এক পরিচালককে ঋণ প্রদানের অনুমোদনের ক্ষেত্রে অনিয়ম করেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ফার্স্ট ফাইন্যান্স। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে।
Advertisement
সমস্যার মধ্যে পতিত ফার্স্ট ফাইন্যান্স দীর্ঘদিন ধরেই শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারছে না। ফলে পুঁজিবাজারে কোম্পানিটির ঠিকানা হয়েছে পঁচা বা ‘জেড’ গ্রুপের তলিকায়। এ পরিস্থিতিতে পরিচালকের ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অনিয়মের তথ্য দিলেন নিরীক্ষক।
নিরীক্ষক জানিয়েছেন, ফার্স্ট ফাইন্যান্স কর্তৃপক্ষ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন ছাড়াই এক পরিচালককে ৭০ লাখ টাকা ঋণ প্রদানের অনুমোদন দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে আগামী বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেয়া হবে বলে নিরীক্ষককে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
বছরের পর বছর ধরে লোকসানের মধ্যে নিমজ্জিত থাকা এবং ২০১৬ ও ২০১৭ সালের বার্ষিক সাধারণ সভা করতে না পারা এই কোম্পানিটির সঞ্চিতি ঘাটতি নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে নিরীক্ষক।
Advertisement
কোম্পানিটির ২০১৮ সালের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় নিরীক্ষক জানিয়েছেন, ফার্স্ট ফাইন্যান্সের প্রদত্ত লিজ, ঋণ ও অগ্রিমের বিপরীতে সঞ্চিতি ঘাটতি রয়েছে ৪৬ কোটি টাকা। যা সমন্বয়ের জন্য কোম্পানিটিকে ২০২০ সাল থেকে পরবর্তী ৫ বছর সময় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নিরীক্ষক আরও জানিয়েছেন, কোম্পানির এফআইসিএল স্টেটমেন্ট ও জেনারেল লেজারে লিজ, ঋণ ও অগ্রিমের তথ্যে ২০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার পার্থক্য রয়েছে। যা সমন্বয়ের জন্য ফার্স্ট ফাইন্যান্স কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৩ বছর সময় পেয়েছেন। এই সময় শুরু হয়েছে চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে।
এদিকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ক্যাশ রিজার্ভ রিকোয়ারমেন্ট (সিআরআর) ঘাটতির জন্য ফার্স্ট ফাইন্যান্স বাংলাদেশ ব্যাংককে ২০ লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছে বলে নিরীক্ষকের মতামতে উঠে এসেছে।
‘এরপরে একই বছরের জুলাই মাসে সিআরআর ঘাটতির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক পুনরায় কোম্পানিটিকে ৬২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা জরিমানার শাস্তি দেয়। তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওই জরিমানা মওকুফের জন্য আবেদন করেছে এবং শাস্তির বিপরীতে ১০ লাখ টাকা সঞ্চিতি গঠন করেছে’- বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
Advertisement
লোকসানের খাতায় নাম লিখিয়ে ২০১৪ সালের পর থেকে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ না দেয়া আর্থিক খাতের এ কোম্পানিটি ২০১৮ সালেও শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
লভ্যাংশের বিষয়ে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের নেয়া সিদ্ধান্ত শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর। আর রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ জুলাই।
এদিকে লোকসানের মধ্যে নিমজ্জিত আর্থিক খাতের এই কোম্পানিটিতে সম্প্রতি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৪১ দশমিক ৪৫ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৪০ দশমিক ২২ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ১৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ শেয়ার।
এমএএস/এমআরএম/আরআইপি