খেলাধুলা

বিশ্বকাপে মাশরাফির শেষ ম্যাচটি স্মরণীয় করতে পারবেন ব্যাটসম্যানরা?

অধিনায়ক মাশরাফির বিশ্বকাপে শেষ ম্যাচে এ কি বোলিং-ফিল্ডিং বাংলাদেশের? তবে কি টিম বাংলাদেশের ফিল্ডাররা ধরে নিয়েছিলেন তাদের প্রিয় অগ্রজ, অভিভাবক আর সবচেয়ে কাছের মানুষ অধিনায়ক মাশরাফি এ ম্যাচ খেলবেন না? তাই যদি না হবে, তাহলে পাকিস্তানের বিপক্ষে লর্ডসে কেন এত বাজে ফিল্ডিং?

Advertisement

অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ ছাড়া আর একজন বোলারের বোলিংয়ে ছিল না কোন ধার। এক ম্যাচ পর দলে ফিরে দুই স্পেলে অসাধারণ বোলিং করলেন মিরাজ। বিশেষ করে বাঁহাতি ইমাম উল হক, ফাখর জামানের বিপক্ষে অফস্টাম্প ও তার আশপাশে খুব ভাল জায়গায় বল ফেলে রান গতি নিয়ন্ত্রণে রাখার কাজটি বেশ দক্ষতার সাথেই করেছেন মিরাজ। কিন্তু বাকিরা কেউ তার সঙ্গী হতে পারলেন না।

আর একজন বোলারেরও লক্ষ্য-নিশানা ঠিক ছিল না। হয় কেউ একটু বেশি ওপরে ব্যাটসম্যানের নাগালের ভিতরে হাফ ভলি বা ওভার পিচ দিয়েছেন। আর না হয় খাটো লেন্থে এবং অফ স্টাস্পের বাইরে অনেক বেশি জায়গা দিয়ে ফেলেছেন। মোদ্দা কথা, বোলিংয়ে ছিলনা কোন ধার।

যে মোস্তাফিজ ঠিক আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত বল করে ৫ উইকেট দখল করেছিলেন, আজ কোথায় শুরু থেকে বাড়তি উদ্যমে তেড়েফুড়ে পাকিস্তানীদের টুঁটি চেপে ধরবেন, তা না। বাজে লাইন ও লেন্থ বল ফেলে অকাতরে রান দিয়েছেন। তবে শেষ স্পেলে হঠাৎ আলোর ঝলকানি কাটার মাস্টারের।

Advertisement

পাকিস্তানি লেগস্পিনার সাদাব খানের রিটার্ন ক্যাচ লুফে নিলেন ফলো থ্রু‘তে অসাধারন ক্ষিপ্রতা ও দক্ষতায়। শেষ পর্যন্ত নামের পাশে আবার ৫ উইকেট যোগ হলেও সেই ধার না থাকায় রানও দিয়ে ফেললেন প্রচুর, ১০ ওভারে ৭৫।

অধিনায়ক মাশরাফিও বিশ্বকাপে নিজের শেষ ম্যাচকে স্মরণীয় করে রাখতে পারলেন না। আজও নামের পাশে উইকেট নেই অধিনায়কের। যথারীতি ১০ ওভারের কোটাও অপূর্ণই (৭ ওভারে ০/৪৬) থাকলো।

সাইফউদ্দীন ৩ উইকেট পেলেও ধারাবাহিকতা ছিল খুব কম। মাঝে মধ্যে কিছু ডেলিভারি ভাল করলেও তারপর পরই হয় খুব বেশি ওপরে না হয় অনসাইডে বল করে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের রান তোলার কাজ সহজ করে দেন। একদম শেষ ওভারে যখন ইমাদ ওয়াসিম আর মোহাম্মদ আমির ব্যাট করছিলেন, ঠিক তখনো অযথা খাটো লেন্থে বল ফেলে দুটি বাউন্ডারি হজম করেছেন সাইফউদ্দীন। তার ৯ ওভারে রান উঠলো ৭৭।

কেন যেন সাকিবও ঠিক অন্য দিনের মত টাইট বোলিং করতে পারেননি। আগের ম্যাচে ভারতের স্পিনে দক্ষ ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে ১০ ওভারে ৪১ রানে এক উইকেট পাওয়া সাকিব আজ উইকেটই পেলেন না। ১০ ওভারে আজ উঠলো ৫৭ রান।

Advertisement

এমন নির্বিষ ও আলগা বোলিংয়ের সাথে যোগ হলো যাচ্ছেতাই ফিল্ডিং। সঙ্গে আবারও সেই ক্যাচ মিসের মহরা! ফিল্ডাররা যেন পণ করেছেন প্রতিপক্ষের সেরা ও এক নম্বর ব্যাটসম্যানের ক্যাচই আমরা ফেলবো। ধরবো না।

পুরো বিশ্বকাপে তিন তিনটি বড় ম্যাচে আজ নিয়ে তিনবার ভাইটাল ক্যাচ গেল ফষ্কে। প্রথম, অস্ট্রেলিয়ার সাথে ক্যাচ ফেলে বিপদ ডেকে আনা। মাত্র ১০ রানে ডেভিড ওয়ার্নারের ক্যাচ ফেলে সর্বনাশ ডেকে এনেছিলেন সাব্বির রহমান রুম্মন । জীবন পাবার পর সেই ওয়ার্নার পরে সেঞ্চুরি করে খেলেছিলেন ১৬৭ রানের লম্বা ইনিংস। যার ওপর ভর করে অস্ট্রেলিয়া করেছিল ৩৮১ রানের হিমালয় সমান স্কোর।

