জাতীয়

দুই সন্তানের নীতিতেই থাকবে সরকার

সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে দুই সন্তানের নীতিতেই থাকবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন উপলক্ষে বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের আইইএম (ইনফরমেশন, এডুকেশন অ্যান্ড মোটিভেশন) ইউনিটের পরিচালক আশরাফুরন্নেছা এ কথা জানান।

Advertisement

সরকার এক না দুই সন্তানের নীতিতে থাকছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্লোগানটা হচ্ছে- ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট। সরকার দুই সন্তানের নীতিতেই থাকবে। এক সন্তানের যেটি আছে, সোশ্যালাইজেশন প্রসেসের মধ্যে এর একটা ত্রুটি থেকে যায়। আমরা যে ব্যালান্স সোসাইটির কথা বলছি, সেখানে ছেলে-মেয়ে, মেয়ে-ছেলে দুজন মিলে শেয়ারিং কেয়ারিং ও আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের বিষয়টি এনশিওর করা যায়। যেখানে সোশ্যালাইজেশন প্রক্রিয়াটা ব্যাহত হবে না। ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট- এটাই আমাদের স্লোগান।’

১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উদযাপিত হবে জানিয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘টোয়েন্টি ফাইভ ইয়ারস অব দ্য আইসিপিডি : অ্যাসেলারেটিং দ্য প্রমিজ’ যার ভাবানুবাদ করা হয়েছে ‘জনসংখ্য ও উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ২৫ বছর : প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়ন’।

কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা এবং ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সকাল সাড়ে ১০টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব।

Advertisement

তিনি বলেন, আগামী ১২-১৪ নভেম্বর কেনিয়ার নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত হবে ‘নাইরোবি সামিট। এই সামিটের সামগ্রিক প্রতিপাদ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবারের বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে।’

১৯৯৪-২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৫ বছরে বিশ্বব্যাপী মা ও শিশু স্বাস্থ্য কার্যক্রমে লক্ষণীয় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই জানিয়ে সচিব বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ১৯৯৪ সালে যেখানে মাত্র ১৫ শতাংশ নারী আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করত, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৭ শতাংশ হয়েছে। বাংলাদেশে এ হার বর্তমানে ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ।’

‘২৫ বছর আগে স্বল্পোন্নত দেশে প্রতি ১ হাজার নারীর মধ্যে আটজন নারী গর্ভকালীন বা প্রসবকালীন সময়ে মারা যেত। বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০০৪ সালে ছিল ৩ দশমিক ২০ জন, যা বর্তমানে কমে ১ দশমিক ৬৯ হয়েছে। স্বল্প আয়ের দেশে ২৫ বছর আগে একজন নারী কমপক্ষে ছয়টি সন্তান জন্ম দিত, যা বর্তমানে চার-এর নিচে নেমে এসেছে। বাংলাদেশে এ হার বর্তমানে ২ দশমিক শূন্য ৫ জন।’

আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘এসব অর্জন সত্ত্বেও কায়রোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আরও এগিয়ে যেতে হবে এবং সেই সঙ্গে আমাদের কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে। তিনটি বিষয় বা শূন্য এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, পরিবার পরিকল্পনার তথ্য ও সেবার অপূর্ণ চাহিদার হার শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা। দ্বিতীয়ত, কোনো নারী সন্তান জন্মদানকালে মারা যাবে না অর্থাৎ প্রতিরোধযোগ্য মাতৃমৃত্যুর হার শূন্য। তৃতীয়ত, মেয়ে ও নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন হয়রানির প্রবণতা বন্ধ হওয়া।’

Advertisement

গত ১ এপ্রিল জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত ‘জনসংখ্যা ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৫২তম কমিশনে বাংলাদেশ সাউথ সাউথ সহযোগিতা কাজে লাগিয়ে আইসিপিডির (ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) লক্ষ্য অর্জনে কতটুকু প্রস্তুত তা তুলে ধরে বলে জানান সচিব।

গত ২৫ বছরের তুলনায় এর আগের ২৫ বছরে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সূচকে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। যদিও গত ২৫ বছরে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ বেশি সুবিধা ভোগ করেছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম দিকে জনসচেতনতা বাড়ানোই মূল কাজ ছিল। সেটা করার পরে একটা পর্যায় পর্যন্ত আমরা দ্রুত সাফল্য পেয়েছি। পরের ধাপে সাফল্য একটু কঠিন। এটার সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত।’

তিনি আরও বলেন, ‘কম জনসংখ্যা হলেই ভালো না আবার বেশি জনসংখ্যা হলেই খারাপ না- বিশ্বব্যাপী এই ধারণারও পরিবর্তন হয়েছে।’

আরএমএম/এসআর/জেআইএম