আইন-আদালত

যার সন্তান মারা গেছে সেই বোঝে কষ্ট, ডেঙ্গু প্রসঙ্গে হাইকোর্ট

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি কর্পোরেশনে ডেঙ্গু মশা নিধনে ওষুধ কেন কাজ করছে না এবং যে ওষুধ আমদানি করা হচ্ছে তা ভেজাল কি না, আর ভেজাল হলে কারা জড়িত তা তদন্ত করে খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

Advertisement

সিটি কর্পোরেশনকে বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে ২০ আগস্টের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া মশা নিধনে কার্যকর ওষুধ আনা এবং তা ছিটানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এ কাজে প্রয়োজনে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সহায়তা নিতে হবে।

মশা নির্মূলের জন্য যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হয় সেগুলো কাজ করছে কি না, ট্রেড মার্ক এবং এসব ওষুধ কত মাত্রায় ব্যবহার করা প্রয়োজন শুনানিতে সিটি কর্পোরেশেনের আইনজীবীর কাছে জানতে চান আদালত। সিটি কর্পোরেশনের আইনজীবী নুরুন্নাহার নূপুর জানান, সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অবস্থিত বাড়ি, রাস্তা ও মাছে সপ্তাহে প্রতিদিন মশার ওষুধ ছিটানো হয়।

এ সময় আদালত বলেন, ‘আমরা অনেক আগে আদেশ দিয়েছি, আগে থেকে ব্যবস্থা নিতে, কথা বললেই তো বলা হয় যে, আমরা বড় বড় কথা বলি। একজন মেয়র কীভাবে বলেন, কিছুই হয়নি। ডেঙ্গু মহামারি হতে তো আর বাকি নেই।’

Advertisement

আদালত আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে ২১-২২ জন মানুষ মারা গেছে আর মেয়র বলছেন কোনো সমস্যা নাই। (ডেঙ্গুতে) মানুষ অসুস্থ আর মেয়র বলেছেন, কিছুই হয়নি। যার সন্তান মারা গেছে সে বোঝে, কিছু হয়নি বললেই হলো?’

জনস্বার্থে দায়ের করা রাজধানীর বায়ুদূষণ রোধের রিটে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ-সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানিতে আজ বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব কথা বলার পর আদেশ দেন।

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট ড. নুরুন্নাহার নূপুর।

শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, ‘মশা মারতে যে ওষুধ কেনা হয়েছে সেই ওষুধে তো কাজ হয় না। তাহলে কী ছিটাচ্ছেন, ওষুধ না অন্য কিছু?’ এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল দাঁড়িয়ে মশার ওষুধ ছিটানোর বিষয়ে কথা বলেন। অন্যদিকে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আদালতকে বলেন, ‘একজন আইনজীবীর স্ত্রী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করেছেন। এভাবে যদি মানুষ ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করতে থাকে তাহলে আপনারা কী করবেন?’

Advertisement

আদালত বলেন, ‘তারা তো বলল, ওষুধ ছিটানো হচ্ছে কাজ হচ্ছে না।’ এ সময় মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘সরকার চাইলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মশা নির্মূলের ব্যবস্থা করতে পারে।’ আদালত বলেন, ‘তাহলে তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে তো পার্টি করতে হবে।’ তখন মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘যতদিনের মধ্যে ওষুধ আনতে হবে টেন্ডার দেবে, ততদিনে তো মশার উপদ্রপ আরও বাড়বে। সরকারের প্রধান (প্রধানমন্ত্রী) জরুরি ভিত্তিতে (ইমার্জেন্সি) ব্যবস্থা নিতে পারেন।’

তখন আদালত বলেন, ‘ওষুধ যদি কাজ না করে তাহলে তো অকার্যকর ওষুধ কেনা হয়েছে। ওখানে দুর্নীতি হয়েছে কি না তদন্ত করেছেন? দুর্নীতি হয়ে থাকলে কারা কারা দুর্নীতির জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।’

‘মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য সিটি কর্পোরেশনকে আমরা পদক্ষেপ নিতে বলেছিলাম। কিন্তু পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ২১-২২ জন মানুষ মারা গেল। মেয়র বলেছেন, কিছু হয়নি। একজন মেয়র কী করে বলেন কিছু হয়নি। যার সন্তান মারা গেছে সেই বোঝে কষ্ট কী।’

শুনানির একপর্যায়ে সিটি কর্পোরেশনের আইনজীবী নূরুন নাহার নূপুর আদালতকে বলেন, ‘পত্রিকায় ডেঙ্গু নিয়ে প্রকাশিত খবরগুলো পড়লে খারাপ লাগে।’ তখন হাইকোর্ট বলেন, ‘এসব খবরে দুর্নীতিবাজদের খারাপ লাগে না। কারণ, তারা বাড়িঘর দেশের বাইরে করে। তাদের ছেলেমেয়েরা বাইরে লেখাপড়া করে।’ এ সময় হাইকোর্ট আরও বলেন, ‘সবারই মায়া হয়, দুর্নীতিবাজদের মায়া হয় না। কারণ তাদের সন্তানরা থাকেন বিদেশে।’

রাজধানীর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ সম্পর্কে দুই সিটি কর্পোরেশনের দেওয়া প্রতিবেদনের শুনানিতে হাইকোর্ট এসব কথা বলার পাশাপাশি আদেশ দেন।

আদালত তার আদেশে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা নিধনে অকার্যকর ওষুধ আমদানি, সরবরাহ ও বিপণনে জড়িতদের বিষয়ে তদন্ত করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছেন। এবং প্রয়োজনে সরকারের সহযোগিতা নিয়ে দ্রুত কার্যকর ওষুধ আমদানি করে তা ছিটানোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এফএইচ/এসআর/এমএস