দেশজুড়ে

গলাকাটা গুজবে পুলিশ সুপারের হুঁশিয়ারি

পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে মানুষের মাথা লাগার গুজবে চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে গলাকাটা, বস্তাওয়ালা কিংবা ছেলে ধরা সন্দেহে একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। চাঁদপুর সদর, শাহরাস্তি, ফরিদগঞ্জ, মতলব দক্ষিণ ও কচুয়াতে এমন ঘটনা ঘটেছে। গত কয়েকদিনে চাঁদপুরে পাঁচজন গণপিটুনির শিকার হয়েছেন।

Advertisement

এসব ঘটনায় চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. জিহাদুল কবির হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যারা এসব গুজব ছড়াচ্ছে এবং লোকজনকে ধরে পিটুনি দিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি এ ধরনের অপকর্ম থেকে বিরত থাকার জন্য চাঁদপুরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

চাঁদপুর সদরের ইসলামপুর গাছতলা এলাকায় বৃহস্পতিবার মনু মিয়া (৪০) নামে এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়েছে স্থানীয় জনতা। গণপিটুনির শিকার মনু মিয়া লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থানার বাসাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা দুলু মিয়া। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মনু মিয়া মানসিক ভারসাম্যহীন।

একই ঘটনা ঘটেছে গতকাল বুধবার শাহরাস্তি পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাজিরকামতা গ্রামে। স্থানীয়রা জানান, বুধবার সকালে বড়বাড়ি সংলগ্ন রাস্তার মাথায় অজ্ঞাত পাগলিকে ঘুরাফেরা করতে দেখে লোকজন। এ সময় কে বা কারা ওই নারীকে পদ্মা সেতুর গলাকাটা গ্রুপের লোক বলে আখ্যায়িত করলে লোকজন তাকে মারধর করে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর মোহাম্মদ মোল্লার ব্যবসায়িক কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ তাকে থানা হেফাজতে নেয়।

Advertisement

ফরিদগঞ্জেও কয়েকশ জনতা দলবদ্ধ হয়ে ছেলে ধরা সন্দেহে গত দুইদিনে জুলেখা বেগম (৮০) নামে এক নারী ও জাহাঙ্গীর আলম নামে মধ্য বয়সী এক ব্যক্তিকে বেদম পিটুনি দিয়েছে। তারা দুইজনই মানসিক ভারসাম্যহীন। তাদের উদ্ধার করেছে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ।

মতলব দক্ষিণ উপজেলার নায়েরগাঁও দক্ষিণ ইউনিয়নের খিদিরপুর গ্রামে ছেলে ধরা সন্দেহে আমির হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে স্থানীয়রা। এছাড়াও কচুয়া উপজেলার গোহট উত্তর ইউনিয়নের পালগিরী গ্রামের কাচারি বাড়িতে এক অপরিচিত পাগলকে দেখে মানব পাচারকারী সন্দেহে লোকজন মারধর করে। কচুয়া থানা পুলিশের ওসি মো. ওয়ালী উল্লাহ ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে চাঁদপুরের একাধিক স্থানে এ ধরনের ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির। বিবৃতিতে তিনি বলেন, কতিপয় স্বার্থন্বেষী মহল পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা ও রক্ত লাগবে মর্মে বিভ্রান্তি ও গুজব ছড়াচ্ছেন। এ ধারাবাহিকতায় চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী কিংবা ভবঘুরে নারী-পুরুষদের আটক করে গণপিটুনি দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি ঘটনা চাঁদপুর পুলিশ বিভাগের নজরে এসেছে। যারা এর পেছনে আছে তাদের আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। গুজব ছড়ানোর পেছনে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

ইকরাম চৌধুরী/আরএআর/পিআর

Advertisement