প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা মিঠাপানি ছাড়াও বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। এখন এ সমুদ্র সম্পদ আমাদের কাজে লাগাতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা ব্লু ইকোনমি নীতিমালা করেছি। সমুদ্রে প্রায় ৪৩০ প্রকার সম্পদ রয়েছে। গভীর সাগরে টোনা ফিশসহ মূল্যবান সম্পদ রয়েছে। সমুদ্র থেকে এসব সম্পদ আহরণ করে আমরা দেশকে আরও সম্পদশালী করতে পারব।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বেলা সোয়া ১১টায় গণভবনের লেকে পোনা অবমুক্ত করে এ সপ্তাহের উদ্বোধন করা হয়। ‘মৎস্য চাষে গড়বো দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে এবার জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০১৯ পালন করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই মৎস্য চাষের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রইসুল আলম মণ্ডল। মৎস্য চাষ, রেণু উৎপাদনসহ মৎস্য-সংক্রান্ত বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য আট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে স্বর্ণপদক এবং ৯ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে রৌপ্যপদক প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষ একসময় দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত ছিল। অনেক সময় দু’বেলা খেতে পারত না। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ও স্বচ্ছতার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এ দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। পরাধীনতার হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করেছিলেন। আমরা বাঙালি, আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। কবির ভাষায় বলতে চাই, ‘মৎস্য ধরিব খাইব সুখে’। বাংলাদেশে যাতে আরও বেশি মাছ উৎপাদন হয় সেজন্য জাতির পিতা আমাদের অনুপ্রাণিত করে গেছেন।
Advertisement
তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে মৎস্য উৎপাদন করতে পারলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা যাবে। স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হতে পারত। আমাদের দুর্ভাগ্য, যে স্বপ্ন যে আদর্শ এবং যে চেতনা নিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছিলেন তা তিনি করে যেতে পারেননি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এরপর একুশ বছর বাংলাদেশের কোনো উন্নয়ন হয়নি। বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে গেছে। শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। ২০০৯ সালের পর গত ১০ বছরে দারিদ্র্যের হার ৪০ থেকে কমিয়ে ২১ ভাগে নামিয়ে এনেছি। এর আগে একজন দিনমজুর সারাদিনে যে পয়সা রোজগার করত তাতে তার চাল কিনতে ফুরিয়ে যেত। এখন সে অবস্থা নেই। চাল কেনার সাথে সাথে সে মাছ ক্রয় করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে যে মাছ রফতানি করি সে রফতানির ক্ষেত্রে মানটা ধরে রাখা প্রয়োজন। আমাদের ভালো কোনো ল্যাবরেটরি ছিল না। ইতোমধ্যে আমরা কয়েকটি ল্যাবরেটরি করেছি। ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও খুলনায় ল্যাবরেটরিগুলো করা হয়েছে। মান ঠিক রাখতে না পারলে মাছ রফতানি কিন্তু বন্ধ হয়ে যাবে। বিএনপির সময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই সময় মাছ রফতানিতে বিশেষ করে চিংড়ি মাছ রফতানিতে কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছিল। এ জন্য চিংড়ি রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে আমরা দেনদরবার করে আবার মাছ রফতানি শুরু করেছি। যারা চিংড়ি উৎপাদন করে তাদের লোন দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে সমুদ্রসীমা আইন করেন। এরপর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা এ আইনের দিকে ফিরেও তাকায়নি। কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ’৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সমুদ্রসীমা অধিকার কীভাবে অর্জন করা যায় তা নিয়ে আমরা ভাবতে থাকি। অবশ্য এর আগে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে জাতির পিতা একটি সমাধান করে যান। আমরা ভারতের সাথে সে সমস্যার সমাধান করেছি। ফলে আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করি। এখন সমুদ্র সম্পদ আমাদের কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ব্লু ইকোনমি নীতিমালা করেছি। সমুদ্র সম্পদ আহরণে মাছ ছাড়াও সমুদ্রে আরও যে যে সম্পদ আছে সেগুলো কীভাবে কাজে লাগাতে পারি সেদিকে ইতোমধ্যে দৃষ্টি দিয়েছি। গবেষণার জন্য একটি জাহাজ কিনেছি এবং আরেকটি জাহাজ ভাড়া করার চিন্তাভাবনা করছি। যে জাহাজে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান করা যাবে। এছাড়া গভীর সাগরে মাছ আহরণের জন্য আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তিনি আরও বলেন, গভীর সাগরে টোনা ফিশসহ মূল্যবান সম্পদ রয়েছে। গভীর সমুদ্রে প্রায় ৪৩০ প্রকার সম্পদ রয়েছে। এসব সম্পদ আহরণ করে আমরা দেশকে আরও সম্পদশালী করতে পারব। গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের জন্য বেশ কয়েকজন লাইসেন্স চেয়েছে। সেগুলো আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি, কীভাবে তাদের অনুমতি দেওয়া যায়। সমুদ্রে শুধু মাছ নয়, মাছের সাথে অন্যান্য যেসব প্রাণী পাওয়া যায় যেমন- কাঁকড়া, শামুক, এগুলো খুব দামি।
কোরবানির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে কোরবানির ঈদ। দেখা যায় যত্রতত্র কোরবানি দেওয়া হয়। তাতে আমরা অনেক মূল্যবান সম্পদ হারাই। কোরবানি দেওয়ার জন্য যেন নির্দিষ্ট একটা জায়গা থাকে। কোরবানি পশুর চামড়া যখন সংগ্রহ করা হবে তা যেন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হয়। আগামী কোরবানিতে নির্দিষ্ট জায়গায় যার যার পশু নিয়ে যাবেন, কোরবানি করবেন এবং মাংস নিয়ে যাবেন। আর যে সব বর্জ্য হবে সেগুলো এক জায়গায় যেন সংরক্ষণ করা হয়। তিনি বলেন, বনাঞ্চল থেকে শুরু করে পানিসম্পদ, সেটা রক্ষা করতে হবে। গ্রামের বাড়িতে অনেকেরই অনেক জলা ডোবা পাগার গর্ত পড়ে থাকে। এগুলো যেন পড়ে না থাকে। সেগুলোর যেন যথাযথ ব্যবহার হয়। এ জন্য আমি একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প করেছি। নিজেরা মাছ চাষ করে যদি পুকুর থেকে তাজা মাছ তুলে খাওয়া যায়, তার স্বাদই আলাদা। তাতে কিছু আর্থিক সচ্ছলতাও আসে।
Advertisement
শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশের মানুষ সুন্দরভাবে বসবাস করবে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। গত ১০ বছরে দেশে বহু পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশ একসময় বিশ্বের উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং ২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। এর মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
এফএইচএস/আরএস/এমকেএইচ