেশে অধিদফতর বিভিন্ন কোম্পানিকে চিঠি দেয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংগ্রহ করে তা ধ্বংস করে কোম্পানিগুলো। ধ্বংস করা ওষুধের দাম ৩৬ কোটি ৪১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৯৭ টাকা। চার হাজার ৫৮৭টি ফার্মেসি পরিদর্শন করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১৫২টি মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি এক কোটি চার লাখ ৮৯ হাজার ২শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। সিলগালা হয়েছে ৫টি ফার্মেসি।

শুনানিতে আদালতে কামরুজ্জামান কচি বলেন, আইন অনুসারে এটা চলমান প্রক্রিয়া। সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে।

সারাদেশের পাশাপাশি মিটফোর্ডে অভিযানের বিষয়ে আদালতের প্রশ্নে কামরুজ্জামান কচি বলেন, ১৭টি ফার্মেসিতে অভিযান করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮টিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া গেছে।

Advertisement

এক পর্যায়ে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এখন প্রযুক্তির যুগ। সবখানে পত্রিকা না পৌঁছলেও টিভি আছে। দুর্গম কোনো চরেও টিভি আছে। তাই ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিষয়ে সচেতনতার জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া যায় কি না দেখেন। যদিও এখানে অর্থনৈতিক বিষয় আছে। তারপরও সচেতন করেন। মাঠে যে রকম অ্যাকশন নিচ্ছেন তেমনি প্রচার প্রচারণাতেও করতে হবে।

আদালত আরও বলেন, ওষুধ উৎপাদন, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ও মূল্য বড় করে লেখা থাকতে হবে। যেন ভিজিবল (দৃশ্যমান) হয়। অনেকে আবার ইংরেজি বুঝে না। কিন্তু আমাদের ওষুধ রফতানি হয়। তাই বাংলা ও ইংরেজিতে এগুলো থাকতে হবে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে বলেন, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক অভিযান চালানো হয়েছে। পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। তখন আদালত বলেন, ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হলে তো বিষ হয়ে যায়। তাই জনসচেতনতা দরকার।

এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। অভিযান চলবে। যথেষ্ট কাজ করার চেষ্টা করেছি। বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য আপনাদের নির্দেশে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তখন আদালত বলেন, যথাযথ স্টেপ (পদক্ষেপ) নেওয়ায় অ্যাপ্রিশিয়েট করছি। এ অভিযান প্রশংসনীয়। এখানে যারা ব্যবসা করছেন তাদেরও সচেতন হওয়া দরকার। যারা উৎপাদন করছেন তাদেরও। কারণ ওষুধ রফতানি হয়। এখানে সেইফ থাকলে বিদেশে সুনাম হবে।

এ সময় রিট আবেদনকারীর আইনজীবী বলেন, আইন অনুসারে ওষুধের মেয়াদ ভিজিবল (দৃশ্যমান) হতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেননি। এ সময় তিনি ওরস্যালাইন, ইনজেকশন, হাপানীসহ কয়েকটি ওষুধ আদালতে উপস্থাপন করেন।

এসব ওষুধ দেখে আদালত বলেন, মেয়াদ আছে। তবে, সেটা বুঝার উপায় নেই। অনেক মানুষ এটা পড়তে পারবে না। এগুলো ভিজিবল হওয়ার দরকার।

বিষয়টি দেখার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কমিটিকে অবহিত করতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে নির্দেশ দিয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ২২ আগস্ট দিন ঠিক করেন আদালত।

গত ১০ মে এক অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ঢাকা শহরের ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয়। এ বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ১৭ জুন রিট করেন জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে নির্বাহী পরিচালক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন। এর পর রুল জারিসহ নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।

এফএইচ/আরএস/এমকেএইচ