রাজনের বিয়ে উপলক্ষে সোমবার দিনভর আলতাফ হোসেনের বাড়িতে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। আত্মীয়-স্বজনে ভরপুর ছিল বাড়িটি। মুহূর্তের একটি দুর্ঘটনায় বাড়িতে নেমে আসে শোকের মাতম। ভোর থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভিড় করে কান্নার রোল পড়ে বাড়িটিতে।
Advertisement
আরও পড়ুন : উল্লাপাড়ায় ট্রেনের ধাক্কায় বর-কনেসহ নিহত ১০
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামের সদ্য বিবাহিত বর রাজন শেখের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় নিস্তব্ধ শোকাবহ পরিবেশ। চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না দূর-দূরান্ত থেকে আসা শত শত নারী-পুরুষ। সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা নেই কারও কাছেই। শুধুু কান্দাপাড়া নয়, আশপাশের গ্রামগুলো থেকেও শিশু থেকে বৃৃদ্ধ সব বয়সী মানুুষ। ওই বাড়িতে এসে এমন শোকাবহ পরিবেশ দেখে অজান্তেই চোখের অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে অনেকের।
আরও পড়ুন : ট্রেনের ধাক্কায় নিহত বর-কনেসহ ১১ জনের দাফন সম্পন্ন
Advertisement
সেখানে কথা হয় চুনিয়াহাটি থেকে আসা রাজিয়া খাতুন, কালিয়ার আব্দুল শেখ, মাসুমপুর মহল্লার রাজু, রায়পুরের হাসিনা বেগমের সঙ্গে। তারা বলেন, নাটক সিনেমা ছাড়া এমন দৃশ্য আগে কখন দেখিনি। আল্লাহ এমন শোক যেন আর কাউকে না দেন।
অথচ গতকাল সোমবার সকাল থেকেই উৎসবে মাতোয়ারা ছিল বাড়িটি। অতিথিদের পদচারণায় মুখরিত ছিল বাড়ির আঙিনা। আলতাফ হোসেনের একমাত্র ছেলে রাজনের বিয়ের উৎসবে হাজির হয়েছিল পিতৃ ও মাতৃকুলের আত্মীয়-স্বজনরা।
প্রতিবেশীরা বলেন, আলতাফ হোসেন গরুর ব্যবসায়ী। তার ছেলে রাজন টুইস্টিং মিলের শ্রমিক। বড় মেয়ে স্বর্ণা খাতুনের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে রুপা লেখাপড়া করছে। বাপ-ছেলে মিলে সংসারটা ভালোই চালাচ্ছিলেন। সোমবার রাজনের বিয়ে ছিল উল্লাপাড়া উপজেলার এনায়েতপুর গুচ্ছগ্রামের মৃত গফুর শেখের মেয়ে সুমাইয়ার সঙ্গে। বিয়ের জন্য দুপুরে দুটি মাইক্রোবাসে প্রায় ৩০ জন বরযাত্রী নিয়ে যান তারা। উৎসবমুখর পরিবেশে সেখানে বিয়েও হয়। বর-কনে কবুল পাঠ করে একে অপরকে জীবনসঙ্গী করে নিলেন।
কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে স্বপ্নগুলো পড়ে রইলো স্বপ্নের জায়গায়। রইলো না স্বপ্ন বোনার মানুষগুলো। ফেরার পথে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন বর-কনে। একই সঙ্গে প্রাণ গেল বিয়ে উৎসবের সফরসঙ্গী আটজনের। দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করতে হলো আরও চারজনকে। নিয়তির এ নিষ্ঠুর খেলায় বিয়ে হলেও সুমাইয়া বরণ আর ফুলশয্যা হলো না রাজনের।
Advertisement
এ দুর্ঘটনায় নিহত অন্যরা হলেন- রাজনের মামা শামীম হোসেনের একমাত্র ছেলে বায়েজিদ ওরফে আলিফ (৯), রাজনের দাদা কাজিপুরা গ্রামের ভাষান শেখ (৫০), তার ফুপুর শ্বশুর সদর উপজেলার রামগাতী গ্রামের আব্দুস সামাদ (৪৫), সামাদের ছেলে শফিউল ওরফে শাকিল (১৯), ধর্ম বোনের স্বামী সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার দিয়ার ধানগড়া মহল্লার আলতাফ হোসেনের ছেলে শরিফ হোসেন (৩২) ও চাচাতো ভগ্নিপতি রায়গঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণদিয়ার গ্রামের আলম মিয়ার ছেলে খোকন (২৪)। নিহত বাকিরা হলেন মাইক্রোবাসচালক নুর আলম স্বাধীন (৫৫) ও তার সহকারী আহাদ আলী (৪৫)।
এছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন রাজনের আপন ছোট বোন স্বর্ণা খাতুনের স্বামী সুমন (৩০)। প্রতিবেশীরা আরও জানান, যারা মারা গেছেন তারা একে অপরের আত্মীয়। তাই সবাই শোকাহত।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এমএএস/এমএস