ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, মোবাইল অপরাটরদের মধ্যে দুটির অডিট হয়েছে (গ্রামীণফোন ও রবি) এবং অন্য যারা আছে তাদেরও অডিট হবে। পাওনা আদায় করার জন্য কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Advertisement
তিনি বলেন, মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন এবং রবির দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে সরকারের পাওনা রয়েছে। এই পাওনা আদায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এর সর্বশেষ পদক্ষেপটি হচ্ছে, তাদের যে ব্যান্ডউইথ রয়েছে গ্রামীণের জন্য তার ৩০ ভাগ ও রবির জন্য ১৫ ভাগ গ্যাপিং (কমিয়ে দেয়া) করা হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে, অবিলম্বে যেন তারা পাওনা পরিশোধ করে।
মঙ্গলবার সংসদে বেসরকারি মোবাইল অপারেটরদের কাছে সরকারের পাওনা আদায়ের ব্যবস্থা বিষয়ে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী একথা বলেন।
আরও পড়ুন > ৫ টাকার বেশি ধার নিতে পারবেন না মোবাইল গ্রাহকরা
Advertisement
মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের জন্য এটা দুঃখজনক যে, আমরা কোনো অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাই- তারা যখন আদালতে গেলে পুরো প্রসেসটাই বিলম্বিত হয়ে যায়। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে এই বকেয়াটা রয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের শামীম ওসমানের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, গ্রামীণফোন বা রবিসহ বাংলাদেশে মোবাইল ও ইন্টারনেট অপারেশনে যেসব সংস্থাগুলো কাজ করে তারা সরকারকে বিভিন্নভাবে যে কর দেয়, তা তাদের গ্রস রেভিনিউর শতকরা প্রায় ৫০ শতাংশ। আমরা অডিট করতে গিয়ে গ্রামীণফোন ও রবির ক্ষেত্রে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি যে, এই পাওনাটা হচ্ছে প্রচলিত পদ্ধতিতে। তারা যেভাবে সরকারকে রাজস্ব দিয়ে আসছিল তার বাইরে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কর ফাঁকি দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। অডিট করতে গিয়ে এই কর ফাঁকির বিষয়টি উদ্ধার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে গ্রামীণের কথা উল্লেখ করতে গেলে বলা যায়- তাদের কাছে মূল পাওনা আসলে চার হাজার কোটি টাকার মতো। কিন্তু যেহেতু তারা এই কর দেয়নি এবং এক্ষেত্রে তার সারচার্জ এবং সুদ সবকিছু মিলিয়ে ১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন > মোবাইলে ১০০ টাকার কথা বললে কেটে নেবে ২৭ টাকা
তিনি বলেন, ধরা যাক অর্থ প্রদান না করার জন্য গ্রামীণফোনের লাইসেন্স বাতিল করে দিলাম। কিন্তু এতে চাপটি পড়বে দেশের জনগণের ওপর। ফলে জনগণের ব্যবস্থাটি সঠিক রেখেই তারপরে যেন আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারি সেটি চিন্তা করতে হয়। এটা ঠিক আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটক বিকল্প হিসেবে দাঁড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করতে পারলে তাহলে যে কারো বিরুদ্ধেই কঠোরতম পদক্ষেপ নেয়ার সম্ভব ছিল। তারপরেও রাষ্ট্রীয় অর্থ আদায় করার জন্য আমরা আইনগত দিক থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবস্থা সবকিছুর জন্য সফল পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।
Advertisement
মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমাদের উপলব্ধি করার বিষয় হওয়া উচিত যে, টেলিটকের মতো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কী কারণে সক্ষমতা অর্জনের ধারে কাছেও যেতে পারেনি। বরং বাংলাদেশের মোবাইল মার্কেটের তলানিতে বসে আছে।
তিনি বলেন, একটু তুলনা করলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে যে, গ্রামীণফোন বাংলাদেশে ৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। আর গত বছর পর্যন্ত আমি হিসেব নিয়ে দেখেছি টেলিটকের বিনিয়োগ ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, এক সময়কার বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ডকে (বিটিটিবি) ভেঙে যে কয়টি কোম্পানি করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি বিটিসিএল, যেটি ফিক্সট ফোনের জায়গায়। আর টেলিটক মোবাইল অপারেটরের কাজ করছে। এই জায়গটার ক্ষেত্রে ভেঙে ভেঙে কোম্পানি করার যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে- মাননীয় সংসদ সদস্যের সাথে আমি একমত হয়ে মনে করি, একত্রিতভাবে দুটি প্রতিষ্ঠান থাকলে তার শক্তি অনেক বেশি হতে পারবে।
তবে ভালো খবর হচ্ছে, গত দেড় বছরে টেলিটকের যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে, তাতে আমরা প্রত্যাশা করতে পারি এর দুর্বল অবস্থা অচিরেই কাটিয়ে উঠবে। টেলিটকের সাথে বেশ কয়েকটি দেশ বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করছে উল্লেখ করে তা পর্যালোচনা পর্যায়ে আছে বলেও মন্ত্রী জানান।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে যার সাথে হ্যান্ডশেক করা সুবিধাজনক হবে নিশ্চয়ই আমরা গ্রহণ করবো। একই সঙ্গে বিটিসিএল এর যেসব প্রযুক্তিগত সুবিধা রয়েছে তাতে টেলিকটকে সম্পৃক্ত করা গেলে এতে উভয় প্রতিষ্ঠান উপকৃত হবে। এই বিষয়ের প্রতি আমরা নজর দিচ্ছি।
এইচএস/এমএসএইচ/জেআইএম