জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য হয়েছে। একটিতে তার ছোট ভাই থাকবেন বলে সাংগঠনিক নির্দেশ দিয়েছিলেন এরশাদ। সে বিষয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই বলে মনে করেন দলটির কোনো কোনো নেতা। তবে কয়েকজনের মতে, দলের প্রেসিডিয়াম সভায় অনুমোদন নিলে বিষয়টি বিতর্কমুক্ত থাকে।
Advertisement
আরও পড়ুন >> এরশাদবিহীন জাতীয় পার্টিতে ‘অনৈক্যের শঙ্কা’
জাতীয় পার্টির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যদি কম্প্রোমাইজ (আপস) ওয়েতে চলে তবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদে জি এম কাদের থাকবেন আর বিরোধীদলীয় নেতা হবেন বেগম রওশন এরশাদ। কম্প্রোমাইজ না থাকলে কী হবে সেটা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তবে এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সভা ও সংসদীয় দলের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে মত ওই নেতাদের।
জাতীয় পার্টির কোনো কোনো নেতা মনে করেন, যেহেতু দশম জাতীয় সংসদে রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন সেহেতু এরশাদের অবর্তমানে তিনিই একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করলে ভালো হবে। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ হলেও উপনেতা হবেন জি এম কাদের। এরশাদের মৃত্যুর পর জি এম কাদের এখন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবেই দায়িত্ব পালন করবেন। তবে দুই পদেই জি এম কাদের দায়িত্ব নিলে অনেকটা বেগ পেতে হবে। সেক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে।
Advertisement
গত ৪ মে এক সাংগঠনিক নির্দেশে জাতীয় পার্টির তৎকালীন চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছিলেন, ‘আমি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এই মর্মে ঘোষণা করছি যে, আমার অবর্তমানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব আমার ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি পালন করবেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য আমি জাতীয় পার্টির সকল স্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এবং নির্দেশ প্রদান করছি।’
আরও পড়ুন >> এরশাদের সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা, তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদে সদ্যপ্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন সেটার জন্য পার্টির প্রেসিডিয়াম সভা করে অনুমোদন নেয়ার প্রয়োজন নেই বলেও মনে করেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্যরা। তবে জি এম কাদের চান প্রেসিডিয়াম সভায় আলাপ-আলোচনা করে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বের বিষয়ে অনুমোদন নিতে।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের প্রাণপ্রিয় চেয়ারম্যানের কুলখানির পর আমরা আলাপ-আলোচনা করে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেব। সামনে কী হতে পারে, কী হওয়া উচিত- এ ব্যাপারে পার্টির প্রেসিডিয়াম সভায় অনেকে মতামত দেবেন। একটু সময়ের প্রয়োজন। একটু তো অপেক্ষা করতে হবে।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘অতীতেও কেউ না কেউ আমাদের মাঝ থেকে চলে গেছেন। সব দলেই কেউ না কেউ এসে দাঁড়ায়। ম্যাডাম (রওশন এরশাদ) আছেন। এর আগেও তিনি বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। এ বিষয় নিয়ে একটা ধারণা তো মানুষ দিচ্ছে। চূড়ান্ত বিষয়টি ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে যাবে। একটু অপেক্ষা করলেই ভালো। সব পরিস্থিতিতেই দলের ঐক্য আমাদের ধরে রাখতে হবে।’
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমরা পার্লামেন্টারি পার্টিতে বসে আলাপ করব। পার্টির প্রেসিডিয়াম আছে। সেখানে আমরা বসে ঠিক করে নেব। ফরমালি কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের হয়নি। পার্টির হাইকমান্ড, আমরা বসে আলাপ করে নেব।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, আমার যতটুকু মনে হয়, কম্প্রোমাইজ (আপস) ওয়েতে চললে বিরোধীদলীয় নেতা হবেন রওশন এরশাদ। জি এম কাদের সাহেব হবেন পার্টির চেয়ারম্যান। আমরা চাই কাদের সাহেব থাকুক, ম্যাডামও (রওশন এরশাদ) থাকুক।
আরও পড়ুন >> আমাদের অসমাপ্ত প্রেম : বিদিশা এরশাদ
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জি এম কাদের ভারমুক্ত হয়ে এখন পরিপূর্ণ চেয়ারম্যান বলেও জানান ওই প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তো এখন বলা উচিতও নয়। স্যারের অবর্তমানে তো আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থাকেন না। অটোমেটিক্যালি (স্বয়ংক্রিয়ভাবে) সেটা উঠে যায়। উনি (জি এম কাদের) চেয়ারম্যান। বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন সেটা সংসদীয় দল বসে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে অথবা প্রেসিডিয়াম মিটিং করে সিদ্ধান্ত হবে।
এইউএ/এমএআর/এমএস