জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পেলে ক্লাসে ফিরবেন শিক্ষকরা

এক মাস ধরে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীয়করণ থেকে বাদপড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি পেলেই আবারও তারা ক্লাসে ফিরে যেতে চান। এ প্রতিশ্রুতির অপেক্ষায় দিনরাত পথ চেয়ে আছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা।

Advertisement

বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. মামুনুর রশিদ খোকন জাগো নিউজকে বলেন, টানা ২৯ দিন ধরে আমরা প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তার ফুটপাতের উপর বসে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। গত ১২ দিন ধরে আমাদের আমরণ অনশন পালিত হচ্ছে। এ আন্দোলনে ২১৮ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। আন্দোলনে আসা ফরিদপুর জেলার মধুখালী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন অসুস্থ হয়ে পরে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে আমরা সকলে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। তবুও আমাদের দাবি পূরণে কোনো দৃশ্যমান আশ্বাস পাইনি। দিনরাত আমরা খোলা আকাশের নিচে ফুটপাতের উপর প্লাস্টিক বিছিয়ে মাথায় ফিতা আর ব্যানার ঝুলিয়ে জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে গেলেও আমাদের দিকে সরকার মুখ তুলে তাকায়নি। আমাদের দাবি আদায়ে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিলে আবারও আমরা ক্লাসে ফিরে যাব। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

সভাপতি আরও বলেন, গত শুক্রবার আন্দোলনে আসা একজন শিক্ষক মারা গেছেন। তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে রোববার সকালে আমরা দোয়া-মোনাজাত করেছি। তার স্মরণে শিক্ষকরা কালো ব্যাচ পরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।

Advertisement

আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলেন, আমাদের মনটা ক্লাসে পড়ে আছে, দেহটা শুধু রাজপথে। আমরা শিক্ষক, মানুষ গড়া আমাদের কাজ, কিন্তু পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা পেতে বাধ্য হয়ে আমরা গত এক মাস ধরে রাস্তায় বসে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। এ আন্দোলনে আমাদের অনেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে শুয়ে আছেন। আর কত প্রাণ গেলে সরকার আমাদের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি দেবে?

তারা বলেন, আন্দোলনে এসে এ পর্যন্ত আমাদের ২১৮ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের কারও অবস্থা গুরুতর হওয়ায় নিজ নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। রাস্তায় থাকা ডেঙ্গু মশার কামড়ে ছয়জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন, ১০ জন শিক্ষক কলেরা-ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের সকলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সকলে হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। প্রধানমন্ত্রী আমাদের মা, তিনি আমাদের অন্ন-বস্ত্রের নিশ্চয়তা দিতে পারেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে দেশের চার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাই।

প্রসঙ্গত, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ থেকে বাদপড়া সারাদেশের প্রায় চার হাজার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা গত ২৯ দিন ধরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রথম পর্যায়ে তারা টানা ১৭ দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও গত ১২ দিন ধরে তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। জাতীয়করণ থেকে বাদপড়া এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষক রয়েছেন। তাদের মধ্যে এক হাজার ৩০০টির মতো প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য যাচাই-বাছাই করা হলেও তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি আন্দোলনকারীদের।

বিএ/এমএস

Advertisement