সালিশ বৈঠকে পুলিশের উপস্থিতিতে প্রতিপক্ষের বিরোধপূর্ণ জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় ২৫ শতক জমির দখল নেয়াসহ প্রায় ২০ বান্ডিল টিন ও ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায় প্রতিপক্ষরা। দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে এ হামলা চালিয়ে ভীতিকর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে তারা।
Advertisement
অবাক করা বিষয় হচ্ছে, পুলিশের সামনে এতকিছু ঘটলেও তারা ছিল নির্বিকার। এমনকি হামলা ও জমি দখলের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করা হয়। এ সময় উলিপুর থানার এসআই তপন কুমারের নির্দেশে হামলাকারী সেকেন্দার মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিলে প্রমাণ ডিলিট করে দেন ওই এসআই।
শনিবার (০৬ জুলাই) দুপুরে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ মধুপুর সাতকুড়ার পাড় গ্রামে এমন ঘটনা ঘটেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, ২৫ শতাংশ জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে সুবল চন্দ্র বর্মন গং ও সুশীল চন্দ্র বর্মন গংদের মাঝে বিরোধ চলে আসছিল। এ ব্যাপারে একাধিকবার গ্রাম্য-সালিশ বৈঠকে মীমাংসা করা হলেও সুশীল গং তা মানেননি। এ ব্যাপারে আদালতে মামলা বিচারাধীন।
Advertisement
গত ২৪ এপ্রিল সুশীল গং সুবলের ভাই রনঞ্জিতকে বাড়ি থেকে উলিপুর বাজার আসার পথে রাস্তায় অটোরিকশা থামিয়ে মারপিট করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। এ ঘটনায় উলিপুর থানায় মামলা হয়। এরপর প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় উল্টো সুবল গংয়ের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগ পাওয়ার পর এসআই তপন কুমারকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য থানা থেকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই এসআই ঘটনা মীমাংসার কথা বলে উভয় পক্ষকে নিয়ে ১৩ জুন থানায় বসেন। সেখানে আপোষ মীমাংসার কথা বলে ওই এসআই সুশীল গংদের পক্ষ নিয়ে সুবল গংদের একতরফাভাবে রায় মেনে নেয়ার জন্য চাপ দেন। তা না মানায় তাদেরকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দেন। পরে বিষয়টি থানার বাইরে মীমাংসা করার জন্য উভয় পক্ষ সম্মত হলে সমাজ সেবক পার্থ সারথী সরকারের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়।
ঘটনার দিন শনিবার (০৬ জুলাই) দুপুরে বিরোধপূর্ণ জায়গায় মীমাংসার জন্য পার্থ সারথী সরকার উভয় পক্ষকে নিয়ে বসলে সেখানে হঠাৎ করেই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এতে উভয় পক্ষ মারমুখী হয়ে ওঠে। অবস্থার অবনতি দেখে থানায় খবর দেয়া হলে ওই এসআই তপন কুমার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়া মাত্রই সুশীল গং তাদের লোকজনসহ সুবল গংদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
এ দৃশ্য দেখার পরও ওই এসআই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। এ সময় সুবলের বড় ভাই রঞ্জিতের স্ত্রী নমিতা রানী প্রতিপক্ষের হামলা ও জমি দখলের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করলে এসআই তপন কুমারের নির্দেশে হামলাকারী সেকেন্দার মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিয়ে ওই এসআইয়ের হাতে দেয়। পরে এসআই ভিডিও ডিলিট করে দেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
Advertisement
এ সময় উপস্থিত রঞ্জু মিয়া, আলতাফ হোসেন, গাজীবরসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, তপন দারোগা উপস্থিত হওয়া মাত্রই হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় তিনি বাঁধা না দিয়ে সুশীল গংদের সহায়তা করেন। ফলে আদালতে বিচারাধীন ও বিরোধপূর্ণ জায়গা সহজেই সুশীলরা দখল করে নেয়।
তারা আরও বলেন, হামলার ঘটনা মোবাইল ফোনে ভিডিও করার সময় তা কেড়ে নিয়ে সেকেন্দার তপন দারোগার হাতে দেন। পরে হামলার ঘটনা শেষে তপন দারাগো মোবাইল থেকে সবকিছু ডিলিট করে মোবাইল ফোনটি ফেরত দেন।
এ সময় সুবলদের মামলায় ফাঁসানোর কৌশল হিসেবে সুশীলদের পক্ষের পঙ্কজ কান্তি বর্মন (৩০) ও প্রদীপ কুমারকে (১৯) উলিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
তবে এসআই তপন বলেন, ঘটনা যা ঘটেছে তার জন্য আমি একা দায়ী নই। এসআই হাসান ও এসআই রাসেলও ঘটনাস্থলে ছিলেন।
মোবাইলের ছবি ও ভিডিও কেন ডিলিট করেছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘আসেন সামনা সামনি কথা বলব।’ এরপর ফোন কেটে দেন তিনি।
এ বিষয়ে থানা পুলিশের ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ওই ২৫ শতক জমি নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। মীমাংসার চেষ্টা চলছে। কিন্তু আমরা বারবার ব্যর্থ হচ্ছি। আবারো চেষ্টা করব। তবে কালকের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাজমুল হোসেন/এফএ/জেআইএম