নীল চোখ, হালকা দাড়ি। দেখতে ধবধবে সাদা ইংরেজ, কিন্তু আসলে তিনি তা নন! আয়ারল্যান্ডের সবুজ জার্সি ছেড়ে ২০০৯ সালে টেস্ট খেলার তীব্র মনোবাসনা নিয়ে পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। চাপান ইংলিশ জার্সি। বলা হচ্ছে, ইংল্যান্ডকে চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে তোলা এউইন মরগ্যানের কথা।
Advertisement
থ্রি-লায়ন্সদের হয়ে শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল না মরগ্যানের। সে কারণে শুনতে হয় বহু কটুক্তি-সমালোচনা। তবে সবকিছুকে পেছনে ফেলে এখন তিনি সফল এক ইংলিশ ক্রিকেটার। শুধু ক্রিকেটারই না সফল এক অধিনায়ক। বিষয়টা যেন আইরিশ পুত্রের ইংরেজ বনে যাওয়া।
মরগ্যানের জন্ম আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে। ১৯৮৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। বাবা জডি মরগ্যান আর মা ওলিভিয়া মরগ্যানের দম্পতির সকল ছেলেপুলেই খেলতেন ক্রিকেট। পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রেখে, এউইন মরগ্যানও হলেন সে পথের যাত্রী। ৩ ভাই আর ২ বোনের সবাই খেলেছেন আয়ারল্যান্ডের জাতীয় দলে, মরগ্যানও তাই।
তবে তিনি শুধু খেলেননি! নিজের জীবন বোধকে মিশিয়েছেন তাতে। একগুঁয়েমি, জেদ আর রাগ সব ঢেলেছেন ক্রিকেটে। সফলতাও পেয়েছেন। নিজের স্বপ্ন পূরণ করেছেন।
Advertisement
ইংল্যান্ডের হয়ে এখন ফাইনাল খেলে আলোচিত হলেও, এদেশে এসে সয়েছেন অপমান, কটু কথা। ইংরেজদের জাতীয় সঙ্গীতের ‘গড সেভ দ্য দি কুইনে’ গলা মেলান না বলে সহ্য করেছেন নানা অপবাদ। কিন্তু মরগ্যান তাতে মুষড়ে যাননি। নিজের স্বপ্নটাকে থামিয়ে দেননি।
আর তিনি এসব করেছেন বলেই কিনা ২৭ বছর পর আবারো বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছাল ইংল্যান্ড। গত বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ে থ্রি-লায়ন্সরা। এরপরই তিনি দলকে নিজের অনন্য কীর্তিতে অন্য ধাতুতে গড়ে ফেলে। মরগ্যান না থাকলে হয়তো, ইংলিশ ক্রিকেট কোনোদিনও এভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারতো না!
তবে এখানে কৃতিত্ব পাবে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডও। গত বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর নেতৃত্ব থাকা তো দূরের কথা, মরগ্যানের গায়ে কখনো আর ইংল্যান্ডের জার্সি উঠবে কিনা তা নিয়েই ছিল শঙ্কা। কিন্তু সমস্ত শঙ্কা আর বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে উঠে তার উপরই আস্থা রাখে ইসিবি। তার প্রতিদানও কড়ায়গণ্ডায় এখন দিয়ে যাচ্ছেন মরগ্যান।
ইংল্যান্ডের আজন্ম চাওয়া ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতে মরগ্যান অমরত্ব অর্জন করতে পারবেন কিনা, তা সময়ই বলে দেবে। তবে যিনি ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডেতেই পুড়েছেন ৯৯ রানের আক্ষেপে, স্বপ্ন পূরণের জন্য যিনি ছেড়ে এসেছেন নিজ জন্মভূমি।,একগুঁয়েমি আর জেদ যাকে পৌঁছে দিয়েছে স্বপ্ন পূরণের একেবারে দ্বারপ্রান্তে- তার এখন বিশ্বকাপ জেতায় না জেতায় হয়তো কিছু যায়-আসেও না!
Advertisement
এমএইচবি/এসএস/জেআইএম