বিশ্বকাপের পর্দা নামবে ১৪ জুলাই ক্রিকেট ‘মক্কা’ লর্ডসে। এখন সামনে সেমির যুদ্ধ। আগামী ৯ জুলাই ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ভারত-নিউজিল্যান্ড আর ১১ জুলাই বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মধ্যে হবে সেমির লড়াই।
Advertisement
কিন্তু অনেক সম্ভাবনার প্রদীপ জ্বালিয়েও বাংলাদেশ পারেনি শেষ চারে জায়গা করে নিতে। শেষ পর্যন্ত না পাওয়ার হতাশা নিয়েই দেশে ফিরছেন টাইগাররা। তবে বাংলাদেশ দলের দেশে ফেরার আগেই কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
প্রথম প্রশ্ন অবশ্যই মাশরাফির অবসর নিয়ে। এ বিষয়ে মাশরাফি নিজ মুখ থেকে ঘটা করে কিছু বলছেন না। তবে বলেছেন, আরও কিছুদিন খেলতে চান এবং এটা নিশ্চিত মাশরাফি চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে শ্রীলঙ্কায় যে তিন ম্যাচের সিরিজ হবে, তাতে অংশ নেবেন। একই সঙ্গে অবসরের বিষয়ে টাইগার অধিনায়ক হাবভাবে পরিষ্কার করছেন, তিনি দেশের মাটিতে সবার সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নিতে চান এবং সেটা কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ থেকেই।
প্রশ্ন নম্বর দুই : হেড কোচ স্টিভ রোডসের ভবিষ্যৎ কি? তিনি কি স্বপদে বহাল থাকবেন? বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কি তাকে আগামীতেও কোচের দায়িত্বে বহাল রাখতে আগ্রহী?
Advertisement
প্রশ্ন নম্বর তিন : ফাস্ট বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ আর স্পিন কোচ সুনিল জোসির চুক্তির মেয়াদ শেষ। তাদের চুক্তি কি আবার বাড়ানো হবে? মানে চুক্তি নবায়ন করে আগামী দিনেও কি ওয়ালশ আর জোসিকে রেখে দিবে বিসিবি?
কোচের বিষয়ে প্রশ্নগুলোই এখন যত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কেউ এখন পর্যন্ত কোচ স্টিভ রোডসের পারফরম্যান্স নিয়ে কোনো তীর্যক মন্তব্য না করলেও ভিতরের খবর, তার কাজকর্মে তেমন সন্তুষ্ট নন বোর্ড নীতিনির্ধারকরা।
ইংলিশ হওয়ার পরও ইংল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপে স্টিভ রোডস তেমন কোনো ইনপুট দিতে পারেননি। উল্টো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে উইকেটের আচরণ ও চরিত্র এবং গতি-প্রকৃতি ভুল করে দলকে ভুল বার্তা পাঠিয়ে বিপর্যয় ত্বরান্বিত করেছিলেন। সেটা খুব বড়সড় বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ম্যাচের পরই জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য এক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল, ইংলিশ কোচ ইংল্যান্ডের পিচ সম্পর্কে ভুল ধারণ পোষণ করলে, তাকে রাখার যৌক্তিকতা কি?
Advertisement
জানা গেছে সেটাও বোর্ডের অভ্যন্তরে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। বোর্ড কর্তারাও নিজেদের মধ্যে বলাবলি করেছেন, সত্যিই তো। ইংলিশ কোচ যদি ইংল্যান্ডের পিচ চিনতে ভুল করেন, তাহলে আর তাকে রেখে লাভ কি?
বলার অপেক্ষা রাখে না, নিউজিল্যান্ডের সাথে হারটিই আসলে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলতে না পারার সবচেয়ে বড় কারণ। তাই বোর্ডে সেই ম্যাচে কোচের পাঠানো ভুল বার্তাটির চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যে উইকেটকে মাশরাফি খেলা শেষে ২৭০ রানের উইকেট বলে অভিহিত করেছেন, সেই উইকেটকে সাড়ে তিনশ’র পিচ বলে ব্যাটসম্যানদের হাত খুলে খেলতে বলেছিলেন স্টিভ রোডস। যে বার্তাটি ‘বুমেরাং’ হয়েছে।
আভাস মিলেছিল হয়তো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটিই স্টিভ রোডসের শেষ সিরিজ হতে পারে। ধারণা করা হয়েছিল নতুন কোচ নিয়োগ না দিয়ে কিংবা একজন হাই প্রোফাইল কোচ না পেয়ে, তার সাথে কথাবার্তা চূড়ান্ত না করে সহসাই রোডসকে অব্যাহতি পত্র দেবে না বিসিবি।
কিন্তু আজ (সোমবার) হুট করেই বদলে গেল সব দৃশ্যপট। হেড কোচ স্টিভ রোডসের সঙ্গে লম্বা আলোচনা পর্ব শেষ করে, শ্রীলঙ্কা সফরের আগেই বাংলাদেশের কোচিং প্যানেলে বড় রদবদল এনেছে বিসিবি। বিদায় জানিয়ে দেয়া হয়েছে প্রায় সবাইকে।
শুধুমাত্র ব্যাটিং কোচ নেইল ম্যাকেঞ্জি এবং ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুককে স্বপদে বহাল রেখেছে বিসিবি। সমঝোতার মাধ্যমে বিদায় জানানো হয়েছে হেড কোচ স্টিভ রোডসকে এবং চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ, স্পিন বোলিং কোচ সুনিল জোসি এবং ফিজিও থিহান চন্দ্রমোহনের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেনি বোর্ড।
এদিকে ম্যাকেঞ্জিকে তার দায়িত্বে রেখে দেয়া হলেও, চলতি মাসের শেষদিকে ব্যক্তিগত কারণে শ্রীলঙ্কা সফরে থাকবেন না নেইল ম্যাকেঞ্জি। সে সফরে প্রধান কোচ কে হবেন, সে ব্যাপারেও কিছু জানানো হয়নি বোর্ডের পক্ষ থেকে।
এআরবি/এসএএস/এমএস