‘ক্লোজআপ ওয়ান তারকা’ সঙ্গীতশিল্পী মৌসুমী আক্তার সালমার দ্বিতীয় স্বামী সানাউল্লাহ নূরী আগে আরেকটি বিয়ে করেছিলেন। ২০১৬ সালের ৩ জুন তাসনিয়া মুনিয়াত পুষ্মীকে বিয়ে করেছিলেন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার সাখাওয়াত হোসেনের ছেলে সানাউল্লাহ নূরী। পুষ্মীর অভিযোগ, সানাউল্লাহ তার সঙ্গে প্রতারণা করে সালমাকে বিয়ে করেছেন। এছাড়াও তাকে শারীরিক নির্যাতন ও তার পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন সানাউল্লাহর বিরুদ্ধে।
Advertisement
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন তাসনিয়া মুনিয়াত পুষ্মী। পুষ্মী ধানমন্ডি ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির এলএলএম শেষ বর্ষের ছাত্রী।
সংবাদ সম্মেলনের সময় পুষ্মীর বাবা বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা অধ্যাপক এম আখতার আলম এবং মা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা দিলারা খানম উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় তার বাবা আখতার আলম বলেন, ‘আমার মেয়ের সঙ্গে সানাউল্লাহ ও তার পরিবারের অপরাধের শাস্তি দাবি করছি। সেই সঙ্গে আমাদের কাছ থেকে যেসব অর্থ নেয়া হয়েছে এবং আমরা যে ক্ষতির শিকার হয়েছি, এসবের ক্ষতিপূরণও দাবি করছি।’
Advertisement
নিজের সঙ্গে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তাসনিয়া মুনিয়াত পুষ্মী বলেন, ‘২০১৬ সালের ৩ জুন সানাউল্লাহ নূরী ও আমার বিয়ে হয়। কিছুদিন সংসার জীবন সুখকর থাকলেও একপর্যায়ে সানাউল্লাহ ও তার বাবা-মায়ের লোভাতুর মনমানসিকতার কারণে তা জটিলতর রূপ ধারণ করে। বিয়ে করলেও সানাউল্লাহ আমার ভরণ-পোষণ দিতেন না। প্রতি মাসে আমি বাবা-মায়ের কাছ থেকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা এনে সংসারের খরচ চালাতাম। একমাত্র মেয়ে হওয়ায় আমার সুখের কথা চিন্তা করে বাবা-মা সব চাওয়া পূরণ করতেন।’
পুষ্মী বলেন, ‘এর মধ্যে সানাউল্লাহ লন্ডন যাওয়ার কথা বলেন। এ জন্য আমাদের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন সানাউল্লাহ। আমার মা তার চাকরির বিপরীতে রূপালী ব্যাংকের কক্সবাজার শাখা থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে সাড়ে ছয় লাখ টাকা সানাউল্লাহর ব্র্যাক ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে এবং সাড়ে তিন লাখ টাকা তার বাবা-মাকে দেন। কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে সেবার লন্ডন যাওয়া বাতিল হয় সানাউল্লাহর।’
‘এরপর সেই ১০ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা করার কথা বলেন তিনি। ব্যবসার উদ্দেশ্যে আমরা শ্বশুর-শাশুড়িসহ কক্সবাজারে ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করি। এর মধ্যে সানাউল্লাহ আবার ১০ লাখ টাকা দাবি করে। আবার এত টাকা দেয়া সম্ভব নয় জানালে তারা সবাই আমাকে ২০১৮ সালের ৫ জুলাই কক্সবাজারের বাসায় অমানসিক নির্যাতন করে। এর আগে ঢাকায় থাকার সময়ও আমার ওপর নির্যাতন করা হয়েছিল। তখন আমি জাপান বাংলাদেশ হাসপাতালে তিনদিন চিকিৎসাধীন ছিলাম’, যোগ করেন পুষ্মী।
৫ জুলাইয়ের ঘটনায় কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে বাদী হয়ে তাসনিয়া মুনিয়াতের মা দিলারা খানম মামলা করেন। কক্সবাজারের মামলায় উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করায় সানাউল্লাহ কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছেন বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
Advertisement
বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও সানাউল্লাহ নিজেকে অবিবাহিত উল্লেখ করে পাসপোর্ট তৈরি করেছেন এবং তা হাতে পান ২০১৮ সালের জুনে বলে জানান তাসনিয়া মুনিয়াত পুষ্মী। তার বক্তব্য, ‘এতে প্রমাণিত হয়, সানাউল্লাহর মনে সবসময় প্রতারণার প্রয়াস ছিল।’
পুষ্মী জানান, ২০১৮ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সানাউল্লাহ নূরী বার-অ্যাট ল করতে লন্ডন যান। যাওয়ার পর দু-একদিন যোগাযোগ রক্ষা করে একপর্যায়ে হঠাৎ তা বন্ধ করে দেন। এর মধ্যে সানাউল্লাহ লন্ডন থেকে এসে ওই বছরেরই ৩১ ডিসেম্বর ক্লোজআপ তারকা কণ্ঠশিল্পী সালমাকে বিয়ে করেন।
‘কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে জামিন আবেদনে সানাউল্লাহ গত ৬ জুলাই সালমার সন্তান প্রসবের দিন রয়েছে বলে আদালতকে জানান। চিকিৎসা বিজ্ঞান ও প্রকৃতির বিধান অনুযায়ী একটি সন্তানের গর্ভকালীন সময় ৯ থেকে ১০ মাস পর্যন্ত। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিয়ে করে কীভাবে ছয় মাসের সন্তান প্রসব করেন তার স্ত্রী? এতে কি প্রমাণিত হয় না, সানাউল্লাহ নূরী একজন লম্পট’, প্রশ্ন রাখেন পুষ্মী।
পুষ্মী জানান, বিভিন্ন মহল থেকে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে ইতোমধ্যে রাজধানীর হাজারীবাগ থানায় নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন পুষ্মী ও তার পরিবার।
সংবাদ সম্মেলনে পুষ্মীর মা দিলারা খানম, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান ও পরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সঙ্গীতশিল্পী সালমা ২০১১ সালে রাজনীতিবিদ শিবলী সাদিককে বিয়ে করেন। তাদের কোলজুড়ে আসে এক কন্যাসন্তান। এর মাঝে ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরপর সালমা গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বিয়ে করেন সানাউল্লাহ নূরীকে।
পিডি/বিএ/জেআইএম