বিশ্বকাপের ইতিহাসে তার আগে রয়েছেন কেবল আর দু’জন ব্যাটসম্যান। শচীন টেন্ডুলকার আর ম্যাথ্যু হেইডেন। ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার এই দুই কিংবদন্তিকে ছুঁতে না পারার একটা আক্ষেপ হয়তো থেকে যাবে সাকিব আল হাসানের। সেমিফাইনালে খেলতে পারলে কিংবা গ্রুপ পর্বে যদি বৃষ্টিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি ভেসে না যেতো, তাহলে হয়তো বা শচিন টেন্ডুলকারকেও ছাড়িয়ে যেতে পারতেন সাকিব আল হাসান।
Advertisement
তবুও তো এক বিশ্বকাপে ৬০০ প্লাস রানের গৌরবের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারলেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে আজ সাকিব আউট হলেন ৬৪ রান করে। ৮ ম্যাচ খেললেন এবং প্রতি ম্যাচেই ৪০ প্লাস রান, এর মধ্যে দুটি সেঞ্চুরি, ৫টি হাফ সেঞ্চুরি এবং একটি ইনিংসে কেবলমাত্র সাকিব আউট হলেন ৪১ রান করে।
ক্রিকেট ইতিহাসে আর কোন ব্যাটসম্যান রয়েছেন এমন? যিনি এতটা ধারাবাহিকভাবে রান করে গেছেন? সাকিবের দুর্ভাগ্য, কোনো চ্যাম্পিয়ন দলের অংশ হতে পারেননি। পারলে নিশ্চিত, তার গৌরবটা হয়তো আরও সোনায় মোড়ানো।
কিন্তু যে দলের হয়ে তিনি খেলেছেন, সেই দলের হয়ে খেলার সৌভাগ্যও তো কম নয়! এই বাংলাদেশের হয়ে খেলে খেলেই আজকের সাকিব আল হাসান হয়েছেন তিনি। হয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। যার পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন তিনি দেখালেন এবারের বিশ্বকাপে।
Advertisement
ব্যাট হাতে শেষ পর্যন্ত সাকিব থামলেন ৬০৬ রানে। গড় ৮৬.৫৭ করে। বিশ্বকাপে তার চেয়ে এগিয়ে কেবল দু’জন। শচিন টেন্ডুলকার। ২০০৩ বিশ্বকাপে যিনি ১১ ম্যাচ খেলে করেছিলেন ৬৭৩ রান। ১টি সেঞ্চুরির সঙ্গে ৬টি হাফ সেঞ্চুরি ছিল শচিনের। গড় ছিল ৬১.১৮ করে।
২০০৭ বিশ্বকাপে ১১ ম্যাচে ১০ ইনিংস ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথ্যু হেইডেন করেন ৬৫৯ রান। ৩টি সেঞ্চুরির সঙ্গে ছিল ১টি হাফ সেঞ্চুরি। গড় ৭৩.২২ করে। সাকিবের পরে রয়েছেন শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়াবর্ধনে। ২০০৭ বিশ্বকাপেই তিনি করেছেন ৫৪৮ রান। ২০১৫ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপটিল ৯ ম্যাচ খেলে এক ইনিংসে অপরাজিত ২৩৭ রান করেও সংগ্রহ করেছিলেন ৫৪৭ রান।
সে তুলনায় ম্যাচ কম খেলে, গড় বেশি নিয়ে ৬০৬ রানের কীর্তি গড়া বিশ্বকাপে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হলেন সাকিব। ৪ বিশ্বকাপে ২৯ ম্যাচ খেলে সাকিবের মোট সংগ্রহ ১১৪৬ রান। সব মিলিয়ে নিয়েছেন ৩৪ উইকেট। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য বিশাল এক গৌরবের রেকর্ড। বাংলাদেশের ক্রিকেটের বাঁক বদলে দেয়া এক পারফরম্যান্স। শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসেই নয়, ক্রিকেটের ইতিহাসেই স্বর্ণাক্ষরে নাম লেখা থাকবে সাকিব আল হাসানের নাম।
শুধু ৬০৬ রান করাই নয়, বল হাতেও নিয়েছেন তিনি ১১ উইকেট। নিঃসন্দেহে বিশ্বকাপে যে কোনো কিছুর তুলনায় সেরা পারফরম্যান্স। শচিন, হেইডেন কিংবা অন্য যে কোনো ক্রিকেটারকে ছাড়িয়ে যাওয়া এক পারফরম্যান্স এবার উপহার দিয়েছেন সাকিব।
Advertisement
আইএইচএস/