ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অবৈধভাবে ছাত্রী ভর্তির দায়ে ফেঁসে যাচ্ছেন চার শিক্ষক। অবৈধ ভর্তির বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় এসব শিক্ষককে শোকজ করা হবে। তাতে সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়া গেলে তাদের এমপিও (সরকারের অনুদান) বাতিল করা হতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
Advertisement
সূত্র জানায়, চলতি বছর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পাঁচ শতাধিক অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ ওঠে। নানা কৌশলে অতিরিক্ত আসন তৈরি করে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এসব শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, পূর্ব ঘোষণা ছাড়া ভিকারুননিসায় কোনো আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না। অথচ এক শাখায় শূন্য আসন দেখিয়ে অন্য শাখায় শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবেদনও করেনি এমন বেশ কয়েকজন রয়েছে। এ ছাড়া লটারিতে ব্যর্থ বা লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীদেরও ভর্তি করা হয়েছে। এসব ভর্তি ‘অবৈধ’ বিবেচিত হয়।
ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অবৈধ ভর্তির বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায়।
Advertisement
তদন্ত প্রতিবেদনে অবৈধ ভর্তির সঙ্গে জড়িত পাঁচজন শিক্ষকের নাম উঠে এসেছে। এরা হচ্ছেন শিক্ষক প্রতিনিধি সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসিনা বেগম, কেকা রায় চৌধুরী, শিক্ষক প্রতিনিধি মুসতারি সুলতানা ও শিক্ষক প্রতিনিধি মাহাবুবুর রহমান।
অভিযোগ রয়েছে, বিধিবহির্ভূত এসব ভর্তির নেপথ্যে প্রতিষ্ঠানের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসিনা বেগম এবং গভর্নিং বডির কয়েকজন সদস্য মূল ভূমিকা পালন করেন। ভর্তির ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেনের অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ।
অভিযোগকারীরা বলেন, নীতিমালাবহির্ভূত ভর্তির বিষয়টি বৈধ করতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের তদবিরের সুপারিশ রক্ষা করা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় ‘মাস্তান’ এমনকি শিক্ষা বিভাগের কোনো কোনো ব্যক্তিও অর্থের ভাগ পেয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অতিরিক্ত ভর্তি করা হয়েছে ভিকারুননিসায়। তবে তাদের মধ্যে ৩৬৮ জনের ভর্তির তথ্য জানা গেছে। সে অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ভর্তি করা হয়েছে প্রথম শ্রেণিতে, ১৬৫ জন। এ ছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৫৬ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৯৫, চতুর্থ শ্রেণিতে ৩৯, পঞ্চম শ্রেণিতে ৩১, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১১, সপ্তম শ্রেণিতে ২৬, অষ্টমে ২ জন, নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে ৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।
Advertisement
এসব শিক্ষার্থীর ভর্তির ক্ষেত্রে নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন অভিযুক্ত শিক্ষকরা। উদাহরণস্বরূপ আজিমপুর শাখায় দ্বিতীয় থেকে তার উপরের শ্রেণিতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী না পাওয়ায় ৮৯টি সিট খালি ছিল। পরে এসব খালি আসনে অবৈধভাবে ছাত্রী ভর্তি করানো হয়। অবৈধ ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশকিছু রয়েছে যারা ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদনই করেনি। কিছু রয়েছে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি বিদ্যালয়) জাবেদ আহমেদ বৃহস্পতিবার জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অবৈধ ভর্তির প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত শিক্ষকদের প্রথমে শোকজ নোটিশ দেয়া হবে। সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে তাদের এমপিও বাতিল করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের অপরাধের শাস্তি দিতে গিয়ে যাতে শিক্ষার্থীদের ওপর প্রভাব না পরে সেই বিষয়টি মাথায় রেখে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত শিক্ষকদের শোকজ নোটিশ দেয়ার কথা রয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব।
উল্লেখ্য, ঢাকায় ভিকারুননিসার মোট পাঁচটি শাখায় ১৩টি শিফটে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। ১৩টি শিফটে প্রায় ২৪ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।
এমএইচএম/এসআর/এমকেএইচ