গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদী ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলসহ হাওর এখন পানিতে থৈ থৈ করছে। সুরমা নদীর পানি বেড়ে বিদৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যেই সুনামগঞ্জে হঠাৎ করে বেড়েছে পর্যটকদের সংখ্যা। যা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না স্থানীয়া। তারা বলছেন অসময়ে এখানে পর্যটকদের আসা ঠিক হয়নি।
Advertisement
সরজমিনে দেখা গেছে শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটকরা আসছেন সুনামগঞ্জে। যার মধ্যে ১৮-২২ বছরের তরুণ-তরুণীদের সংখ্যাই বেশি। সেই সঙ্গে রয়েছেন বিভিন্ন এনজিও, ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এসব পর্যটকের বেশিরভাগই জানেন না সুনামগঞ্জে এখন বন্যা চলছে। আবার অনেকেই জেনেও এসেছেন বন্যার পানিতে ঘুরতে। তাদের পছন্দের তালিকায় প্রথমে রয়েছে জেলার বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র টাংগুয়ার হাওর। কিন্তু বর্তমানে সেখানে ভ্রমণ অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ।
টাংগুয়ার হাওর ছাড়াও সুনামগঞ্জে ভ্রমণপিপাষুদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে তাহিরপুর উপজেলার ট্যাকেরঘাট, বারিকাটিলা, যাদুকাটা নদী। কিন্তু গত সোমবার থেকে টানা বৃষ্টিপাতে প্রথমে তাহিরপুর এবং পরেরদিন (মঙ্গলবার) থেকে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পর্যটকদের একমাত্র ভরসা এখন নৌকা ও ট্রলার।
Advertisement
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে আসা সাইদ আহমেদ বলেন, টাংগুয়ার হাওর দেখার এখনই সময়। হাওরের পানি দেখতেই এখানে আসা। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় অনেকটা ভয় হচ্ছে। ১০ হাজার টাকা দিয়ে নৌকা ভাড়া করেছি টাংগুয়ার হাওর ঘুরে দেখব বলে।
রাজধানী ঢাকা থেকে আসা প্রাইভেট ব্যাংকের কর্মকর্তা সজীব আহমেদ বলেন, ‘আমরা জানতাম না সুনামগঞ্জে বন্যা চলছে। আবহাওয়া খারাপ ও প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে জানলে আসতাম না। এখানে স্থানীয়রা বলছেন যেন টাংগুয়ারে না যাই। কিন্তু কি করব? এসেই যখন পরেছি তখন ঘুরেই দেখি।’
এদিকে হঠাৎ করে পর্যটক বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে হোটেল মালিকদেরও। বন্যার সময় এতো মানুষ হতে কখনও দেখেননি বলে জানান তারা। টানা দুই দিনে প্রায় ২ শতাধিক পর্যটক এসেছেন শুধু টাংগুয়ার হাওর দেখতে এমন দাবি তাদের।
তাহিরপুরের স্থানীয় বাসিন্দা রাজন চন্দ জানান, এখন টাংগুয়ার হাওরে আসার উপযুক্ত সময় নয়। কারণ হাওরে পানি ও স্রোত বেশি। পর্যটকরা আসুক এটা আমরাও চাই, কিন্তু অসময়ে না আসলে ভালো হতো। টাংগুয়ার হাওরে আসার উত্তম সময় শীতকাল। ওই সময় আসলে পানিও কম থাকে এবং হাওরের মধ্যে শীতের আনন্দ উপভোগ করা যায়।
Advertisement
উল্লেখ্য, সোমবার থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে করে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন প্রায় ১৩ হাজার পরিবার। এর মধ্যে তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, জামালগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা অন্যতম।
মোসাইদ রাহাত/এমএমজেড/পিআর