জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এবং বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের (বিসিসিটিএফ) আওতায়। এর মধ্যে এডিপির তুলনায় বিসিসিটিএফ কম কার্যকর বলে এক গবেষণায় তুলে ধরেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
Advertisement
আজ (বুধবার) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ‘জলবায়ু ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য নিরূপণ : কোনটি অধিক দক্ষ, কার্যকর ও স্বচ্ছ?’ শীর্ষক ওই গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
গবেষণাটি করেছেন ড. এ কে এনামুল হক, ইশতিয়াক বারী ও ড. রুমি শামিন। এর উপদেষ্টা ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং উপদেষ্টা নির্বাহী ব্যবস্থাপক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়েব।
বিসিসিটিএফ মূলত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় পরিচালনা করে থাকে। অন্যদিকে সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালিত ও বাস্তবায়িত হয়।
Advertisement
গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে এনামুল হক বলেন, প্রকল্পগুলোর উপকারভোগীসহ বিভিন্ন অংশীজনের মতে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে গৃহীত ও বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো অপেক্ষাকৃত বেশি কার্যকর। আর বৈদেশি সাহায্যের মূল্যায়নে ব্যবহৃত ডিএসি মানদণ্ডের সঙ্গে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ।
গবেষণার ফলের ভিত্তিতে টিআইবির সুপারিশ হলো- বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অধীনে বাস্তবায়নরত বা পরিকল্পনাধীন নতুন প্রকল্পগুলো যদি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন ও তদারকি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, তবে তা অধিকরত কার্যকর হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত ধনী দেশগুলো প্রায় ৩০ দশমিক ৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার দেয়ার অঙ্গীকার করলেও এর বিপরীতে প্রকৃত অর্থে ২৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ইউএস ডলার প্রদান করেছে। প্রদত্ত তহবিল থেকে ১৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য অনুমোদিত হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মাত্র ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার ছাড় করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গবেষক এনামুল হক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল পেতে হলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে গৃহীত এসব জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলামূলক কার্যক্রম সুনির্দিষ্ট এবং আলাদা করতে হবে।’
Advertisement
আলাদা না করতে পারলে আন্তর্জাতিক তহবিল পাওয়া যাবে না বলেও মনে করেন এনামুল।
এই জরিপটি বাংলাদেশের চারটি উপকূলীয় জেলা বরগুনা, ভোলা, কক্সবাজার ও সাতক্ষীরার ৩১টি প্রকল্প এলাকায় পরিচালিত হয়। জরিপের আওতায় ১৭টি জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড ও ১৪টি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে বাস্তবায়িত বা বাস্তবায়নরত প্রকল্পের অংশীজন এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট স্থানীয় জনগণের মোট ৩৯০ জন উত্তরদাতার মতামত গ্রহণ করা হয়।
এডিপি ও বিসিসিটিএফের অধীনে বাস্তবায়িত বা বাস্তবায়নরত প্রকল্পগুলোর মধ্যে কতটুকু সামঞ্জস্য বা ভিন্নতা রয়েছে, তা নিরূপণের জন্য বেশ কয়েকটি মানদণ্ডে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মতামতকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। মতামত বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে প্রকল্পগুলোর চার ধরনের প্রভাবকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সেগুলো হলো অর্থনৈতিক, দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক উন্নয়ন এবং জলবায়ু সহিষ্ণু সক্ষমতা তৈরি ও পরিবেশের ওপর প্রভাব।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্র প্রভাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি এবং গরিব জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধিতে জলবায়ু পরিবর্তন কার্যক্রমের তুলনায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো অধিকতর সহায়ক ও কার্যকর।
দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক উন্নয়ন এবং জলবায়ু সহিষ্ণু তৈরি ও পরিবেশের ওপর প্রভাবের অন্তর্গত সূচকের ক্ষেত্রে এডিপি ও বিসিসিটিএফের মধ্যে কোনো ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়নি এ গবেষণায়।
তবে গবেষণায় অংশগ্রহণকারী অধিকাংশজন মনে করেন, উন্নয়ন প্রকল্পের তুলনায় বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অধীনে বাস্তবায়িত বা বাস্তবায়নরত প্রকল্পগুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনা স্বচ্ছ। তবে শেষ করা কাজের মান গ্রহণযোগ্য নয় বলে গবেষণায় উঠে এসেছে বলে জানায় টিআইবি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা ইতোমধ্যে দেখছি, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের বড় অংশই দরিদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ। তারা উন্নয়নের সুযোগ-সুবিধা থেকে তুলনামূলকভাবে বঞ্চিত। সব জায়গা থেকে প্রাপ্ত অর্থ ও এ অর্থের ব্যবহার সুষ্ঠুভাবে হোক, সেটা আমরা দেখতে চাই।’
পিডি/এনএফ/পিআর