রাজধানীর আজিমপুর গোরস্থান মেয়র হানিফ জামে মসজিদের প্রধান খাদেমকে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন সাইফুল।
Advertisement
মঙ্গলবার সাইফুলকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় তার জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম জসিম উদ্দিন তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) একটি বিশেষ টিম চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আগ্রাবাদ এলাকার বেপারীকান্দির ওই ফুফুর বাসার দরজা ভেঙে সাইফুলকে গ্রেফতার করে। হানিফ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা চাকুও উদ্ধার করা হয়।
Advertisement
গত ৩ জুলাই রাতে ওই মসজিদ থেকে একটি গলিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা চাঞ্চল্য ছড়ায়। পরে জানা যায়, ওই মরদেহ মসজিদেরই প্রধান খাদেম আবু হানিফের।
পিআইবি প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘আজিমপুর গোরস্থান মেয়র হানিফ জামে মসজিদটি গত বছরের ৪ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়। সেদিন থেকে সাইফুল ইসলাম খাদেম হিসেবে যোগ দেন। মসজিদে আরও তিনজন খাদেম ও একজন পরিচ্ছন্নকর্মী কর্মরত ছিলেন।
তবে সাইফুল সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় কর্তৃপক্ষ গত রমজানের আগে আবু হানিফকে প্রধান খাদেম হিসেবে নিয়োগ দেয়। হানিফ তার দায়িত্ব পালনকালে সাইফুলকে বিভিন্ন কাজের জন্য নির্দেশ দিতেন। কর্তৃপক্ষকে হানিফ বিভিন্ন সময় সাইফুলের দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টি জানাতেন। এ নিয়ে আসামি সাইফুলের সঙ্গে ভিকটিম হানিফের মনোমালিন্য দেখা দেয়।
গত ২ জুলাই জোহরের নামাজের পরে বিকেল ৩টার দিকে হানিফ সাইফুলকে কাজ করতে বলায় সাইফুল অস্বীকৃতি জানালে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। ওই ঘটনার পরই সাইফুল পরিকল্পনা করে প্রধান খাদেম আবু হানিফকে হত্যা করেন।
Advertisement
মরদেহ বস্তায় ঢুকিয়ে পলিথিন দিয়ে পেঁচিয়ে ঝুড়িতে রাখার পর বাথরুম থেকে বালতিতে পানি এনে তোশকের কভার ভিজিয়ে ফ্লোরের রক্ত পরিষ্কার করেন। রাত ৯টার দিকে সাইফুল বাইরে খেতে যান এবং ১০টার দিকে রুমে ফিরে আসেন।
বাহাউদ্দিন (ঝাড়ুদার) ও ফরিদ (খাদেম) বাইরে থেকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে রুমে ফিরে এসে জানতে চান খাদেম হানিফ কোথায়। সাইফুল জানান, তিনি বাইরে গেছেন।
পরিকল্পনা ছিল গভীর রাতে প্রধান খাদেম হানিফের মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানের যেকোনো ভাঙা কবরে ফেলে দেয়া হবে। কিন্তু খাদেম ফরিদ অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকায় সাইফুল সিদ্ধান্ত বদলান। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি খাদেম ফরিদকে বলেন, তার বাবা মারা গেছে। এই বলে তিনি তার সব ব্যবহার্য জিনিসপত্র নিয়ে চলে যান।
৩ জুলাই রাতে ক্লিনার বাহাউদ্দিন ও নতুন নিয়োগকৃত খাদেম ফরিদ নিহত খাদেম হানিফের কক্ষে ঘুমাতে যান। সেই সময় তারা দুর্গন্ধ পেয়ে পাশের বেলকোনির থাই গ্লাস টান দিয়ে একটি বাঁশের খালি ঝুড়ির মধ্যে পলিথিন দিয়ে পেঁচানো একটি বস্তা দেখতে পান। পরে সেটি খুলে তারা খাদেম হানিফের মরদেহ শনাক্ত করেন।
পিবিআই জানায়, নিহত হানিফ পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। আড়াই বছর আগে তিনি বিয়ে করেন। তার তিন মাসের একটি মেয়ে আছে।
হানিফ হত্যায় শ্বশুর জাকির শেখ (৬০) বাদী হয়ে লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ৬।
জেএ/জেএইচ/পিআর