পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি রানার অটোমোবাইলের শেয়ারের দাম সাত কার্যদিবসের ব্যবধানে বেড়েছে ২৮ টাকা ৩০ পয়সা। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের এই দাম বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এ জন্য বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করতে রোববার তথ্যও প্রকাশ করেছে ডিএসই।
Advertisement
ডিএসই জানিয়েছে, কোম্পানিটির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পেছনের কারণ জানতে চেয়ে ৪ জুলাই নোটিশ পাঠানো হয়। এর জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের যে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে তার জন্য তাদের কাছে অপ্রকাশিত কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২৩ জুন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার দাম ছিল ৭৮ টাকা ১০ পয়সা, যা টানা বেড়ে ৪ জুলাই দাঁড়ায় ১০৬ টাকা ৪০ পয়সায়। অর্থাৎ সাত কার্যদিবসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ২৮ টাকা ৩০ পয়সা।
এই দাম বাড়ার প্রেক্ষিতেই ডিএসই থেকে কোম্পানিটিকে নোটিশ পাঠানো হয় এবং কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করতে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
Advertisement
হঠাৎ করে শেয়ারের এমন দাম বাড়লেও গত ২১ মে লেনদেন শুরুর আগে মুনাফায় ধস নামার তথ্য দিয়েছিল এই কোম্পানিটি। লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইকে কোম্পানিটি জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ব্যবসা করে কর পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৭ কোটি ২১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে এই মুনাফার পরিমাণ ৭৭ পয়সা।
আগের বছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি কর পরবর্তী মুনাফা ১১ কোটি ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আর শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয় ১ টাকা ১৮ পয়সা। সে হিসাবে আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং শেয়ারপ্রতি মুনাফা কমেছে ৪১ পয়সা।
চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের মতো ২০১৮ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের হিসাবেও কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যবসা করে কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ৩৩ কোটি ৭৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। এতে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৩ টাকা ৫৮ পয়সা।
আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি মুনাফা হয় ৩৪ কোটি ৯৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। এতে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয় ৩ টাকা ৭১ পয়সা। এ হিসাবে আগের বছরের তুলনায় রানার অটোমোবাইলের মোট মুনাফা কমেছে ১ কোটি ২৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। আর প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে মুনাফা কমেছে ১৩ পয়সা।
Advertisement
গবেষণা ও উন্নয়ন, যন্ত্রপাতি ক্রয়, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও খরচ মেটাতে গত বছরের ১০ জুলাই রানার অটোমোবাইলসকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এরমধ্যে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আইপিও আবেদনের জন্য রাখা হয় ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার।
কোম্পানিটির শেয়ার পেতে বিডিংয়ে ৫৯২ জন যোগ্য বিনিয়োগকারী অংশ নেন। এ বিনিয়োগকারীরা সর্বোচ্চ ৮৪ টাকা থেকে সর্বনিম্ন ২৫ টাকার মধ্যে দর প্রস্তাব করেন। এর মধ্যে ৫০ টাকা দরে সবচেয়ে বেশি ১২৩ জন যোগ্য বিনিয়োগকারী দর প্রস্তাব করেন। এই ১২৩ জন বিনিয়োগকারী ২ কোটি ৯৫ লাখ ২০ হাজার শেয়ার ১৪৭ কোটি ৬০ লাখ টাকায় কেনার প্রস্তাব দেন।
এরপরে ৫৫ টাকায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর প্রস্তাব করেন ৭৮ জন বিনিয়োগকারী এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪৩ জন ৬০ টাকা করে প্রস্তাব দেন। তবে ৭২ ঘণ্টার বিডিংয়ে সর্বোচ্চ ৮৪ টাকা থেকে ৭৫ টাকার প্রস্তাবিত দরের মধ্যে ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ারের প্রস্তাব চলে আসে। যে কারণে বিডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানিটির কাট-অফ প্রাইস নির্ধারিত হয় ৭৫ টাকা।
কাট-অফ প্রাইস থেকে ১০ শতাংশ কমে আইপিও’র মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করা হয়।
এমএএস/জেএইচ/জেআইএম