দেশজুড়ে

নদীর পানে চেয়ে কান্না

ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে নালিতাবাড়ীতে চেল্লাখালি নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

Advertisement

এদিকে, বন্যার পানি ওঠায় ঝিনাইগাতী ও শেরপুর সদর উপজেলায় ৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধির ফলে সদর উপজেলার চরপক্ষিমারী ইউনিয়নের বেপারীপাড়া সংলগ্ন চরের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় ৫০টি পরিবার বেপারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের ৩৫ গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। পাহাড়ি ঢলের তোড়ে সোমবার দুপুরে মহরশি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কিছু অংশে ভাঙন দেখা দেয়। স্থানীয় লোকজন ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা চালায়। ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইম ভাঙন ও বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।

Advertisement

এদিকে, ভারী বর্ষণের কারণে শেরপুর, নকলা ও নালিতাবাড়ী পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।

ঝিনাইগাতীর সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুন্নবী বলেন, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার কারণে উপজেলার ৩৭টি সহকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আকরাম হোসেন বলেন, গাজীর খামার ও ধলা ইউনিয়নের চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ওঠায় এবং চরপক্ষিমারি ইউনিয়নের বেপারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার্তরা আশ্রয় নেয়ায় এসব বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

নকলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের নদীভাঙন কবলিত এলাকায় সরজমিনে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে নকলার চরমধুয়া নামাপাড়া এলাকার কালাচান, ফয়েজ উদ্দিন, আলমাছ আলী, সদর আলী, আঙ্গুর মিয়া, আজিজুল ইসলাম, কাদির মিয়া, ইউসুফ আলী ও পবা মিয়াসহ অন্তত ১৫-১৬টি পরিবার বাড়ি ছাড়া হয়েছেন, সেই সঙ্গে হয়েছেন ভূমিহীন।

Advertisement

এছাড়া মৃগী নদীর ভাঙনে বাছুর আলগা দক্ষিণ পাড়া ও চকবড়ইগাছী গ্রামের আফাজ উদ্দিন ও আছিয়া বেগমের একমাত্র সম্বল পাঁচ শতাংশ জমির বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় ভূমিহীন হয়ে গেছেন। অশ্রু চোখে নদীর দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি। কারণ এক মুহূর্তে তারা ভূমিহীন হয়ে গেছেন।

পাশাপাশি মোসলেম উদ্দিন, সিরাজ উদ্দিন, দুলাল মিয়া, রজব আলী, হাইতুল্লাহ, লতিফ মিয়া, প্রতিবন্ধী হাফেজা ও বাদলসহ বেশি কিছু পরিবারের আবাদি জমি ও রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তারা সবাই দিশেহারা। ভাঙন থেকে জান-মাল রক্ষা করতে অনেকেই দূরে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন এবং বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুর রহমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সারোয়ার আলম তালুকদার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়াসহ ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তারা জানিয়েছেন।

হাকিম বাবুল/এএম/জেআইএম