দেশের ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো চিহ্নিতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে প্রতিটি জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের তালিকা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যার মধ্যে সুনামগঞ্জের ১৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ঝুঁকিপূর্ণ বলে তালিকা দিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। বেশিরভাগ বিদ্যালয় নব্বয়ের দশকে তৈরি হওয়ায় জেলার এক হাজার ৪৩৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৬৪টি বিদ্যালয় ঝুঁকিতে রয়েছে।
Advertisement
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দেয়া তথ্য মতে, জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় রয়েছে ধর্মপাশা উপজেলায়। এ উপজেলার ২৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চল শাল্লা উপজেলায় ২৬টি, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় পাঁচটি, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ২১টি, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় একটি, ছাতক উপজেলায় ১৪টি, তাহিরপুর উপজেলায় ২২টি, জামালগঞ্জ উপজেলায় ১২টি, দিরাই উপজেলায় ১৬টি, জগন্নাথপুর উপজেলায় ১২ এবং দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই সকল ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের মধ্যে যে বিদ্যালয়গুলো অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে সেগুলো মেরামতের জন্য সরকারের জরুরি শিক্ষা তহবিল থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা দেয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ঝুঁকিতে থাকা ইসলামপুর (১) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুমানা ইসলাম বলেন, আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৫০জন। কিন্তু বিগত ভূমিকম্পে আমার এই বিদ্যালয়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। বিদ্যালয়ের ভিমে ভিমে ফাটল ও সিঁড়িটা দেবে গেছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আমরা বিদ্যালয় পরিচালনা করি।
Advertisement
ধর্মপাশা উপজেলায় ঝুঁকিতে থাকায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা ঘাসী সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিশ চন্দ্র সরকার বলেন, বিদ্যালয়ের অবস্থা খুবই খারাপ। পানিতে ভিজে দেয়াল নষ্ট হয়ে গেছে। ভবনের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। তাই বাধ্য হয়েই ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে আলাদা টিনসেডের ঘরে ক্লাস নিতে হচ্ছে। ধর্মপাশা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হাসিনা আক্তার পারভীন বলেন, ধর্মপাশায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের তালিকা প্রেরণ করেছি। একই সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যালয়ের উন্নয়নে বরাদ্দ দেয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে।
দিরাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এমএম আব্দুল হালিম বলেন, আমার উপজেলায় অনেকগুলো বিদ্যালয় ঝুঁকিতে রয়েছে। সেগুলোর তালিকা করে পাঠিয়েছি। বিদ্যালয়গুলো পুরোনো হওয়ায় ভবন থেকে পানি পড়ে। ভবনের প্লাস্টার ধসে পড়ছে।
এ ব্যাপারে শিক্ষাবিদ পরিমল কান্তি দে বলেন, হাওর এলাকায় যেসব জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নেই সেসব জায়গায় একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি করতে হবে। তাছাড়া সুনামগঞ্জে যে ১৬৪ ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের তালিকা করা হয়েছে সেগুলো খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করতে হবে। তা না হলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। তাছাড়া যে সকল বিদ্যালয় বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সেগুলোতে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। উচ্চ বিদ্যালয়গুলোর তিনটি রুম নিয়ে বর্তমানে ক্লাস চলছে। আমরা মনে করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই ভবনগুলো সংস্কারে সরকার পদক্ষেপ নেবে।
Advertisement
মোসাইদ রাহাত/আরএআর/এমএস