টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সুনামঞ্জের পৌর শহরের অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় জেলায় এ লাখ ২০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় থাকলেও সুনামগঞ্জের পৌর শহরের বড়পাড়া এলাকায় একটি আশ্রয় কেন্দ্রে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ১৮টি পরিবার। পাচ্ছেন না কোনো রকমের সহযোগিতা, খাবার সংকটে রয়েছেন তারা। তাছাড়া বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে পানিবাহিত রোগে ভুগছেন তারা। অন্যদিকে মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দাড়িয়েছে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা।
Advertisement
সরেজমিনে দেখা গেছে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পশ্চিম হাজিপাড়া ও বড়পাড়া বস্তি এলাকায় সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পানি প্রবেশ করায় অনেকের ঘরেই পানি উঠেছে। এতে করে বড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন অনেক মানুষ। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে শুকনা খাবার দেয়া ও প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে তিন বেলা খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানোর কথা হলেও এখানে ভিন্ন চিত্র। কোনো রকমের সহযোগিতাতো পান নাই তার ওপর খিচুড়িও রান্না করে দেয়া হচ্ছে না। নিজেই চুলা বানিয়ে যা পাচ্ছেন তাই রান্না করে খাচ্ছেন। তাছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রে অনেক শিশু ও বৃদ্ধ রয়েছেন যারা পানিবাহিত রোগে ভুগছেন। এখনো আসেনি কোনো মেডিকেল টিম।
আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া আব্দুর রউফ বলেন, আমরা আটদিন হল আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি। এখন পর্যন্ত একটা মানুষও আমাদের আইসা দেখে যায়নি। না কোনো মেয়র না কাউন্সিলর। আমরা খুব কষ্টে জীবনযাপন কররাম। হাজেরা বেগম বলেন, এখন পর্যন্ত্র কেউ ত্রাণ নিয়ে আসে নাই। ত্রাণতো দূরের কথা আমরা যে এই ৭-৮ দিন ধরে এই একটা স্কুলে আছি কেউ দেখেও গেলো না। ঠিকমতো খাবার দিতে পারি না বাচ্চাটারে। বাচ্চাটাও আজকে অসুস্থ।
৭০ বছর বয়সী নুরুল ইসলাম বলেন, আশ্রয় কেন্দ্রে আছি খাওন নাই। কেউ যদি খাবার নিয়া আইতো তাইলে কষ্ট করা লাগতো না। এখন অসুস্থ হইয়া রইছি শরীরেও শক্তি নাই। পৌর এলাকার মধ্যে আমরা বড় অসহায়।
Advertisement
কালাম মিয়া বলেন, বাজারে যাইতে পারি না কিছু যে কিনে আনমু তার জন্য টাকাও নাই। আমরা ভাই রোজ কামলা। দৈনিক কাজ করলে টাকা পাই। পানি আসার পর থাইক্কা কাজও নাই টাকাও নাই। এই আশেপাশে যা পাই লতাপাতা তাই দিয়া রান্না করে খাই।
আছপিয়া বেগম বলেন, ঘরের দুইটা মুরগি আছিল। বন্যায় ঘরে হাটু পানি। আশ্রয়কেন্দ্রে আইছলাম। মুরগিরে খাওন দিতে পারি না দেইক্কা খাইয়া নিছি। এখন মুরগিও নাই খাওনও নাই। মেয়র, কাউন্সিলর বা ত্রাণ দেয়ার কোনো লোকই আসে না।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, আমাকে প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নাকি ৪ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু আমি এ ব্যপারে কিছু জানি না। কে চাল পেলো বা কার মাধ্যমে চাল দেয়া হল তার কোনো তথ্যই আমাকে জানানো হয়নি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. হারুন অর রশীদ বলেন, নিয়মনুযায়ী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানোর কথা। আমি এখনই এ ব্যপারে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
Advertisement
মোসাইদ রাহাত/আরএআর/এমএস