বর্ষা মৌসুম এলেই পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলায় জমে ওঠে ভাসমান নৌকার হাট। প্রায় শত বছর ধরে প্রতি শুক্র ও সোমবার উপজেলার আটঘর কুরিয়ানার মানপাশা বাজার সংলগ্ন আটঘর খালের ভাসমান এ নৌকার হাট এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। তবে নানা অব্যবস্থাপনা ও অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের কারণে বর্তমানে হারাতে বসেছে সেই ঐতিহ্য।
Advertisement
নেছারাবাদ উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার পূর্বে আটঘর খাল। বর্ষা মৌসুমে এই খালসহ সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সরগরম হয়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী এ হাট। বর্ষা মৌসুমে বাংলার আপেলখ্যাত কুড়িয়ানার মিষ্টি পেয়ারা পাড়া, গো-খাদ্য সংগ্রহ, চাঁই (দোহার) দিয়ে মাছ সংগ্রহ, নার্সারির কাজসহ যাতায়াতের জন্য নৌকাগুলো বেশি বিকিকিনি হয়ে থাকে।
জানা গেছে, বংশ-পরম্পরায় এ উপজেলার ছয়টি গ্রামের প্রায় দেড় হাজারের বেশি পরিবার নৌকা ও বৈঠা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাই নৌকা তৈরি এ অঞ্চলের মানুষের কাছে একটা শিল্পে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে গত শুক্রবার হাটে গিয়ে দেখা যায়, খালে ও রাস্তার দু‘ধারে কেবল নৌকা আর বৈঠা। মেহগনি, চাম্বল, কড়াই ও রেইনট্রি গাছ দিয়ে নির্মিত এসব নৌকা দেখতে স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ী আর উৎসুক মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো। যে দিকে চোখ পড়ে সেদিকেই দেখা যায় সারিবদ্ধ বিভিন্ন আকারের নৌকা আর নৌকা।
Advertisement
এদিকে এসব নৌকার কাঠ ও আকার ভেদে রয়েছে দামের ভিন্নতা। চাম্বল কাঠ দিয়ে তৈরি একটি আটহাত দীর্ঘ নৌকা বিক্রি হয় ১৮শ থেকে ২২শ টাকায়। এছাড়া ৯, ১০ ও ১২ হাত সাইজ পর্যন্ত বাহারি ডিজাইনের নৌকাও আসে এখানে।
ইলুহার গ্রাম থেকে আসা নৌকা ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, তিনি ২৫ বছর ধরে এ হাটে একসঙ্গে অনেকগুলো নৌকা নিয়ে আসেন। অতীতে অনেক নৌকা বিক্রি হলেও এখন তা অনেকটাই কমে গেছে। কাঠের মূল্য বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত খাজনায় নৌকার দাম বেশি পড়ায় ক্রেতারা কম আসেন।
বিনয়কাঠি থেকে আসা নৌকা ক্রেতা জামাল মিয়া বলেন, তিনি হাটে তিনটি নৌকা কিনতে এসেছেন। কিন্তু শতকরা ১১ টাকা খাজনা ও নৌকার দাম বেশি হওয়ায় কিনবেন না।
প্রতি বছর এ হাটে ইজারা মূল্যবৃদ্ধিসহ অতিরিক্ত খাজনা আদায়ে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি হাটে খাজনা কমানোসহ স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে নৌকা বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়বে।
Advertisement
অপরদিকে ইজারাদারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা শতকরা নয় টাকা খাজনা নিচ্ছেন। এর অতিরিক্ত কোনো টাকা নিচ্ছেন না।
এদিকে ব্যবসায়ী ও ইজারাদারদের মধ্যে এমন মতপার্থক্য চলতে থাকলে এক সময় ঐতিহ্যবাহী এ ভাসমান নৌকার হাট চিরস্থায়ীভাবে হারিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
মাহামুদুর রহমান মাসুদ/এমএমজেড/জেআইএম