দেশজুড়ে

নোংরা রাজনীতির শিকার বঙ্গবন্ধু কলেজ

ঢাকার ধামরাই উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু কলেজ এখন পরিত্যক্ত। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রোয়াইলের জমিদারদের করে যাওয়া স্কুলের সম্পত্তির একপাশের কয়েকটি ভবন নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামে কলেজ স্থাপন করা হয়।

Advertisement

১৯৯৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তৎকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক কলেজটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর মধ্য দিয়ে কলেজের যাবতীয় কার্যক্রম শুরু হয় এবং ভালোভাবেই চলছিল। পরবর্তীতে ক্ষমতার পালাবাদল হওয়ায় ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসে। এর পরপরই কলেজটিতে লুটপাট চালিয়ে এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার।

এরপর পরপর তিনবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসায় এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি হয়ে ওঠে, বন্ধ হয়ে যাওয়া কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা হোক।

সরেজমিনে ধামরাই উপজেলার রোয়াইল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রোয়াইল উচ্চ বিদ্যালয়ের বিপরীতে স্কুলের জমিতেই নির্মিত বঙ্গবন্ধু কলেজের ভবনগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কলেজের সামনেই ধান শুকাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব ইশার আলী। কলেজটির ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায় ভবনের দেয়ালে বট-বৃক্ষসহ অন্যান্য গাছ গজিয়ে ভুতুরে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি দেয়ালের ভেতরে এবং বাইরে লতাপাতায় আচ্ছন্ন। কোনো রকমে পরিত্যক্ত ভাঙা-চুরা সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গিয়ে দেখা গেল গরুর গোবর শুকানোর মহোৎসব।

Advertisement

ইশার আলী জানান, শেখ হাসিনা সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এলে এমটি বেনজীর আহমদ এবং মুক্তিযোদ্ধা মোখলেছুর রহমানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বঙ্গবন্ধু কলেজটি স্থাপন করেন। তাদের ক্ষমতা যতদিন ছিল ততদিন কলেজটি খুব ভালোভাবেই চলেছে। কিন্তু ক্ষমতার পালাবদল হলে রাজনৈতিক কারণে এটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা এখানে লুটপাট চালিয়ে ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রেখেছে।

পাশেই ছোট নাতিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রাফেজা বেগম বলেন, কলেজটি হওয়ায় আমাদের ছেলে-মেয়েরা এখানে লেখাপড়া করেছে। কিন্তু এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন আমাদের নাতি-নাতনিদের প্রায় ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে সাভার ও ধামরাইয়ের কালামপুর ও মানিকগঞ্জের সিংগাইরে গিয়ে পড়াশুনা করতে হয়।

কলেজটির ছবি তোলার সময় কথা হয় সাভার সরকারি কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়া রোয়াইল গ্রামের সঞ্জয় রাজবংশী, ওসমান, ও রাজিবসহ কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে।

কথাবার্তার একপর্যায়ে সঞ্জয় রাজবংশী জানান, রাজনৈতিক কারণেই কলেজটি বন্ধ হয়ে গেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। পরে উপজেলা প্রশাসন পার্শ্ববর্তী রোয়াইল উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কলেজ ভবনটি দেখাশুনার দায়িত্ব দিলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন প্রশাসনকে না জানিয়ে কলেজ ভবনে ব্যবহৃত দামিদামি মোটা কাঠের ভিম ও দরজা-জানালাসহ অন্যান্য আসবাব বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একপর্যায়ে তার নির্দেশেই স্থানীয়রা ভবনটির ৮টি কক্ষ ভেঙে ইট লুটপাট শুরু করেন।

Advertisement

ধামরাই সরকারি কলেজের ছাত্র ওসমান জানান, জাতির জনকের নামে স্থাপিত কলেজটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদেরকে অনেক কষ্ট করে অন্য জায়গায় গিয়ে লেখাপড়া করতে হচ্ছে। ছেলেরা দূরে গিয়ে পড়ালেখা করলেও বন্ধ হয়ে গেছে মেয়েদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ। তাই ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা চিন্তা করে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে কলেজটির কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার দাবি জানান তিনি।

জানতে চাইলে রোয়াইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন জাগো নিউজ বলেন, বঙ্গবন্ধু কলেজটি আমাদের স্কুলের সম্পত্তিতেই করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। প্রকৃতপক্ষে কলেজটি চালু করার জন্য আমরা নিজেদের ভবন, আসবাবপত্রসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি। বর্তমানেও আমরা কলেজটি চালুর জন্য স্কুলের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

এ বিষয়ে ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল কালাম বলেন, আমার জানামতে একসময় ধামরাইয়ের রোয়াইল ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধু কলেজ পরিচালনা করা হলেও এর কোনো নিবন্ধন না থাকায় আমরা প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি। তবে স্থানীয় গ্রামবাসী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ কলেজটি পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নিলে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।

এমএএস/এমএস