পৃথিবীর সবাই শান্তির পেছনে ছুটেন। কিন্তু সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকার পরও মানসিক শান্তি পান না অনেকেই। পারেন না সুখী হতে। এর একটি প্রধান কারণ পরিবারে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি। সঠিক পরিকল্পনা ও সচেতনতার অভাবে দিনদিন জনসংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। পরিবারে সদস্য সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় খরচ চালাতেও খেতে হয় হিমশিম। ফলে পরিবারে দেখা দিচ্ছে অশান্তি। যদি মানুষ সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেয় তাহলে অশান্তি দূর হবে। সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি ছোট পরিবার হতে পারে সুখী পরিবার।
Advertisement
বর্তমানে ব্যালেন্স সোসাইটির কথা বলা হয়েছে। এতে দুইটি সন্তানের কথা বলা হয়েছে। একটা বাচ্চা একটি পরিবারের 'সুস্থতা' আনতে পারে না। ছেলে হোক আর মেয়ে হোক দু'টি সন্তানই যথেষ্ঠ।
রাস্তার পাশের বিশাল বিশাল বিলবোর্ড কিংবা টিভির বিজ্ঞাপনে প্রভাবিত হয়ে অনেকেই দুটো সন্তান নিয়ে পরিবার পরিকল্পনা সাজায়। তবে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটতে গিয়ে এখন অনেকেই একটি মাত্র সন্তানের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। কারণ, সন্তান জন্মদানের পর তাকে ঠিকভাবে বড় করে তোলা একটা বড় দায়িত্ব।
ঢাকায় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন রহমান মাসুদ (৪০)। বিয়ে করেছেন দশ বছর আগে। স্ত্রীর নাম রাজিয়া বেগম (৩০)। বিয়ের দুই বছরের মাথায় তাদের সংসারে আসে একটি পুত্র সন্তান। এর তিন বছর পর আরো একটি কন্যা সন্তান হয়। দুই সন্তান নিয়ে বর্তমানে অনেক সুখেই আছেন তারা।
Advertisement
কথা হয় রহমান মাসুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি দুই সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকি। যা বেতন পাই তা নিয়ে অনেক সুখে আছি। পরিবারে তেমন কোনো অসুবিধা নেই।
একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন জাহিদ হাওলাদার (৪১)। বেতনও সমপরিমাণ। তিনিও বিয়ে করেছেন দশ বছর আগে। স্ত্রীর নাম নাজমুন নাহার (২৯)। বিয়ের এক বছর পর তাদের ঘরে আসে একটি কন্যা সন্তান। এরপর পর্যায়ক্রমে আসে আরো চারটি সন্তান। পরিবার চলাতে নিয়মিত হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। নেই পরিবারে শান্তি।
তিনি বলেন, অপরিকল্পিত পরিবার গড়ে আজ আমি বেকাদায় আছি। আমার মতো যেন কেউ অপরিকল্পিত পরিবার গড়ে না তুলে।
রহমান ও জাহিদ। এই দুই জনের মধ্যে পার্থক্য তাদের পরিবারের সদস্য। ছোট পরিবার নিয়ে সুখে আছেন রহমান। অপরদিকে পরিবার বড় হওয়ায় অশান্তিতে রয়েছেন জাহিদ। এমন অনেক পরিবার আছে জাহিদের মতো, আছে রহমানের মতো। তাদের সবারই কম বেশি একই অবস্থা। তাই জাহিদ পরামর্শ দিচ্ছেন একটি সন্তান হলে ভালো হয় দু'টির বেশি যেন কখনো না হয়। তাহলে সুখে শান্তিতে থাকতে পারবেন সারাজীবন।
Advertisement
বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নতির ফলে পারিবারিক ব্যবস্থা আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। আগের দিনে মানুষের কাছে মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার আর ইন্টারনেটের মতো প্রযুক্তি কম ছিল বলে তারা কাজের পর অবসর সময়টা পরিবারের মধ্যেই হেসে খেলে কাটাতেন। কিন্তু প্রযুক্তির সহজলভ্যতার ফলে অবসর সময় এখন ফেসবুক, ইন্টারেনট আর টিভির সামনে কাটাচ্ছেন। অনেকে আবার নিজের ব্যক্তিগত কাজ ফেলে রেখেও বিনোদনের জন্য ফেসবুকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করে দিচ্ছেন। কেউবা প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখছেন। ফলে পরিবারের সদস্যদের খোঁজ ঠিক মতো নিতে পারছে না। পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রতি ভালোবাসা যেমন কমে যাচ্ছে তেমনি দূরত্বও তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এটা জেনে রাখা দরকার নিজের পরিবারের বন্ধন ভেঙে বিশ্বজয়েও কোনো কল্যাণ নেই।
বাংলাদেশকে পরিবর্তন করতে হলে পরিবার নিয়ে ভাবতে হবে। ‘পৃথিবীকে গড়তে হলে সবার আগে নিজকে গড়ো’ এ স্লোগান যেন সুন্দর পৃথিবী গড়ার যুদ্ধে আহ্বান করে যাচ্ছে। তাই সুন্দর একটা পৃথিবী গড়তে হলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা ও শ্রম দিয়ে ভালো কাজ করার দৃঢ় মনোভাব থাকতে হবে। আর যদি ভালো কাজ করার শক্তি সামর্থ্য না থাকে তবে কমপক্ষে নিজের পরিবারকে একটি আদর্শ পরিবার হিসেবে গঠন করার চেষ্টা যেন অব্যাহত থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, আইইএম ইউনিটের পরিচালক, লাইন ডাইরেক্টর আইইসি আশরাফুন্নেসা বলেন, বর্তমানে ব্যালেন্স সোসাইটির কথা বলা হয়েছে। এতে দু’টি সন্তানের কথা বলা হয়েছে। একটা বাচ্চা একটি পরিবারের সুস্থতা আনতে পারে না। ছেলে হোক আর মেয়ে হোক দু'টি সন্তানই যথেষ্ঠ। সরকার বর্তমানে সে দিকে নজর দিচ্ছে।
গাজী নামের এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, আমরা বর্তমানে দু'টি সন্তান নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি। ছোট পরিবার সমাজের জন্য ভালো।
আরেক স্বাস্থ্যকর্মী জামান উদ্দিন বলেন, আমরা ফিল্ডে গিয়ে দেখতে পাই যাদের পরিবার বড় তাদের চেয়ে ছোট পরিবারগুলো সুখে আছেন।
জেএ/এসএইচএস/জেআইএম