বিনোদন

অনেক সংকটের মধ্যেও কাজ করছি আমরা : মেহজাবিন

কোটি কোটি দর্শক তার অভিনয় দেখে হাসেন, কাঁদেন। তার ইমোশনের সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে যান। বিশেষ করে ‘বড় ছেলে’ নাটকটি আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা দিয়েছে তাকে। সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় সদা হাস্যোজ্জ্বল সেই মেয়েটির সঙ্গে দেখা হয় উত্তরার এক শুটিং হাউসে। বুঝে যাওয়ার কথা সেই মেয়েটি আর কেউ নন, তিনি সবার প্রিয় অভিনেত্রী মেজাবিন।

Advertisement

শুটিং বাড়ির সামনে যেতেই দেখা গেলো লাল নীল বাতি দিয়ে সাজানো চারদিক। ঠিক যেন বিয়ে বাড়ি। তবে বাড়ির ভেতরে ঢুকে বউ সেজে বসে থাকতে দেখা গেলো না মেহজাবিনকে। হাসান রেজাউলের পরিচালনায় 'প্রেম তুমি আমি' শিরেনামের একটি নাটকে শুটিং করছিলেন তিনি।

শুটিংয়ের ফাঁকেই মেকাপ রুমে চললো আলাপ। খুব অল্প সময়ে দীর্ঘ আলাপচারিতা হয়ে গেল। নাটক, নিজের ক্যারিয়ার, দর্শকের উচ্ছ্বাস, সমালোচনা, প্রেম, বিয়ে নানা বিষয়ে কথা হলো তার সঙ্গে। তুলে ধরা হলো আলাপের চুম্বক অংশ।

জাগো নিউজ : কোনো নাটকে কি সাংবাদিক চরিত্রে অভিনয় করেছেন কখনো? সাংবাদিক হলে প্রথমেই অভিনেত্রী মেহজাবিনকে কী প্রশ্ন করতেন?

Advertisement

মেহজাবিন : না, কোনো নাটকে সাংবাদিক চরিত্রে অভিনয় করা হয়নি। আর সাংবাদিক হলে আমি মনে হয় কাজের ব্যাপারেই প্রশ্ন করতাম। এখন বেশির ভাগ সাংবাদিকরা কাজের চেয়ে কাজের বাইরে প্রশ্ন করে। আমি সেটা করতাম না।

জাগো নিউজ : আচ্ছা তাহলে কাজের প্রশ্ন দিয়েই শুরু হোক। আজ যে নাটকে অভিনয় করছেন সেই নাটকটি নিয়েই বলুন।

মেহজাবিন : নাটকটির নাম ‘প্রেম তুমি আমি’। এটা ঈদুল আজহায় একটি চ্যানেলে প্রচারের লক্ষ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে। এটাকে একটা ফ্যামিলি ড্রামা বলা যেতে পারে। হাস্যরসও থাকছে। নাটকটি নির্মাণ করছেন হাসান রেজাউল। তার পরিচালনায় প্রথবারের মতো অভিনয় করছি। যতটুকু শুটিং করেছি তাকে নির্মাতা হিসেবে বেশ গোছানো, ভালো মনে হয়েছে। নাটকটিতে আমার বিপরীতে অভিনয় করছেন ইরফান সাজ্জাদ।

জাগো নিউজ : প্রচুর রোমান্টিক গল্পের নাটক নির্মাণ হচ্ছে এখন। স্বাভাবিকভাবেই অভিনয় করতে গিয়ে প্রেমিকার চরিত্রেই অভিনয় করতে হচ্ছে ঘুরে ফিরে। একই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে বোরিং লাগে না?

