অর্থনীতি

কপারটেক নিয়ে অস্বস্তিতে বিএসইসি

দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) থেকে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আহমেদ অ্যান্ড আক্তারের লাইসেন্স নবায়ন না করায় কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)।

Advertisement

আহমেদ অ্যান্ড আক্তারকে দিয়ে আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করে বিএসইসির অনুমোদন নিয়ে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ। তবে আর্থিক প্রতিবেদনে নানা অসঙ্গতি থাকায় প্রতিষ্ঠানটিকে তালিকাভুক্ত করেনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ পরিস্থিতিতে আর্থিক প্রতিবেদনে অস্বচ্ছতার অভিযোগ ওঠায় কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদন খতিয়ে দেখে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) থেকে আইসিএবিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। এরপর আইসিএবি তদন্তে নামলেও তাতে অসহযোগিতা করে আহমেদ অ্যান্ড আক্তার। ফলে প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আইসিএবি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) আইসিএবির সভাপতি এ এফ নেছার উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চাওয়া কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে কিছু অভিযোগ ওঠায় ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল-এফআরসি আমাদের এ বিষয়ে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের আর্থিক প্রতিবেদনটি রিভিউ করতে বলে। আমরা এ প্রতিষ্ঠানটিকে যারা অডিট করেছে- আহমেদ অ্যান্ড আক্তার তাদের কাছে রিভিউ করার জন্য তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠাই।’

Advertisement

‘কিন্তু তারা আমাদের এ বিষয়ে কোনো সহযোগিতা করেনি। যেহেতু আমরা তাদের কাছে কোনো সহযোগিতা পাইনি। প্রাইমারি রেগুলেটর হিসেবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা তাদের লাইসেন্স নবায়ন করিনি। ফলে তারা এখন তালিকাভুক্ত বা তালিকাহীন কোনো ধরনের প্রতিষ্ঠান অডিট করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলল’ বলেন নেছার উদ্দিন।

নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিএবি এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিলেও এ বিষয়ে বিতর্ক ওঠার শুরু থেকেই নীরব থাকে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। যে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিয়ে পুঁজিবাজার থেকে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে কপারটেক।

এ বিষয়ে শনিবার (৬ জুলাই) সাংবাদিকরা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমানকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ নিয়ে নতুন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যেটা আইসিএবি- এর কাউন্সিল সভায় কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের নিরীক্ষক আহমেদ অ্যান্ড আক্তারের লাইসেন্স নবায়ন না করার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে।’

এ নিয়ে আমাদের কাছে অনেক প্রশ্ন এসেছে, তবে বিষয়টি অফিশিয়ালি এখনও জানি না। অফিস খুললে বিষয়টি সম্পর্কে বোঝা যাবে, কী হবে। সে বিষয়টাও আপনাদের (সাংবাদিক) জানিয়ে দেব। এর আগে কপারটেক ইস্যুতে কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সাথে সাথে তা প্রসে রিলিজ আকারে প্রকাশ করা হয়েছে,’ বলেন সাইফুর রহমান।

Advertisement

একই বিষয়ে বিএসইসির আরেক নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ বলেন, ‘যে কোনো ইস্যু একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসে। এক্ষেত্রে অনেক প্রসেস থাকে। পৃথিবীর কোনো রেগুলেটর বলতে পারবে না, একটি কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসলে ভালো করবে বা খারাপ করবে। সব কোম্পানিই যে সফলতার সাথে চলবে, এটা কেউ বলতে পারবে না।’

তিনি বলেন, ‘কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ইস্যুতে এখন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটার বিষয়ে এখন যারা (ডিএসই) আপত্তি দিচ্ছেন, তারা প্রথমে কি দিয়েছিলেন তা আপনারা (সাংবাদিক) চাইলেই জানতে পারবেন। এ কোম্পানিটি আসলেই খারাপ করবে নাকি ভালো করবে- সেটা আপনারা কী করে জানেন? এটা কেউ বলতে পারবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেখেন একটি ইস্যু যখন আমাদের কাছে আসে, অনেকগুলো প্রসেস দিয়ে আসে। তবে স্টেকহোল্ডার হিসেবে আপনার বলার থাকতে পারে। কিন্তু আপনি (ডিএসই) আগে একরকম দেয়ার পরে এখন যদি অন্যরকম পর্যবেক্ষণ (অবজারবেশন) থাকে, সেক্ষেত্রে কঠিন (ডিফিকাল্ট) হয়ে যায়। তারপরও যদি তালিকাভুক্তির আগের মুহূর্তের স্টেজে এসে হয়। তারমধ্যে আবার দুই স্টক এক্সচেঞ্জ দুই রকম মূল্যায়ন করেছে। একজন লিস্টিং দেবে, আরেকজন দেবে না।’

এমএএস/এনডিএস/এমএস