লাইফস্টাইল

যে ১০টি নিয়ম আপনার শরীরকে সুস্থ রাখবে

সুস্থ থাকার গুরুত্ব কেবল অসুস্থ হলেই বোঝা যায়। যখন আপনি অসুস্থ ও ক্লান্ত শরীরে বিছানালগ্ন হয়ে থাকবেন, তখন নিজেকে সবচেয়ে বেশি অসহায় মনে হবে। সবচেয়ে ভালো হয়, সবসময় সুস্থ থাকার চেষ্টা করলে। এই সুস্থতা নিজে থেকেই বজায় থাকবে, যদি আপনি ঠিকভাবে নিজের যত্ন নেন, নিজের খেয়াল রাখেন! দৈনন্দিন জীবনে কিছু কাজই আপনাকে এমনিতেই সুস্থ রাখবে। শুধু কিছু অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়তে হবে-

Advertisement

১. খাদ্য তালিকায় থাকুক নানা রকমের খাবার: সুুস্বাস্থ্যের জন্য আমাদের ৪০ রকমের নিউট্রিয়েন্টসের দরকার হয়। কোনো একক খাবার তা দিতে পারে না। তাই সুষম খাবার খেতে হবে। তৈলাক্ত ভারি খাবার দুপুরের খাবার তালিকায় থাকলে রাতের খাবার সারতে পারেন অল্প তেলে রান্না করা খাবারে। আগের রাতে মাংসটা একটু বেশি খাওয়া হলে পরের দিনের তালিকায় মাছ রাখুন।

২. ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার রাখুন: ডায়েটের অর্ধেকের বেশি ক্যালরি আসা উচিত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন সেরেল, পাস্তা, ভাত ও রুটি থেকে । প্রতিবার খাবার সময় এদের যেকোনো একটি থাকলে ভালো। পূর্ণ দানা থেকে তৈরি রুটি, সেরেল, পাস্তা আঁশ জাতীয় খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।

৩. স্যাচুরেটেড ফ্যাটের বদলে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ভরা খাবার খান: চর্বি বা ফ্যাট সুস্বাস্থ্য এবং দেহকে ঠিকঠাকভাবে কাজ করানোর জন্য বেশ জরুরি। কিন্তু এর বাহুল্য ওজন ও হৃদধমনীর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফ্যাটের ভিন্নতা ভেদে স্বাস্থ্যের উপর রয়েছে এর ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব এবং এরকম কিছু টিপস আমাদের সঠিক ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করবে।

Advertisement

আমাদের অপ্রক্রিয়াজাত বা স্যাচুরেটেড ফ্যাট (যা প্রাণিজ খাবার থেকে পাওয়া যায়), যা সহজে হজম হয় না ও শরীরে জমতে থাকে, এমন খাবার খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। ট্রান্স ফ্যাট বা অপ্রক্রিয়াজাত চর্বি একেবারে খাওয়া উচিত না। খাবারের গায়ে লেবেল পড়লেই এসম্পর্কে জানা যাবে।

সপ্তাহে ২/৩ বার মাছ এবং কমপক্ষে একবার তৈলাক্ত মাছ খাওয়া আমাদের সঠিক মাত্রায় আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণে ভূমিকা রাখবে। ভাজাভুজির বদলে সেদ্ধ, ভাপা বা বেক করা খেতে চেষ্টা করুন। মাংসের চর্বি জাতীয় অংশ ফেলে দেবেন এবং ভেজিটেবল অয়েলে রান্না করুন।

৪. প্রচুর ফল ও শাকসবজি খান: ফল ও শাকসব্জি থেকে আমরা খনিজ, ভিটামিন ও আঁশজাতীয় খাবার পেয়ে থাকি। দিনে ৫ বার আমাদের এসব খাওয়া উচিত। যেমন: সকালের নাশতায় থাকতে পারে এক গ্লাস জুস অথবা একটি আপেল বা এক ফালি তরমুজ। অন্যান্য বেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে নানা জাতীয় সবজি।

৫. লবণ ও চিনি কম খান: বেশি লবণ খেলে রক্তচাপ বাড়বার সাথে সাথে হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ে। লবণ খাওয়া কমাতে কম সোডিয়াম আছে এমন খাবার কিনুন। রান্নায় লবণের বদলে নানা ধরণের ও স্বাদের মশলা ব্যবহার করুন এবং খাবারের টেবিলে লবণদানি না রাখাই ভালো।

