অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গত ৩ দিনের টানা বর্ষণের ফলে উজানে পাহাড়ি ঢলের পানিতে মহারশী নদীর দীঘিরপাড় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নদী তীরবর্তী ৩টি বাড়ি বিলিন হয়ে গেছে।
Advertisement
বাঁধের ভাঙন অংশ দিয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করে বুধবার ঝিনাইগাতী সদর, ধানশাইল ও কাংশা ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ওইসব এলাকার শত শত মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকদের বীজতলা। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।
সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কোচনীপাড়া-বাগেরভিটা রাস্তা বিধ্বস্ত হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
স্থানীয় অধিবাসী ও ইউপি চেয়ারম্যানর সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইগাতীর দিঘীরপাড়, রামনগর, চতল, আহম্মদনগর, বনকালি, ধানশাইল, কাংশা, হাতিবান্ধা, লয়খা, কামারপাড়া, পাগলার মুখ, দাড়িকালিনগর সহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কৃষকদের বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
Advertisement
সোমেশ্বরী নদীর পানিতে বাগের ভিটা, দাড়িয়ারপাড়, কান্দলী, কোচনীপাড়া, মাঝাপাড়াসহ নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলো প্লাবিত হওয়ায় এসব এলাকার রাস্তাঘাট, ছোট ছোট পুল-কালভার্ট, কাঁচা-পাকা বাড়িঘরগুলোর ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ভারী বর্ষণে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঝিনাইগাতী বাজার ও বাজার সংলগ্ন বাড়ি-ঘরে প্রবেশ করেছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা।
আহম্মদনগর এলাকার বাসিন্দা আজগর আলী ও রবিন মিয়া বলেন, গত তিন দিন ধরে ভারী বৃষ্টির ফলে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল এসে আহম্মনগর এলাকায় কয়েকটি বাড়িতে পানি ঢুকেছে। এতে আমরা সবাই বিপদে পড়েছি। এছাড়া রান্নার চুলা পানিতে ডুবে থাকায় প্রচুর ভোগান্তিতে রয়েছি।
ধানশাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, সোমেশ্বরী নদীর পানিতে বাগের ভিটা, দাড়িয়ারপাড়, কান্দুলী, কোচনীপাড়া, মাঝাপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঢলের পানির তোড়ে বাগেরভিটা- কোচনীপাড়া রাস্তা বিধ্বস্ত হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
গৌরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান মন্টু জানান, মহারশী নদীর পানির তোড়ে দীঘিরপাড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ৪টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। শতাধিক একর জমির বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
Advertisement
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বুধবার বিকেলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেন। নদীগর্ভে বিলিন হওয়া ৩ পরিবারকে তারা সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার হুমায়ুন কবির জানান, ৬৭০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। তন্মধ্যে ১৫ হেক্টর জমির বীজতলা পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. সিরাজুস সালেহীন জানান, পানিতে তলিয়ে কী পরিমাণ মাছের ক্ষতি হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ বলেন, পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চলের বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সরেজমিনে কিছু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্টদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
হাকিম বাবুল/এমএএস/পিআর