ইকো পার্কের উন্নয়নে পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত অর্থ নয়-ছয়ের অভিযোগ উঠেছে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আসলাম হোসেনের বিরুদ্ধে। আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করছে বিভাগীয় কমিশনার অফিস। খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নিশ্চিন্ত কুমার পোদ্দার (উন্নয়ন) গত ৯ জুলাই কুষ্টিয়া এসে সরেজমিন পার্কের কাজসহ বিষয়টি তদন্ত করে গেছেন। সার্কিট হাউসে বসে কথা বলেছেন জেলা প্রশাসকসহ অন্যদের সঙ্গে। তার সঙ্গে ছিলেন হাসান হাবিব নামে একজন কর্মকর্তা। হাসান হাবিব এর আগে কুষ্টিয়ায় এডিসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
Advertisement
তবে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। প্রথমে ৯০ লাখ টাকা কয়েকটি ইকো পার্কের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে এই অর্থ কুঠিবাড়ির উন্নয়নে ব্যয়ের অনুরোধ করেন। পরে মন্ত্রণালয় থেকে শুধুমাত্র কুঠিবাড়ির উন্নয়নের নির্দেশ দেয়া হয়। অখ্যাত কয়েকটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার বিষয়ে মন্ত্রণালয় আপত্তি জানায়। পরে সেটি বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়নি এখনও। তবে অনেক আগের রেট থাকায় ঠিকাদাররা লোকসানের ভয়ে দরপত্র ফেলছেন না। মাত্র দুইজন ঠিকাদার দরপত্রে অংশ নিয়েছেন।
এদিকে পর্যটন মন্ত্রণালয় আর্থিক অনিয়ম, অদক্ষতা ও কাজে অবহেলার বিষয়টি আমলে নিয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেনকে শোকজ করেছেন। সেখানে কড়া ভাষায় আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে জেলা প্রশাসক শোকজের জবাবও দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, পর্যটনের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে বিগত জেলা প্রশাসক জহির রায়হান একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। সেই মোতাবেক মন্ত্রণালয় থেকে ৯০ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ দিয়ে তিনটি ইকো পার্কের উন্নয়নের জন্য প্রথমে একটি চিঠি পাঠানো হয়। এরপর বদলি হয়ে যান জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান। জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দেন মো. আসলাম হোসেন। তিনি ইকো পার্কের উন্নয়নের জন্য একটি রূপরেখা তৈরি করে টেন্ডার আহ্বানসহ কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেন। এর মধ্যে কিছু টাকা খরচও করা হয়। তবে এ অর্থ শুধু মাত্র কুঠিবাড়ির উন্নয়নে খরচ করার জন্য বলা হলেও অন্য ইকো পার্কে খরচ করা হয়। কুঠিবাড়ি ছাড়া যেসব ইকো পার্কে অর্থ খরচ করা হয়েছে সেখানে কোনো লোক সমাগম হবে না জানিয়ে এ অর্থ অপচয় হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
এরপর কুঠিবাড়িতে দর্শনার্থীদের ওয়াস ব্লক, বসার বেঞ্চ ও ছাতা নির্মাণসহ নানা কাজের ব্যয়ের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়। কুঠিবাড়িতে কাজ করার জন্য ডিও দেন স্থানীয় এমপি সেলিম আলতাফ জর্জ। তার ডিও পেয়ে মন্ত্রণালয় আরেকটি চিঠি প্রেরণ করেন। তার আগে কিছু অর্থ ব্যয় করা হয়। তবে অনিয়ম হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এর আগেও মন্ত্রণালয়ের দুইজন যুগ্মসচিব বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করেছেন। তারা আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। অনিয়মের অভিযোগ ওঠার কারণে মন্ত্রণালয় থেকে কাজ শুরুর নির্দেশ দেয়া হচ্ছে না।
এদিকে কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের গড়াই নদীর ধারে বালুর চরে একটি ইকে পার্কের উন্নয়নের কাজ চলছে। সেখানে সড়ক নির্মাণ, বেঞ্চ ও ছাতা নির্মাণের জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সাড়ে ৪ লাথ টাকা ছাড় করা হয়েছে। কাজ শেষে ঠিকাদার চূড়ান্ত বিল নেয়ার জন্য চেষ্টা করছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কয়া পার্কের জন্য সাড়ে ৪ লাখ টাকা অগ্রিম বিল দেয়া হয়েছে। কাজও হয়েছে। বাকি বিল এখনো ঠিকাদারকে দেয়া হয়নি। কিছু সমস্যা হওয়ায় কুঠিবাড়ির আগের টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে কোনো ঠিকাদারকে ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হয়নি।
কুমারখালী কুঠিবাড়ির কস্টোডিয়ান মুখলেচুর রহমান বলেন, আমি টেন্ডার কমিটির সদস্য। তবে টেন্ডারের বিষয়ে তেমন কিছু জানি না। খুলনা থেকে তদন্ত টিম এসেছিল। সেখানে আমার বক্তব্য জানিয়েছি।
Advertisement
তদন্ত কমিটির প্রধান খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নিশ্চিন্ত কুমার পোদ্দার বলেন, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিত অর্থের অনিয়ম হয়েছে কি-না তা তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। পরে প্রয়োজনে জানানো হবে।
কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, কুঠিবাড়ির উন্নয়নের জন্য আমি একটি ডিও লেটার দিয়েছিলাম। অর্থও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে কাজ শুরু হয়েছে কি-না জানি না। আমাকে কেউ এ বিষয়ে অবহিত করেনি। কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে মন্ত্রণালয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। তবে কাজের বিষয়ে স্বচ্ছতা থাকবে হবে। বিষয়টি আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখব।
আল-মামুন সাগর/আরএআর/পিআর