দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা করতে গেলে বাবা মোজাম্মেল হাওলাদারের কাছ থেকে কাফরুল থানার দায়িত্বরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কুদ্দুস বেপারী ৪ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। শুধু তাই নয়, ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডে তার কথোপকথন ছিল অপেশাদার।
Advertisement
ধর্ষণ মামলার আগে ভুক্তভোগীর বাবার কাছ থেকে টাকা নেয়া ও অপেশাদার আচরণ করায় কাফরুল থানা থেকে প্রত্যাহার করা ওই এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটি ও মিরপুর বিভাগ পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গত ২১ মে ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী বাবার দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে দ্বিতীয় শ্রেণিপড়ুয়া ওই শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন মো. সুমন খান। ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় ভুক্তভোগী শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। উত্তেজিত জনতা ধর্ষণচেষ্টায় অভিযুক্ত সুমনকে মারপিট করে। অসুস্থ অবস্থায় তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।
আরও পড়ুন> আগে টাকা পরে ধর্ষণচেষ্টার মামলা, ফাঁসছেন এসআই কুদ্দুস
Advertisement
পরদিন ২২ মে রাতে শিশুর বাবা মোজাম্মেল হাওলাদার কাফরুল থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশের দায়িত্বরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কুদ্দুস বেপারী টাকা দাবি করেন। তিনি বলেন, টাকা লাগবে। টাকা ছাড়া মামলা চালানো সম্ভব নয়। দরিদ্র ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চার হাজার টাকা আদায় করেন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে গ্রেফতার সুমনের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করেন। মামলা নং-৩২। ওই মামলার তদন্তভারও থানা থেকে ন্যস্ত করা হয় তার ওপর।
বিষয়টি জানার পর একই এলাকার বাসিন্দা ও ‘সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটি’ নামের একটি মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান আনোয়ার-ই-তাসলিমা প্রথা ফোনে কথা বলেন ওই এসআইয়ের সঙ্গে। তিনি থানায় উপস্থিত হয়ে চাপ প্রয়োগ করে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য করেন। অভিযুক্ত এসআই টাকা ফেরত দেন ২৩ মে রাতে।
আরও পড়ুন> আগে টাকা পরে ধর্ষণচেষ্টার মামলা, ফাঁসছেন এসআই কুদ্দুস
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সমালোচনার মুখে পড়েন ডিএমপির কাফরুল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল কুদ্দুস বেপারী। টাকা নেয়া-সংক্রান্ত অডিও রেকর্ড ফাঁস এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর এসআইয়ের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ওঠে।
Advertisement
এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এসআই আব্দুল কুদ্দুসকে প্রত্যাহার করে মিরপুরের উপ-কমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। গঠন করা হয় বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। গত ১০ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত কমিটি।
এসআই আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান মিরপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) খাইরুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এসআই কুদ্দুসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর একটি রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। সেটি আমরা কমিটির সদস্যরা শুনেছি। তদন্ত শেষ হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তথ্যপ্রমাণ পাওয়ায় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলবেন ডিসি মিরপুর।’
আরও পড়ুন> ধর্ষকদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দাবি
এ ব্যাপারে শনিবার বিকেলে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আহম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এসআই কুদ্দুসের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। সাক্ষ্যপ্রমাণে ওঠে এসেছে তার আচরণ পেশাদার ছিল না। তিনি ভুল করেছেন। তার এ ধরনের ভুল শাস্তিযোগ্য।’
তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন দিয়েছে। তদন্ত কমিটি বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে। ওই এসআইকে সাসপেন্ড (সাময়িক বরখাস্ত) করা হয়েছে। বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
জেইউ/এমআরএম/পিআর