টানা বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোমবার থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। দুপুর ২টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাছাড়া সুনামগঞ্জের সঙ্গে বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টানা বৃষ্টিপাতে সুনামগঞ্জ শহর, সদর উপজেলা, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, দিরাই, বিশ্বম্ভরপুর ও দোয়ারাবাজর উপজেলার শতাধিক ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এ অবস্থায় হাওর তথা নিম্নাঞ্চলের মানুষজন বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। নিম্নাঞ্চল এলাকায় পানি প্রবেশ করায় খাবার সংকটে দিন কাটছে মানুষের।
Advertisement
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুর এলাকার বাসিন্দা আফিয়া বেগম বলেন, বাড়িঘর সব পানি নিয়া নিছে। এখন আমরা চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় একটা ঘরে আইয়া উঠছি। এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সহযোগিতা পাই নাই।
একই এলাকার সেলিম মিয়া বলেন, গতকাল রাত থেকেই ঘরে পানি প্রবেশ করে। হাটু পানি হইয়া যাওয়ায় ছেলে-মেয়ে, বউ-বাচ্চা নিয়া এখন একটা দোকান ঘরে উঠছি। খাওয়ার কিছু নাই। চিড়া-গুড় খাইয়া দিন কাটে কোনো রকম।
এদিকে তাহিরপুর উপজেলা সঙ্গে সুনামগঞ্জের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ বড়দল, উত্তর শ্রীপুর, বাদাঘাট উপজেলার অধিকাংশ গ্রামই প্লাবিত হয়েছে। এতে করে ওই এলাকাগুলোর অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
Advertisement
তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর এলাকার বাসিন্দা জলিল আহমেদ বলেন, আমাদের গ্রামের অধিকাংশ ঘরই পানির নিচে। এতে করে আমরা খাবারসহ বিভিন্ন রকমের অসুবিধার মধ্যে পড়েছি।
অন্যদিকে জামালগঞ্জ উপজেলার সুরমা নদীর সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লোকজন। কোনো রকমের সহযোগিতা না পেলেও অনেকে নিজ উদ্যোগেই চলে যাচ্ছেন উঁচু কোনো দালান বা বিদ্যালয়ে। এই এলাকার প্রায় ২০ থেকে ২৫টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
জামালগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি অঞ্জন পুরকায়স্থ বলেন, জামালগঞ্জের সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো টানা বর্ষণের ফলে প্লাবিত হয়েছে। এ কারণে অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। খাবার, বাথরুমসহ অনেক সমস্যায় রয়েছেন এ এলাকার মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, জেলায় গেল ২৪ ঘণ্টায় ১৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যেখানে সুরমা নদীর সমতল ৮.০৪ মিটার। যা সুরমা নদীর বিপদসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপরে। তাছাড়া আবহওয়া অফিসের তথ্যমতে সুনামগঞ্জে আরো তিনদিন বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সুনামগঞ্জে আরও তিনদিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তাছাড়া বন্যা মোকাবেলায় প্রশাসনের সকল প্রস্তুতি রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলায় তিন লাখ টাকা, ২০০ মেট্রিক টন চাল এবং ৩ হাজার ৮০০ প্যাকেট শুকনা খাবার মজুত আছে বলেও জানান তিনি।
মোসাইদ রাহাত/আরএআর/এমকেএইচ