এক হাজার এজেন্টের চার কোটি টাকা নিয়ে ‘বিকাশ’র ডিস্ট্রিবিউট পালানোয় বিপাকে পড়েছেন এজেন্টরা। টাকা ফেরত পেতেও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ফলে তারা ব্যবসায়িক ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
Advertisement
আরও পড়ুন>> গ্রাহকদের চার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউটর
বিকাশ কর্তৃপক্ষ বলছেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। এজেন্টদের টাকা ফেরতের বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।
কিন্তু এজেন্টরা বলছেন, বিকাশ আমাদের আদালত দেখাচ্ছে। দেশের মামলা মানেই দীর্ঘসূত্রতা। ফলে টাকা ফেরত নিয়ে আমরা অনিশ্চয়তায় রয়েছি।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই টাকা নিয়ে পালানো বিকাশের সাতক্ষীরা জেলা ডিস্ট্রিবিউটর ফারুক হোসেনকে ১৫ জুলাই (সোমবার) সকাল থেকে জেলার এজেন্টরা খুঁজে পাচ্ছেন না। তার ফোন ও অফিস বন্ধ। বাড়িতেও ঝুলছে তালা।
এদিকে, এজেন্টদের বিক্ষোভের মুখে বিকাশ সাতক্ষীরা অফিসের ম্যানেজারসহ তিনজনকে আটক করেছে সদর থানা পুলিশ।
সোমবার বিকেলে সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবে এসে বিকাশ এজেন্টরা অভিযোগ করেন, অনেকদিন ধরে তারা চাহিদামতো টাকা পাচ্ছেন না। তিন লাখ টাকা চাইলে দেয়া হয় এক লাখ। এভাবে বেশ কিছুদিন যাবত তাদের ব্যবসায়ও বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।
এজেন্টদের অভিযোগ, বিকাশ ডিস্ট্রিবিউটর তাদের টাকা হাতিয়ে নিয়ে হুন্ডির কাজে ব্যবহার করেছেন।
Advertisement
আরও পড়ুন>> নম্বর দেয় বিকাশ এজেন্টরা, টাকা গায়েব করে তারা
এ বিষয়ে বিকাশের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশন্স শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনাটি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখছি। বিষয়টি এখন তদন্তাধীন। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত।
বিকাশের ডিস্ট্রিবিউটর যেসব এজেন্টের টাকা নিয়ে পালিয়েছেন, বিকাশ কর্তৃপক্ষ তাদের কোনো সহযোগিতা করবেন কি না- জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির এই কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনায় শুধু এজেন্টরাই ক্ষতিগ্রস্ত হননি; বিকাশের ভাবমূর্তিও ক্ষণ্ন হয়েছে। যেহেতু এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। তাই আদালত যে সিন্ধান্ত দেবেন, সেই আলোকে কাজ করব। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে নির্দেশনা দেবে, সেই অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নেব।
আরও পড়ুন>> বিকাশ ফোন দেয় না, ফোন দেয় প্রতারকরা
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) নিয়ম অনুযায়ী, ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগ দিয়ে থাকে মূল প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ ব্যাংক। সেই হিসেবে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগ দেয়ার কথা ব্র্যাক ব্যাংকের। এখন যদি এজেন্টের টাকা কোনো ডিস্ট্রিবিউটর নিয়ে পালিয়ে যান, তাহলে এর দায় সম্পূর্ণ বিকাশ এবং তাদের মূল প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ব্যাংকের।
এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিকাশের ঘটনাটি গণমাধ্যমে জেনেছি। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের কাছে সরাসরি অভিযোগ করেননি। যদি কেউ অভিযোগ করেন, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
তিনি জানান, বিকাশ কর্তৃপক্ষ ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগ দিয়েছে। জামানতও রেখেছে। এজেন্টরা যদি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) নিয়ম অনুযায়ী অর্থ দিয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তারা টাকা ফেরত পাবেন। তবে এখন কত টাকা নিয়ে পালিয়েছে, এটা তদন্তের বিষয়। এ ছাড়া আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করলে, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব এবং যথাযথ ব্যবস্থ নেব।
এর আগে বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠানো, অর্থ পাচার, চাঁদাবাজি, অপহরণ, জঙ্গি ও সন্ত্রাসে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।
অবৈধভাবে লেনদেনের অভিযোগে ‘বিকাশের’ ২ হাজার ৮৮৭ এজেন্টের হিসাব বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এর পরও বন্ধ হয়নি বিকাশের মাধ্যমে নানা অপকর্ম।
আরও পড়ুন>> বিকাশের হটলাইন নম্বরের কল ধরে ব্যবসায়ীর অর্ধ লাখ টাকা গায়েব
২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশ চালু হয়।
বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশে এখন মোট ১৬টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত।
চলতি বছরের মে মাস শেষে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৪ লাখ।
এসআই/জেডএ/পিআর