দেশজুড়ে

ঘুষ ছাড়া পুলিশে চাকরি হবে আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না

টাকা ছাড়া চাকরি, তাও আবার পুলিশে? এমনটি কি ভাবা যায়? বিশ্বাস না হবারই কথা। কিন্তু এমনই অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটেছে যশোরের শার্শা উপজেলায়। এ উপজেলা থেকে এবার পুলিশে চাকরি পেয়েছে ১১ জন ছেলে-মেয়ে। অভাবের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা ছোটখাট ব্যবসায়ী, দিনমজুরের ছেলে-মেয়েসহ কয়েকজন হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য মেধা ও যোগ্যতায় বাংলাদেশ পুলিশে চাকরি পেয়েছেন ১০০ টাকার ব্যাংক চালান ও ৩ টাকা মূল্যের আবেদন ফরম পূরণ করে।

Advertisement

শার্শার নাভারন রেল বাজারের ছোট্ট একটা খুঁপড়ি ঘরে কাঁচামালের (সবজি) দোকানদার আব্দুস সবুর চৌধুরী। অভাবের সংসারে বড় ছেলে আল আমিন চৌধুরীকে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াচ্ছেন তিনি। নাভারন ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র সে। গত জুন মাসে আল আমিন জানতে পারে যশোরে পুলিশে লোক নিয়োগ দেয়া হবে। একবুক আশা নিয়ে ২২ জুন ছুটে যান যশোরে। শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে যান লাইনে। প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর বাকি সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশের চাকরিটা পেয়ে যান। মাত্র ১০৩ টাকা খরচে এই চাকরি পেয়ে আল আমিন ভীষণ খুশি। টাকা ছাড়া পুলিশে চাকরি তার পরিবারের কাছে পৃথিবী জয়ের আনন্দ। আল আমিনের মতো উপজেলায় এবার ১১ জন ছেলে-মেয়ে ১০৩ টাকায় পুলিশের চাকরি পেয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

শার্শা উপজেলায় এবার যারা চাকরি পেয়েছেন তাদের প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি মিষ্টি ও ফুল নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে যাচ্ছেন ওসি এম মশিউর রহমান, সেকেন্ড অফিসার এসআই মামুনুর রশিদ ও এসআই মোয়াজ্জেম হোসেন। পাশাপাশি তদন্তের সকল কাগজপত্র থানায় নিয়ে যেতেও বলেন ওসি।

দরিদ্র ঘরে জন্ম নেয়া আল আমিনের কাছে যেন এ চাকরিটা সোনার হরিণ। তিনি এখন নিজে লেখাপড়া করার পাশাপাশি ছোট ভাই-বোনদের লেখাপড়া করাতে পারবেন। আর এ ভাবনায় আনন্দ বইছে তার পরিবারে।

Advertisement

আল আমিন বলেন, আমি অনেক অনেক গর্বিত। কেননা লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছে। মেধার ভিত্তিতে আমি চাকরি পেয়েছি। চাকরির বিষয়ে সে বলে, ঘুষ ছাড়া পুলিশে চাকরি হবে আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না। আমার মেধা ও যোগ্যতায় চাকরি হয়েছে। এটি ভাবতেই গর্ববোধ হচ্ছে। চাকরিতে দায়িত্ব পালন করার সময় মানুষের ভালোর জন্যই সব কিছু করতে চাই।

আল আমিনের বাবা আব্দুস সবুর চৌধুরী বলেন, আমরা ভাবতেও পারিনি আমার ছেলের চাকরি হবে। প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না। পরে যখন এ চাকরির খবর নিয়ে থানার ওসি ও দারাগো সাহেবরা মিষ্টি ও ফুল নিয়ে বাড়িতে শুভেচ্ছা জানাতে এলেন তখনই বিশ্বাস করলাম ছেলে চাকরি পেয়েছে। ছেলের চাকরিতে কত যে খুশি হয়েছি তা বলে বোঝাতে পারবো না। এ সময় তিনি খুশিতে কেঁদে ফেলেন। এজন্য পুলিশ সুপারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ছেলেকে বলেছি আমি যতদিন বেঁচে আছি সংসারের হাল তোমাকে ধরতে হবে না। সততা নিয়ে চাকরি করবে। কেউ যেন তোমার ব্যবহারে কষ্ট না পায়।

যশোরের পুলিশ সুপার মো. মঈনুল হক জানান, কনস্টেবল পদে যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তা শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। এবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আইজিপির নেতৃত্বে এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ করা হয়। শার্শায় ১১ জনসহ গোটা জেলায় যে ১৯৩ জন নির্বাচিত হয়েছেন তারা শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। এবার অনেক দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। নিয়োগ প্রক্রিয়া কোনো প্রকার প্রশ্নবিদ্ধ হোক সেই সুযোগও দেয়া হয়নি। তাই নবীন নিয়োগপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের দেশপ্রেম নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এখন থেকে যোগ্য ও মেধাবীরা পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরিতে আসবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

Advertisement

জামাল হোসেন/এমএএস/পিআর