স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে নোয়াখালী পৌর পার্কে বসে আড্ডা দেয়ার সময় কয়েকজন তরুণ-তরুণী ও প্রেমিক যুগলকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন এমপি।
Advertisement
মঙ্গলবার দুপুরে নোয়াখালীর পৌর পার্কে এ ঘটনা ঘটে। নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী পুলিশ নিয়ে পার্কে অভিযান চালিয়ে এসব তরুণ-তরুণী ও প্রেমিক যুগলকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
একই সঙ্গে নিজের ফেসবুক পেজে শিক্ষার্থীদের ছবি পোস্ট করে অভিভাবকদের সতর্ক করেন তিনি। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পার্কে আড্ডা দিচ্ছিল বলে জানিয়েছেন এমপি।
আরও পড়ুন : পার্কে বসে অসামাজিক কাজ, শতাধিক তরুণ-তরুণী ধরা
Advertisement
একরামুল করিম চৌধুরী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অভিভাবকদের বলছি, আপনার সন্তানের খোঁজখবর নিন। স্কুল-কলেজ চলাকালীন ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পার্কে ঘোরাঘুরি করছে কিনা খবর নিন। কোথায় যাচ্ছে, লেখাপড়া করছে কিনা খেয়াল রাখুন। স্পষ্টভাবে বলছি, স্কুল-কলেজ চলাকালীন কোনো শিক্ষার্থী পার্কে ঘোরাঘুরি করলে পুলিশ থানায় ধরে নিয়ে শাস্তি দেবে। আজ স্কুল-কলেজ চলাকালীন পার্কে শিক্ষার্থীরা আড্ডা দিচ্ছে দেখে পুলিশ থানায় নিয়ে গেছে। আমি পুলিশকে বলেছি, তাদের অভিভাবকরা থানায় এলে তাদের দায়িত্বে সতর্ক করে ছেড়ে দেবেন। আশা করি এ ধরনের ঘটনা পুনরায় না হোক।
আরও পড়ুন : স্কুল সময়ে পার্কে অথবা আড্ডায় পেলেই আইনগত ব্যবস্থা
এদিকে একরামুল করিম তার পোস্ট শেয়ার করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা হচ্ছে। কেউ কেউ এমপির এমন ভূমিকার প্রশংসা করলেও অনেকেই সমালোচনা করেছেন। সেই সঙ্গে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন এই বলে, ‘পার্কে অভিযান চালিয়ে শিক্ষার্থীদের পুলিশে ধরিয়ে দেয়া কি একজন এমপির কাজ? তার কি আর কোনো কাজ নেই? পুলিশ কি পার্ক থেকে লোকজনকে ধরে নিয়ে যেতে পারে? তাছাড়া ছাত্র-ছাত্রীর আড্ডারত ছবি প্রকাশ্যে ফেসবুকে শেয়ার করা কতোটা ন্যায়সঙ্গত?।’
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার দুপরে ১২টায় সুধারাম থানা-পুলিশ জেলা শহরের পৌর পার্কে অভিযান চালিয়ে ১৮ জন ছাত্র-ছাত্রীকে আটক করে। পর পার্কে আর আসবে না- এরকম মুচলেকা দিলে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
Advertisement
এমপি একরামুলের ফেসবুক আইডিতে দেখা যায়, তার এই পোস্টে লাইকের সংখ্যা অন্তত ১০ হাজার। পোস্টটি শেয়ার হয়েছে সাড়ে তিন হাজারের অধিক। সেই সঙ্গে মন্তব্য করেছেন প্রায় আড়াই হাজারের অধিক মানুষ।
আরও পড়ুন : কুমিল্লায় ৪৭ প্রেমিক যুগল আটক
রাজু নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘শাসনটা একদম ঠিক আছে। তবে ছবি তুলে ফেসবুকে দেয়া, সরাসরি থানায় পাঠানোর ব্যাপারটা হিতে বিপরীত হতে পারে। ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছেন, এক শ্রেণির মানুষ আছে এই ছবিগুলো দিয়ে ট্রল করবে। তখন ছেলে-মেয়ে কোনো অঘটন ঘটালে এই দায়ভার কে কেবে?
পাশাপাশি কয়েকজন এমপির এমন ভূমিকায় প্রশংসায় ভাসিয়ে বলেছেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদের কঠোর শাসনের আওতায় আনা দরকার।
প্রদীপ সাহা নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনার পদচারণায় আমরা মুগ্ধ। আপনার জন্য অনেক শুভেচ্ছা অভিনন্দন ও শুভ কামনা। এমপি মহোদয়ের কাছে নিবেদন, এসব অনিয়ম আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করুন। নোয়াখালীবাসী সারা জীবন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে আপনাকে স্মরণ করবে।
আরও পড়ুন : শিশু পার্কে ঈদ আনন্দ
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, আজ সমাজে অবক্ষয় দেখা দেয়ার অনেক কারণের মধ্যে এগুলো অন্যতম। আমরা যারা সিনিয়র, বিশেষ করে মা-বাবা যদি একটু লক্ষ্য রাখেন তাহলে সমাজে এতো অবক্ষয় হবে না। এসব কারণে সমাজ ও দেশে ধর্ষণ ও খুনসহ নানা ধরনের অপরাধ বেড়ে গেছে। মানুষকে এ ধরনের অপরাধ থেকে দূরে রাখতে পারলে সামাজিক অবক্ষয় দূর হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
আজকে সমাজে সহজ-সরল নারীরা নানাভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, আমি আমার বিবেকের তাড়নায় এসব করি, অন্য কোনো কারণে নয়।
তিনি আরও বলেন, যারা জনপ্রতিনিধি তাদের প্রত্যেককে এসব অপরাধ দমনে এগিয়ে আসা দরকার। আপনি আমাকে ভোট দেবেন আর আমি ঢাকায় গিয়ে বসে থাকব, তাহলে এলাকার কাজ দেখবে কে? যার যার অবস্থান থেকে এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধে এগিয়ে আসা উচিত।
মিজানুর রহমান/এএম/পিআর