জাতীয়

পাঁচ মাসে রোহিঙ্গাদের জন্য চাহিদার ২৫ শতাংশ অর্থের জোগাড়

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য চলতি বছরে জাতিসংঘের ৯২ কোটি ৫ লাখ মার্কিন ডলারের অর্থায়ন চাহিদা থাকলেও মে মাস পর্যন্ত পাওয়া গেছে মাত্র ২২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। যা মোট চাহিদার ২৫ শতাংশ।

Advertisement

এদিকে চলতি বর্ষা মৌসুমে ঝড়, ভূমিধস ও বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থের জোগানেও সংকটে পড়েছে জাতিসংঘ। ফলে এ অবস্থায় অর্থায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) ২০১৯ এর চলতি বছরের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন খাতে সংকট মোকাবেলা পরিকল্পনায় রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠী উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গাদের জন্য ৯২ কোটি ৫ লাখ মার্কিন ডলারের অর্থায়ন প্রাক্কলন দেয়। তবে গত মে মাস পর্যন্ত এ চাহিদার মাত্র ২২ কোটি ৯০ লাখ ডলার অর্থায়ন পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন > রোহিঙ্গাদের কারণে নিরাপত্তা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রধানমন্ত্রীর

Advertisement

গত সোমবার ইউএনএইচসিআরের ব্যাংকক কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈরী আবহাওয়ায় চলতি বছরে যে সহযোগিতা প্রয়োজন তা ইতোমধ্যে ২০১৮ সালের চাহিদার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী প্রয়োজনকে ছাড়িয়ে গেছে। মোট আর্থিক চাহিদার এক তৃতীয়াংশ এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আর্থিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকে আরও প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।

ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের তথ্যে জানা গেছে, ২০১৭ সালের আগস্টের পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর থেকেই তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, পুষ্টি, সুরক্ষা, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন খাতে সেবা নিশ্চিতে কাজ করে আসছে বাংলাদেশসহ জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল।

তবে কক্সবাজার প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ এলাকা হওয়ায় চলতি বর্ষায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা বাস্তুচ্যুত মানুষগুলো আবারও বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গত এপ্রিল থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত বর্ষা, ঝড়, ভূমিধস, বন্যা ও ঝড়ো বাতাসে ৪২ হাজার ৪৭৪ জন রোহিঙ্গা আক্রান্ত হয়েছেন। আর ক্যাম্পের ভেতরেই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৫ হাজার ১৬৭ জন রোহিঙ্গা।

আইএসসিজি গত ৮ জুলাইয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুম ১৭ জুন থেকে অনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও রোহিঙ্গা শিবিরে এ মৌসুমের দুর্ঘটনা শুরু হয়েছে গত এপ্রিল থেকে।

Advertisement

আরও পড়ুন > রোহিঙ্গা সমস্যা দ্রুত সমাধানে ঢাকা-বেইজিং মতৈক্য

আইএসসিজি জানায়, গত ২১ এপ্রিল থেকে বর্ষা, ঝড়, ভূমিধস, বন্যা ও ঝড়ো বাতাসে ৮ জন নিহত এবং ৬৪ জন রোহিঙ্গা আহত হয়েছেন। এছাড়া ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬ হাজার ৫০৩টি ঘর এবং বন্যায় ২৪৬টি ঘর।

গত ২৭ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে ত্রাণকার্য চালানো এবং রোহিঙ্গাদের সেবা দেওয়ার জন্য নির্মিত অন্যান্য যে কেন্দ্রগুলো রয়েছে সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ১৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। ১৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র পুরোপুরি ভেঙে গেছে। আর ৩৯৭টি আংশিক এবং ২৯১টি আশ্রয়কেন্দ্র বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়া মোট ১৯০০ আশ্রয়কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরের ১৩, ১৬ এবং ১৮ নং ক্যাম্পের ১৮০০ এর বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে পায়খানা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনীয় সেবাসমূহও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এগুলো বর্তমানে মেরামতের প্রয়োজন।

এদিকে চলতি বর্ষায় ২টি শিশু আহত হয়েছে। আর পাঁচ বছরের একটি শিশু প্রায় ডুবে গিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩৭ শিশু গত এক সপ্তাহে শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।

আরও পড়ুন > চীন চাইলেই রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধান

জেআরপি থেকে জানা গেছে, শিক্ষায় ৫ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের চাহিদার ২ শতাংশ অর্থ বর্ষা মৌসুমে বৈরী আবহাওয়া মোকাবিলায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। একইভাবে খাদ্য নিরাপত্তায় মোট চাহিদার ১ শতাংশ, সুরক্ষায় ১ শতাংশ, আশ্রয়ে ৪ শতাংশ, পুষ্টিতে ৫ শতাংশ, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনে ১০ শতাংশ এবং যোগাযোগে মোট চাহিদার ২ শতাংশ অর্থ বর্ষা মৌসুমে বৈরী আবহাওয়া মোকাবিলায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

ইউএনএইচসিআর জানায়, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) নিজেরা, অংশীদার এবং শরণার্থী সেচ্ছাসেবীদের নিয়ে অসুরক্ষিত মানুষগুলোকে নিরাপত্তাসহ জরুরি খাদ্য এবং তাদের ভবন, রাস্তা ও ঢালগুলো মেরামত করছে। বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে পুরো বছরজুরে বর্ষা মৌসুমের প্রস্তুতি নিয়ে আসছে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো।

আরও জানানো হয়, শরণার্থীরাই বর্ষায় তাদের রক্ষায় মূল ভূমিকা পালন করছে। বর্ষায় ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে নিয়ে আসা এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সচেতনতা বৃদ্ধিতে তারা একে অপরকে সহযোগিতা করছে। বর্তমানে সার্বিকভাবে ঝড়ের প্রভাব কিছুটা দুর্বল বলে মনে হচ্ছে। তবে এখনো বর্ষার মাত্র অর্ধেক পার হয়েছে।

জেপি/আরএস/জেআইএম