ঢাকাই সিনেমার মহানায়ক বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কিংবদন্তি অভিনেতা বুলবুল আহমেদের ছবি। এই উপাধি নিয়ে আজও চলচ্চিত্রপ্রেমীদের অন্তরে অমর হয়ে আছেন তিনি। যাদের হাত ধরে সিনেমার সোনালী দিন এসেছিলো তিনি তাদেরই একজন।
Advertisement
একই সঙ্গে সুদর্শন, সুশিক্ষিত, মার্জিত, রুচিশীল এই অভিনেতা অভিনয় গুণে পৌঁছে পেরেছিলেন সব শ্রেণির দর্শকের অন্তরে। মৌলিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করাটা ছিলো তার তৃপ্তির জায়গা। আজ সোমবার , ১৫ জুলাই দেশীয় চলচ্চিত্রের এই ‘মহানায়ক’র নবম মৃত্যুবার্ষিকী।
২০১০ সালের এই দিনে তিনি পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তার মৃত্যুবার্ষিকীতে দিনটিতে তাকে স্মরণ করেছেন চলচ্চিত্রের অনেকেই।
বুলবুল আহমেদের জন্ম ১৯৪১ সালে পুরান ঢাকায়। তার আসল নাম তাবারক আহমেদ। আদর করে তার বাবা-মা বুলবুল বলে ডাকতেন। দাম্পত্য জীবনে বুলবুল আহমেদের স্ত্রী ডেইজি আহমেদ। এই দম্পতির তিন সন্তান হলেন- মেয়ে ঐন্দ্রিলা ও তিলোত্তমা এবং ছেলে শুভ।দারুণ মেধাবী ছিলেন বুলবুল। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার কলেজিয়েট স্কুল, নটর ডেম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনা শেষ করার পর তৎকালীন ইউবিএল ব্যাংক টিএসসি শাখার ম্যানেজার হিসেবে চাকরিজীবন শুরু করেন তিনি।
Advertisement
চাকরির পাশাপাশি বুলবুল আহমেদ টিভিতে অভিনয় শুরু করেন। বুলবুল আহমেদ অভিনীত প্রথম টিভি নাটক ছিলো আবদুল্লাহ আল মামুনের পরিচালনায় ‘বরফ গলা নদী’। এটি ১৯৬৪ সালে বিটিভিতে প্রচারিত হয়। বুলবুল আহমেদ অভিনীত উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকগুলো হচ্ছে- মালঞ্চ, ইডিয়েট, মাল্যদান, বড়দিদি, আরেক ফাল্গুন, শেষ বিকেলের মেয়ে। ধারাবাহিক ও খন্ড নাটক মিলিয়ে প্রায় চার শতাধিক নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত সর্বশেষ টিভি নাটক ছিল ২০০৯ সালে শুটিং করা ‘বাবার বাড়ি’।
১৯৭৩ সালে আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের (ইউসুফ জহির) ‘ইয়ে করে বিয়ে’র মাধ্যমে প্রথম সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন। এর পরের বছর আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘অঙ্গীকার’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। দুটি ছবি দিয়েই তিনি বাজিমাত করেন। তবে বুলবুল আহমেদ ঢাকাই ছবির দর্শকের কাছে চিরদিন শ্রদ্ধেয় হয়ে থাকবেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি দুই চরিত্র ‘শ্রীকান্ত’ ও ‘দেবদাস’- এ দুর্দান্ত রূপদান করে। ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’ ও ‘দেবদাস’-এই দুটি চলচ্চিত্র দিয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছিলেন সকল শ্রেণির দর্শকের অন্তরে।
এছাড়াও ‘মহানায়ক’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘সূর্য্য কন্যা’, ছবিগুলোতে বুলবুল আহমেদ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন অনন্য উচ্চতায়। বুলবুল আহমেদ অভিনীত উল্লেখযোগ্য অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- ধীরে বহে মেঘনা, জীবন নিয়ে জুয়া, রূপালী সৈকতে, বধূ বিদায়, জন্ম থেকে জ্বলছি, দি ফাদার প্রভৃতি। বুলবুল আহমেদ অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ছিলো ‘দুই নয়নের আলো’।
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেন বুলবুল আহমেদ। তিনি ওয়াদা, মহানায়ক, ভালো মানুষ, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত, আকর্ষণ, গরম হাওয়া, কত যে আপন প্রভৃতি সিনেমার সফল নির্মাতা ছিলেন।
Advertisement
ঢাকাই ছবির নন্দিত অভিনেতা বুলবুল আহমেদের মৃত্যু দিবসে তার আত্মার শান্তি কামনায় শ্রদ্ধাঞ্জলি জানায় জাগো নিউজ পরিবার। অদেখা ভুবনে ভালো থাকুন তিনি। কে আয়োজনের ঘটায় স্মরণ করলো কী করেনি, গ্ল্যামারের জৌলুস আর মিডিয়া পণ্যের তালিকার দরদামে পরাস্ত হয়ে শিল্পকে এড়িয়ে কে বা কারা বুলবুল আহমেদকে এড়িয়ে গেল কী গেল না, তাতে কী আসে যায়। যতোদিন এদেশের চলচ্চিত্র থাকবে ততোদিন তিনি ‘মহানায়ক’ হয়ে থাকবেন।
এমএবি/পিআর