Advertisement

৬. নিয়মিত খান, পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন: স্বাস্থ্যকর ডায়েটের সেরা ফর্মুলা হচ্ছে বাহারি খাবার নিয়মিত ও সঠিক পরিমাণে খাওয়া। ঠিকমতো খাবার না খেলে তা অনিয়ন্ত্রিত ক্ষুধা নিয়ে আসে যার ফল হচ্ছে অতিভোজন। ভরপেট খাবার খাওয়ার মাঝে হালকা নাস্তা খেতে পারেন যা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। নাস্তা হিসেবে আমরা বেছে নিতে পারি দই, একমুঠো রসালো বা শুকনো ফল, লবণ ছাড়া বাদাম বা পনির মাখানো এক টুকরো রুটি।

৭. প্রচুর পানীয় পান করুন: কর্মক্ষম বয়স্ক মানুষের দৈনিক ১.৫ লিটার বা তার বেশি তরল খাবার খাওয়া উচিত। পানি হচ্ছে সেরা তরল, চাইলে ট্যাপ বা মিনারেল, সাদামাটা বা ফ্লেভারযুক্ত পানি আমরা পান করতে পারি। সময় সময় ফলের রস, চা, সফট ড্রিংকস, দুধ ও অন্যান্য পানীয়ও চলতে পারে।

৮. সঠিক ওজন বজায় রাখুন: লিঙ্গ, বয়স, উচ্চতা এবং জিনের উপর নির্ভর করছে আমাদের সঠিক ওজন। অতিরিক্ত ওজন নানা রোগের ঝুুঁকি যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। অতিভোজন থেকেই অতিরিক্ত বডিফ্যাট তৈরি হয়। আমিষ, চর্বি, কার্বোহাইড্রেট বা মদ- এসব খাবার থেকে অতিরিক্ত ক্যালরি আসতে পারে তবে চর্বিতে শরীরের সবচেয়ে বেশি শক্তি ঘন হয়ে জমা থাকে। শারীরিক কর্মকান্ড আমাদের শক্তি ক্ষয় করে ও আমাদের ভালো রাখে। ওজন বাড়তে থাকলে কম খান এবং শারীরিক পরিশ্রম করুন।

৯. কায়িক শ্রমকে অভ্যাসে পরিণত করুন: শারীরিক কর্মকান্ড সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের অতিরিক্ত ক্যালরি পোড়াতে, হৃদযন্ত্র ও রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থা ভালো রাখতে, পেশীর বৃদ্ধিতে এবং স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ভূমিকা রাখে। আপনাকে অসাধারণ এথলেট হতে হবে না। সপ্তাহে ১৫০ মিনিটের শারীরিক কর্মকান্ড যথেষ্ট, যা সহজেই আমাদের দৈনন্দিন রুটিনে ঢুকিয়ে দেয়া যায়।

লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। দুপুরের খাবারের বিরতিতে হাঁটুন বা অফিসে কাজের ফাঁকে স্ট্রেচিং করুন। পরিবার-পরিজন নিয়ে সপ্তাহান্তে বাইরে ঘুরতে যান।

১০. ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনুন: হুট করে বদলানোর চেয়ে ধীরে ধীরে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা বেশ সহজ। তিন দিনের জন্য আমরা দৈনিক যে খাবার ও পানীয়গুলো গ্রহণ করছি এবং শারীরিক কর্মকান্ডগুলো পালন করছি তার তালিকা তৈরি করতে পারি। কোথায় উন্নতি করতে হবে সেটি বের করাটা খুব কঠিন হবার কথা নয়।

সকালে নাস্তা করছেন না? একবাটি চিড়া বা ওট জাতীয় সেরেল, এক টুকরো রুটি বা একটি ফল সহজেই এসময়ে আপনার ডায়েট রুটিনে ঢুকে যেতে পারে।

কম ফল বা সবজি খাচ্ছেন? পরিমাণটা বাড়িয়ে দিন। পছন্দের খাবারে অতিরিক্ত ফ্যাট? একেবারে বাদ দেবেন না, এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। বরং কম খান এবং পরিমাণও কমিয়ে দিন।

কায়িক শ্রম কম হচ্ছে? সিঁড়ি ব্যবহার করাটা শারীরিক কর্মকান্ড বাড়ানোর প্রথম ধাপ হতে পারে।

সূত্র: ইউরোপিয়ান ফুড ইনফরমেশন কাউন্সিল

এইচএন/এএ/জেআইএম