২০১১ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল, মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম। নুয়ান কুলসেকারার লেন্থ বল লং অন দিয়ে সজোরে হাঁকালেন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি, বল আছড়ে পড়লো গ্যালারিতে। তার সে ছক্কায় সৃষ্টি এক মাহেন্দ্রক্ষণ, যার জন্য ভারতবাসী অপেক্ষা করছিল ২৮ বছর ধরে।
Advertisement
১৯৮৩ সালে কপিল দেবের হাত ধরে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ জেতার পর যে অপেক্ষা শুরু হয়েছিল ভারতের, সেটির সমাপ্তি ঘটেছিল ধোনির ব্যাট থেকে সৃষ্ট সেই মাহেন্দ্রক্ষণে। ভারতকে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতিয়ে নায়ক বনেছিলেন ধোনি।
ঠিক একই পরিস্থিতি না হলেও, ৮ বছর পর ২০১৯ সালের বিশ্বকাপেও ধোনির সামনে সুযোগ ছিলো ভারতের নায়ক হওয়ার। কিন্তু তিনি এবার আর পারলেন না সেটি করতে, ব্যর্থ হয়েছেন দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে। সেবারের সাফল্যের নায়ক এবার হয়ে থাকলেন ট্র্যাজেডির নায়ক।
আট বছর আগের বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচটিতে সবাইকে অবাক করে দিয়ে পাঁচ নম্বরে নেমে পড়েছিলেন ধোনি। দলীয় ১১৪ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট পতনের পর, সবাই অপেক্ষা করছিল দুর্দান্ত ফর্মে থাকা যুবরাজ সিংয়ের মাঠে নামার। কিন্তু তখন অনেকটা নিজের একার সিদ্ধান্তে ব্যাটকে বগলদাবা করে ওয়াংখেড়ের ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে আসেন ধোনি।
Advertisement
পরে প্রমাণ করেন নিজের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতাও। চতুর্থ উইকেটে গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে গড়েন ১১৩ রানের জুটি। পরে গম্ভীর ৯৭ রান করে আউট হয়ে গেলেও, ধোনি শেষপর্যন্ত মাত্র ৭৯ বলে ৯১ রানে অপরাজিত থেকেই নিজ দেশকে জিতিয়ে দেন দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা।
সেবার ফাইনাল ম্যাচে হলেও, এবার ধোনির সামনে নায়ক হওয়ার সুযোগ ছিলো সেমিফাইনাল ম্যাচটিতে। পুরো বিশ্বকাপজুড়ে মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্য সমালোচিত ধোনি, এ ম্যাচটিতে ঝেরে ফেলতে পারতেন সকল নিন্দা ও কটু কথা।
কিন্তু কিসের কি! এবার যেন সে ইচ্ছাই ছিলো না তার। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে যেখানে ইনফর্ম যুবরাজকে রেখে নেমে পড়েছিলেন তিনি, সেখানে এবার একের পর এক উইকেট পড়ার পরেও দেখা মিলছিল না ধোনির। অবশেষে মাত্র ৭১ রানের মাথায় ৫ উইকেট পতনের পর নামেন তিনি, খানিক পরেই ৯২ রানের মাথায় ষষ্ঠ উইকেট হারায় ভারত।
এরপর সপ্তম উইকেটে রবিন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে গড়েন ১১৬ রানের জুটি। ডুবতে থাকা দলকে আশার আলো দেখিয়ে জাদেজা খেলেন ৫৯ বলে ৭৭ রানের জুটি। যতক্ষণ জাদেজা উইকেটে ছিলেন, ততক্ষণ খুব একটা হাত খুলে মারেননি ধোনি।
Advertisement
পরে দলীয় ২০৮ রানের মাথায় জাদেজা আউট হওয়ার পরেও কাজের কাজটি করতে পারেননি তিনি। তবে ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে লকি ফার্গুসনকে পয়েন্ট অঞ্চল দিয়ে ছক্কা মেরে ২০১১ সালে ৪৩তম ওভারে থিসারা পেরেরাকে একইভাবে ছক্কা হাঁকানোর স্মৃতি ফিরিয়ে আনেন ধোনি।
কিন্তু সেবারের মতো আর হাসিমুখে সাজঘরে ফিরতে পারেননি তিনি। একই ওভারের তৃতীয় বলে দ্রুত একটি ডাবল নিতে রানআউটে কাটা পড়েন ধোনি, একইসঙ্গে শেষ হয়ে যায় ভারতের সেমিফাইনাল জেতার সকল সম্ভাবনা। আউট হওয়ার আগে নিজের ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নিয়েছেন ধোনি কিন্তু পারেননি নিজের ব্যাটে আরও একবার মাহেন্দ্রক্ষণ সৃষ্টি করতে।
এসএএস/পিআর