গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির সঙ্গে থেকে থেকে ঝড়ো হাওয়া বইছে। এতে শহর গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবনের পাশাপাশি ডুবছে চলাচলের পথও। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঝুপড়ি ও গ্রামের অনেক কাঁচা বাড়ি-ঘর বাতাসের ঝাপটায় উড়ে গেছে। এতে চরম দূর্ভোগে পড়েছে হতদরিদ্র ও পানি নিমজ্জিত এলাকার লোকজন।
Advertisement
এসবের মাঝে বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পাহাড় ধসের আশংকা করা হচ্ছে। এমন দুর্যোগে প্রাণহানি রোধে পাহাড় কেটে আবাস গড়া ঝুঁকিতে বাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করেছে কক্সবাজারের জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে সরে যেতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে পাহাড় ধস ও প্রাণহানির ঘটনা। এ আশঙ্কায় পাহাড়ের পাদদেশ বা চুঁড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ আবাস গড়া লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে সরে যেতে নির্দেশ দিয়ে মাইকিং শুরু হয়েছে। স্বেচ্ছায় না সরলে অভিযানের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারিও দেয়া হচ্ছে।
ডিসি কক্সবাজার নামে চলমান ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের বরাতে সবাইকে সতর্ক করে লেখা হয়েছে, রোববার (৭ জুলাই) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হয়। বিশেষ করে শহরে পাহাড় বেষ্টিত পাহাড়তলী, লাইট হাউস পাড়া, ঘোনা পাড়া, বাদশা ঘোনা, কবরস্থান পাড়া, সাহিত্যিকা পল্লী, সার্কিট হাউস পাড় এলাকায় ঝুঁকিতে থাকাদের নিরাপদে সরতে বলা হয়। নিজেরা সরে না আসলে আইন প্রয়োগে তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে দেয়া হবে।
Advertisement
কক্সবাজার সদর ভূমি কর্মকর্তা (অ্যাসিল্যান্ড) শাহরিয়ার মোকতার জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জেলার ঝুঁকিপূর্ণ সব এলাকায় মাইকিং করে মানুষকে নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারি আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরে বর্তমানে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত চলছে। গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিপাত জেলায় আরও কয়েকদিন স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাত বেশি হলে পাহাড় ধসের আশংকা রয়েছে।
জানা গেছে, শহরের লাইটহাউজ, ফাতেরঘোনা, কলাতলী, আদর্শগ্রাম, পাহাড়তলী, বৈদ্যঘোনা, খাজামঞ্জিল, ঘোনারপাড়া, মোহাজের পাড়া, কবরস্থান পাড়া, গরুর হালদা সড়ক, সিটি কলেজ এলাকা, সাহিত্যিকা পল্লী, বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকাসহ ৬টি ওয়ার্ডে পাহাড়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করে। ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসে এসব এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব এলাকার অতীত ইতিহাস এমনটিই বলছে।
এছাড়া মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও কক্সবাজার সদরের পাহাড়ি এলাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দেয়ায় সেখানেও মাইকিং করা হয়েছে।
Advertisement
কক্সবাজার বন বিভাগের টেকনাফ রেঞ্জ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, টেকনাফ-উখিয়ায় পাহাড় কেটে বেশি আবাস গড়া হয়েছে। বনভূমিগুলো ন্যাডা করে বাসা করায় এখানেই পাহাড় ধসের আশঙ্কা বেশি। তাই এদের নিরাপদে চলে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, জেলার পাহাড়ি এলাকায় অবৈধভাবে পাহাড় কেটে সমতল করে বসতি নির্মাণ করা হচ্ছে অনবরত। ফলে প্রতিবছরই ঘটছে পাহাড় ধসের ঘটনা। এতে প্রাণহানি ঘটছে। এরপরও বোধোদয় হচ্ছে না। এ রকম ঝুঁকিতে বাস করছে লাখো পরিবার।
জেলা প্রশাসক প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে পৌরসভার ৬টি ওয়ার্ডে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী হাজারো পরিবারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে মাইকিং করে তাদেরকে সরে যেতে বলা হয়েছে। এরপরেও যদি সরে না আসে বৃষ্টিপাতের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হবে। তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার জন্য প্রতিটি এলাকায় পর্যাপ্ত শেল্টারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক দিন পরিদর্শন করে সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়। মানুষের প্রাণহানি যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে প্রশাসন।
সায়ীদ আলমগীর/এমএসএইচ