ফেনীর আলোচিত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়েছেন নুসরাতের মা শিরিন আক্তার।
Advertisement
বুধবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে এ ঘটনা ঘটে। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আদালতে সাক্ষ্য ও জেরার শেষ পর্যায়ে এসে শিরিন আক্তার উত্তেজিত হয়ে কাঁপতে থাকেন। একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে তাকে ফেনী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
শিরিনা আক্তারের ছেলে মাহমুদুল হাসান নোমান ও মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু জানান, বুধবার মামলার ১২ নম্বর সাক্ষী, নুসরাতের মা শিরিনা আক্তারের সাক্ষ্য ও জেরার দিন ধার্য ছিল। এদিন বেলা সোয়া ১১টায় তিনি সাক্ষ্য দেয়া শুরু করেন। সাড়ে ১২টার দিকে তার সাক্ষ্য শেষ হলে তাকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু, কামরুল হাসান, মাহফুজুল হক, ফরিদ উদ্দিন খান নয়ন, নুরুল ইসলাম ও আহসান কবির বেঙ্গলসহ কয়েকজন আইনজীবী। দুপর আড়াইটা পর্যন্ত একটানা জেরা চলছিল। এ সময় উত্তেজিত হয়ে কাঁপতে থাকেন শিরিনা আক্তার। এক পর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন।
Advertisement
অসুস্থ হয়ে পড়লে তার ছেলে নোমান ও বাদী পক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজুসহ সেখানে থাকা কয়েকজন স্বজন তাকে কোলে করে নিচে নিয়ে আসেন এবং সোনাগাজী থানা পুলিশ ও আদালত পুলিশের সহযোগিতায় আইনজীবীর গাড়িযোগে ফেনী সদরের রাজাঝীর দিঘীর পাড়ের ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন বুধবার বিকেলে বলেন, তিনি (শিরিনা) অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। উত্তেজিত হয়ে পড়ার কারণে এমনটা হতে পারে। তবে কিছু সময়ের মধ্যেই তার জ্ঞান ফিরে আসে। তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তিনি সুস্থ আছেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, উনি আগে থেকেই কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। তাই বিচারক তাকে সাক্ষীর ডকে দাঁড় না করিয়ে নিজের কাছাকাছি একটি স্থানে বসান এবং অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে তার সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। কিন্তু আসামি পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে কয়েকজনের কিছু প্রশ্নে তিনি উত্তেজিত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
খবর পেয়ে ফেনী হার্ট ফাউন্ডেশনে নুসরাতের মাকে দেখতে যান পুলিশ সুপার খন্দকার নুরুন্নবী। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ারে পর তিনি এখন সুস্থ্য আছেন। অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও ডায়াবেটিকস সুগার নিল হওয়ায় তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান।
Advertisement
আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় এই মামলার ১৪ নম্বর শেখ আব্দুল হালিম মামুন, ১৫ নং মো. আবু ইউসুফের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য তারিখ ধার্য রাখা হয়েছে।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টার সেন্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।
এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
এ মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তদন্তে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় পাঁচজনকে অব্যাহতি দিয়ে ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেয় পিবিআই। আদালত তা অনুমোদন করেন।
এছাড়া যৌন হয়রানির মামলার পর নুসরাতের জবানবন্দি গ্রহণের সময় ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সাইবার অপরাধ আইনে মামলা হয়। ওই মামলায় সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
রাশেদুল হাসান/এমবিআর/জেআইএম