তারপর গত খেলায় রোহিত শর্মাকে ৯ রানে জীবন দিলেন তামিম। নিশ্চিত ক্যাচ আউটের হাত থেকে বেঁচে ভারতের এ ড্যাশিং ওপেনার করে গেলেন ১০২ রান। সেই ইনিংসটিই ভারতকে ৫০ ওভার শেষে পৌঁছে দিয়েছিল ৩০০‘র ঘরে।

আর আজ পাকিস্তানের বিপক্ষেও সেই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্যাচ মিস। পাকিস্তান ব্যাটিং স্তম্ভ ও এক নম্বর ব্যাটম্যান বাবর আজমের দু দুটি ক্যাচ গেল হাত ফষ্কে। প্রথমবার মোস্তাফিজের বলে মোসাদ্দেক ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মোসাদ্দেকের বলে লোপ্পা ক্যাচ ফেললেন।

৫৭ রানে দাঁড়িয়ে মোসাদ্দেককে অফস্টাম্পের ঠিক বাইরে ফ্ল্যাশ করতে চেয়েছিলেন বাবর আজম। বল চলে গেল পয়েন্ট আর ঠিক ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের মাঝখানে দাঁড়ানো মোসাদ্দেকের হাতে। দু হাতে নিয়েও তা ধরে রাখতে পারলেন না মোসাদ্দেক। ঠিক দুই ওভার পর অফস্পিনার মিরাজের বলে সেই বাবরের ক্যাচ গ্লাভসে নিতে পারলেন না মুশফিক। তখন বাবরের রান ৬৫।

জীবন পেয়ে ওয়ার্নার আর রোহিত শর্মা সেঞ্চুরি করেছিলেন। আজ লর্ডসে বাবর আজম ঠিক সেই পথেই হাঁটছিলেন। সাইফউদ্দীনের প্রায় ইয়র্কার লেন্থের এক ডেলিভারিতে শতরানের খুব কাছে গিয়ে (৯৮ বলে ৯৬) ফিরেছেন। সেঞ্চুরি করতে না পারলেও ৫৭ আর ৬৫ ‘তে বেঁচে যাওয়া বাবর শেষ পর্যন্ত ৯৬ রান করলেন ৩৯ রান বোনাস পেয়ে।

ক্যাচ মিসের খেসারত কেমন ছিল? ছোট্ট পরিসংখ্যানই বলে দেবে তা। ২৫ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান ছিল ১ উইকেটে ১১৫। বাবর আজম দুই বার জীবন পাবার পরের ৫ ওভারে রান উঠলো ৪৮। ২৫ থেকে ৩৫-এই ১০ ওভারে যোগ হলো ৮২।

একপ্রান্তে ইমাম উল হক ১০০.০০ স্ট্রাইক রেটে শতরান করেছেন। তাতে খুব বড় ক্ষতি হয়নি টাইগারদের। কারণ এক তাল, লয় ও ছন্দে খেলা বাঁহাতি ইমাম কখনই খুব বিপজ্জনক হয়ে ওঠেননি। ফিল্ডিং ব্যাকআপ ভাল হলে একপ্রান্ত আগলে রাখা ইমাম উল হকও হয়ত রানের তাড়ায় আর একটু হাত খুলে মারতে গিয়ে আউট হতেন।

কিন্তু চরম বাজে গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে ইমাম উল হকও লম্বা খেলে ফেললেন। পুরো বিশ্বকাপেই বাংলাদেশের ফিল্ডিং ভাল হয়নি। আজ পাকিস্তানের সাথে অধিনায়ক মাশরাফির বিশ্বকাপের বিদায়ের ম্যাচে সেটা হলো সবচেয়ে খারাপ। একেক জন পাল্লা দিয়ে বাজে ফিল্ডিং করলেন। দু পায়ের ফাঁক গলে বল বেড়িয়ে গেল অন্তত তিন চার বার।। আর উল্টো পাল্টা থ্রো থেকেও অন্তত ১০-১২ রান অতিরিক্ত পেলো পাকিস্তানিরা।

আর তাই ৫০ ওভার শেষে সরফরাজ বাহিনীর সংগ্রহ ৩১৫। ভারতের চেয়ে মাত্র ১ রান বেশি। উইকেট একদম ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি। শতভাগ ব্যাটিং সহায়। দেখা যাক আজ কি করেন তামিম-সাকিব-মুশফিকরা।

আমির, ওয়াহাব রিয়াজ আর শাহীন আফ্রিদীর বলের গড়পড়তা গতি শামি, ভুবনেশ্বর, জাসপ্রিত বুমরা আর হারদিক পান্ডিয়ার চেয়ে বেশি। কিন্তু ভারতীয়রা অনেক বেশি টাইট। আলগা ডেলিভারি ছিল কম। আর ফিল্ডিংটাও ছিল টাইট। সে তুলনায় পাকিস্তানীরা গতি নির্ভর। তবে আমির-ওয়াহাবের সুইং আছে। কিন্তু লর্ডসের এ উইকেটে দুপুরে তাদের বল ম্যুভ করানো কঠিনই হবে।

কাজেই কাজটা কঠিন নয়। আর লক্ষ্যটাও খুব যে বড়, তাও নয়। নাগালের ভিতরেই আছে। এখন সামর্থ্যের প্রয়োগ ঘটাতে হবে। ব্যাট করতে হবে শুধু হিসেব কষে। শুরুটা ভালো করা দরকার। তারপর দেখে খেলে একটি বড় না হয় ১০০ ‘র আশপাশে দুটি পার্টনারশিপ গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই হয়ে যাবে।

এআরবি/এমএমআর/পিআর