ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তুঘলঘি কারবার চলছে। চলতি হজ মওসুমে সৌদি আরবে অসুস্থ বাংলাদেশি হজযাত্রীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের তিন শতাধিক সদস্য সমন্বয়ে যে হজ চিকিৎসক দল গঠিত হয়েছে তন্মধ্যে শতাধিক সদস্যই ধর্ম মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী।বুধবার সর্বশেষ ৩০ সদস্যের হজ চিকিৎসক দলের নতুন নামের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তন্মধ্যে মাত্র একজন চিকিৎসক ও সাতজন নার্স ও ফার্মাসিস্টের নাম থাকলেও বাকি ২২ জনই ধর্মমন্ত্রণালয়ের কর্মচারী!অনুসন্ধানে জানা গেছে, এবারের হজে ধর্ম মন্ত্রণালয়, বায়তুল মোকাররম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হজ অফিস ও ওয়াকফ অফিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালি, জমাদার, ক্লিনার, খাদেম, মোয়াজ্জিন, পিও, অফিস সহায়ক, অফিস সহকারী, হিসাবরক্ষক, সিনিয়র সহকারী প্রধান, এলডি কাম টাইপিস্ট, গাড়িচালক, গানম্যান, পিএ, ক্যাশিয়ার, ওয়াকফ পরিদর্শক ও কম্পিউটারসহ সকলেই চিকিৎসক দলের সদস্য ‘সহায়তাকারী’ হিসেবে নাম অর্ন্তভুক্ত করেছেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এ বিশাল বহরের তালিকা দেখে অনেকেই বলছেন, ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে হজে যাওয়ার আর বাদ রইলেন কে?সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে বাংলাদেশ থেকে হজ চিকিৎসক দলের সদস্য হিসেবে বর্তমানে সৌদি আরব অবস্থান করছেন এমন একাধিক নার্স জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হজ চিকিৎসক দলে সহায়তাকারী হিসেবে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে যারা আসছেন তাদের মধ্যে নিয়মিত ধর্মকর্ম পালন করেন এমন স্বল্পসংখ্যক কর্মচারী ছাড়া কেউ অসুস্থ হাজিদের চিকিৎসায় সহায়তা করছেন না।চিকিৎসা সহায়তা তো অনেক দূরের কথা সদস্যদের কেউ কেউ মন্ত্রী, সচিব, যুগ্মসচিব, ইসলামি ফাউন্ডেশন ও হজ অফিসের বড় কর্মকর্তাদের কাছের লোক পরিচয় দিয়ে উল্টো চিকিৎসক নার্সদের ভুল ধরে বেড়াচ্ছেন।তারা বলেন, যাদের পাঠানো হচ্ছে তাদের চিকিৎসাসেবা সম্পর্কে ন্যুনতম জ্ঞান নেই। যদি পাঠাতেই হয় তবে যেন হজের দু`একমাস আগে সরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে মৌলিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের প্রশিক্ষণ নিতে পারে সে ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে তারা মন্তব্য করেন।সর্বশেষ ৩০ জনের তালিকাসহ এ পর্যন্ত হজ চিকিৎসক দলের সদস্য হিসেবে মোট ৩০৩ জনের নামের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে একশ`র কম চিকিৎসক, ১১৪ জন নার্স ও ফার্মাসিস্ট ও শতাধিক চিকিৎসা সহায়তাকারী হিসেবে সৌদিতে যাওয়ার অনুমোদন পেয়েছেন।ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে চিকিৎসক দলে নাম অন্তর্ভুক্তি করিয়ে লাখ লাখ টাকার অবৈধ বাণিজ্যেরও অভিযোগ উঠেছে।তবে ধর্ম মন্ত্রণালয় বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, অসুস্থ হাজিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতেই তাদের সহায়তাকারী হিসেবে পাঠানো হয়। তারা হাজিদের সরাসরি চিকিৎসা না দিলেও সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে।কাজে ফাঁকি প্রসঙ্গে এক কর্মকর্তা বলেন, হজ চিকিৎসকদের দলপ্রধান রয়েছে। তিনি নিয়মিত কার্যক্রম মনিটর করে প্রতিবেদন পাঠান। ঢালাওভাবে করা এ অভিযোগ মনগড়া বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।এমইউ/বিএ
Advertisement