খেলাপি ঋণ, তারল্য সংকট, ঋণের উচ্চ সুদহার ও পরিচালন মুনাফা- এই চার সমস্যায় ঘুরপাক খাচ্ছে ব্যাংক। এতে পুরো ব্যাংক খাত দুরবস্থায় পতিত হয়েছে।
Advertisement
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ব্যাংক ও আথিক প্রতিষ্ঠানের তথ্যসমৃদ্ধ গবেষণা গ্রন্থ ব্যাংকিং অ্যালমানাক ২০১৭’ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন দেশের অর্থনৈতিক বিশ্লেষক, ব্যাংকার ও গবেষকরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক জামাল উদ্দিন, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, সাবেক ডেপুটি গভর্নর নজরুল হুদা, এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, সাপ্তাহিক শিক্ষা বিচিত্রার সম্পাদক আবদার রহমান ও নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ জিয়াউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাত সমস্যার মধ্যে চলছে। প্রকৃত তথ্যের অভাবে অপাত্রে ঋণ যাচ্ছে। যারা ঋণ পাওয়ার যোগ্য নন তারাই ঋণ পাচ্ছে। এতে করে বাড়ছে ঋণখেলাপি। এটি এখন ব্যাংক খাতের মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Advertisement
নন পারফরমিং লোনের (খেলাপির ঋণ) যে তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে তা খেলাপির প্রকৃত চিত্র নয়- উল্লেখ করে মির্জ্জা আজিজ বলেন, ঋণখেলাপির বিবরণী দেয়া হচ্ছে তাতে পুনঃতফসিল ও রাইট অব করা ঋণের তথ্য দেয়া হচ্ছে না। এতে করে প্রকৃত ঋণখেলাপির তথ্য প্রকাশ হচ্ছে না। এটি যোগ করলে নন পারফরমিং লোন আরও বাড়বে। তাই খেলাপি ঋণ কমাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে গবেষণাধর্মী গ্রন্থ সহযোগিতা করবে।
ব্যাংক খাতের চার সমস্যা উল্লেখ করে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ব্যাংকিং খাতে স্ব-বিরোধী পরিসংখ্যান দেখা যাচ্ছে। একদিকে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে, তারল্য সংকট চলছে, ঋণের সুদহারও উচ্চ। কিন্তু অন্যদিকে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বাড়ছে। এটা কোনো সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
ব্যাংকিং খাতে বিভিন্ন বৈষম্য চলছে এমন একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন,, দেশের ব্যাংকগুলো বেশিরভাগ আমানত সংগ্রহ করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। কিন্তু ঋণ বণ্টনের সময় সুবিধা পাচ্ছে একটি বিশেষ গোষ্ঠী। এটি এক ধরনের বৈষম্য। এটি কমাতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক জামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের ব্যাংকিং খাতের ৭০ শতাংশ ঋণ দীর্ঘমেয়াদি। কিন্তু বেশিরভাগ আমানত স্বল্পমেয়াদি। এ চক্কর থেকে বের হতে না পারলে এ খাতকে স্থিতিশীল করা কঠিন। কারণ আমাদের বিকল্প শক্তিশালী কোনো বন্ড মার্কেট নেই।
Advertisement
অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডাটা একসঙ্গে পাওয়া যাবে এই বইতে। বৈদেশিক বাণিজ্যি, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ও ব্যাংকের অবস্থা জানতে এ গ্রন্থটি সহায়তা করবে। তবে গ্রন্থটি গবেষণা কাজে আরও কার্যকর করতে হালনাগাদ তথ্য দিয়ে প্রকাশের দাবি জানানো হয়।
এসআই/বিএ/এমকেএইচ