কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি স্থিতিশীল হলেও তীব্র ভাঙনের ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বুধবার সকাল ৮টায় রৌমারীর বন্দবের এলাকায় এলজিইডি’র সড়ক ভেঙে যাওয়ায় গোটা উপজেলা এখন পানিবন্দি। এর আগে মঙ্গলবার রাতে রৌমারীতে দাঁতভাঙা এলাকার হাজিরহাট ও ধনারচরে এলজিইডির সড়ক ভেঙে ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এর ফলে নতুন করে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
Advertisement
এমন পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও বেসরকারি পর্যায়ের সংগঠনগুলো এগিয়ে না আসায় বানভাসীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে বাড়িতে আটকে পড়া মানুষগুলো জ্বালানি সংকটের কারণে রান্না করতে পারছে না। উচুঁ স্থানে গবাদিপশু রাখলেও গো-খাদ্যের অভাবে গৃহস্থরা অসহায় হয়ে পড়েছে।
এদিকে বুধবার দুপুরে উলিপুরের গুণাইগাছ ইউনিয়নের কাজির চক এলাকার সুমন মিয়ার দেড় বছরের শিশু ফুয়াদ পানিতে পড়ে মারা গেছে। এনিয়ে গত আটদিনে জেলায় পানিতে ডুবে মারা গেল ১৩ জন।
জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, বন্যার ফলে ৫৬টি ইউনিয়নের ৪৯৮টি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে ১ লাখ ৫২ হাজার ৪০০ পরিবারের ৬ লাখ ৯ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেড় লাখ ঘরবাড়ি। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও প্রায় ৫ হাজার মানুষ। বন্যায় ৩২ কিলোমিটার বাঁধ, ৭২ কিলোমিটার কাঁচা ও ১৬ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বন্যায় ৪১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আংশিক এবং ২টি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে ১৫ হাজার ১৬০ হেক্টর। জেলার ২১টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৪ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
Advertisement
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. রুমানুজ্জামান জানান, বুধবার বিকেল পর্যন্ত ব্রহ্মপূত্র নদের পানি ১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ১৩২ সেন্টিমিটার এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১০৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে ধরলা নদীর পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। যা বিপৎসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
জেলা জুড়ে বন্যা শুরু হলেও বেসরকারি সংগঠনগুলোর কোনো কার্যক্রম চালাতে দেয়া যায়নি। বুধবার দুপুরে কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ চিলমারীতে বন্যার্ত ৫ হাজার পরিবারকে সহায়তা প্রদান করেন। কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি মো. জাফর আলী পাঁচগাছী ও ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নে ৭০০ পরিবারের খাবারের প্যাকেট সরবরাহ করেন। এছাড়াও পৌর মেয়র আব্দুল জলিল পৌর এলাকার বন্যা দুর্গতদের মাঝে বিশ বস্তা চাল ও ৬০০ কেজি আলু বিতরণ করেন।
সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম জানান, বন্যার্তদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে কুড়িগ্রাম সদর ও চিলমারীতে দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে। দুদিনে ৬ হাজার বন্যার্তকে জেরিকেনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৮৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করছে। স্বাস্থ্য বিভাগে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ, স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মুজত আছে।
জেলা প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত ৫ মেট্রিক টন জিআর চাল, ৯ লাখ টাকা, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৬ হাজার ৫২৫টি পরিবারে ১৫ কেজি করে ৬ হাজার ৪২৮ মেট্রিক টন ভিজিএফের বরাদ্দ উপজেলাগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে।
Advertisement
কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বন্যার্ত সকল পরিবারে সহায়তা দেয়া হবে। কেউ যাতে বাদ না যায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নাজমুল হোসাইন/আরএআর/এমএস