Advertisement

মেহজাবিন : এটা বোধহয় পুরো ঠিক না। যেমন গত ঈদে ২০-২৫টা নাটকে অভিনয় করেছি। প্রত্যেকটা নাটকেই আলাদা চরিত্র ছিল। আর প্রেম তো থাকবেই। প্রেম ছাড়া আসলে কোনো কিছুই হয় না। মা ও মেয়ের গল্প নিয়ে নাটক বানালেও সেটাও প্রেমেরই গল্প হয়। বাবা, মা, ভাই, বোন, বন্ধু সব সম্পর্কই আসলে প্রেমের বন্ধনে মোড়ানো।

নাটকের ধরন কিন্তু খুব বেশি না। নাটকটির শেষ হয় তো আনন্দের হবে অথবা কষ্টের হবে। যে কোনো মানুষের জীবনের গল্পই এমন, সেটা সুখের অথবা কষ্টের। এর বাইরে আর কিছু হয় না। এর বাইরে এক্সপেক্টেশন করাটাও বোকামি বলে আমি মনে করি।

যদি আমার কথা বলি, তাহলে বলবো ব্যক্তিগতভাবে আমি রোমান্টিক নাটক করতে পছন্দ করি। কারণ দর্শক আমাকে এই ধরনের নাটকে দেখতেই পছন্দ করেন।

জাগো নিউজ : নাটকের ক্ষেত্রে দেখা যায় স্ক্রিপ্ট পাওয়ার পর হাতে বেশি সময় থাকে না। এত অল্প সময়ে সেই নাটকটির কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেন?

মেহজাবিন : আসলে সবার হাতেই খুব অল্প সময় থাকে। এর মধ্যেই গুছিয়ে কাজটি করতে হয়। চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে দেখা যায়, একটা চলচ্চিত্রের জন্য অনেক দিন ধরে প্রস্তুতি নেন শিল্পীরা।

যেহেতু নাটক করতে গিয়ে অনেক অনেক লিমিটেশন আছে আমাদের। দুই দিনে নাটক শেষ করতে হয়, এর মধ্যে অনেক কাজ করতে হয়। কস্টিউম, ডায়ালগ, লুক পরিবর্তন করে যতটা সম্ভব আমরা নটকটি সুন্দর করার চেষ্টা করি।

জাগো নিউজ : একটি নাটক ভালো হওয়ার জন্য শিল্পীর কী করণীয়?

মেহজাবিন : নাটকের মান ভালো হতে হলে আসলে ভালো বাজেটের প্রয়োজন। স্ক্রিপ্টে ডিফরেন্ট ক্যারেক্টার থাকলে নাটকেও ডিফরেন্ট ক্যারেক্টার আসবে। স্ক্রিপ্ট পছন্দ না হলে বড় জোড় কাজটি বাদ দিয়ে দেওয়া যায়। আমারা অনেক সময় চেষ্টা করি ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন করে গল্পটিকে আরও ভালো করার। অন্য কোনো গল্পের সঙ্গে যেন এটা মিলে না যায় সেই চেষ্টা থাকে সবসময়। নাটকের পুরো টিমেরই চেষ্টা থাকে একটা ভালো কিছু করার।

জাগো নিউজ : বর্তমান সময়ে আমাদের নাটকে সংকট ও সম্ভাবনা কী?

মেহজাবিন : সংকট হচ্ছে বাজেট। বাজেট বাড়লে কাজের মান নিজ গতিতে অনেক ভালো হয়ে যাবে। আর সম্ভাবনার শেষ নেই। সবাই দুই দিনের মধ্যে প্রেসার নিয়ে কাজ করছে। আমার মনে হয় দুনিয়ার আর কোথাও এভাবে শুটিং হয় না। শুধুমাত্র এই স্টাইলটা বাংলাদেশেই আছে। যারা এখন নাটক করছে তাদেরকে স্যালুট দেওয়া উচিৎ। অনেক সংকটের মধ্যেও কাজ করছি আমরা। দর্শকদের বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই চেষ্টাটাই একটা অনেক বড় ব্যাপার। সেটার কথা কিন্তু কেউ বলে না।

জাগো নিউজ : নাটকে গানে ব্যবহার বেড়েছে, এটা কেমন লাগে?

মেহজাবিন : আমি মনে করি এটা যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে এটা করা উচিৎ। অনেক নির্মাতারা মনে করছেন এটা প্রয়োজন। নাটকের গানও মানুষ গ্রহণ করছে এখন। আবার অনেক নাটকে গান থাকছেও না। যেটা প্রয়োজন সেইটাই করা উচিৎ।

জাগো নিউজ : এক সময় প্রচুর নাচের অনুষ্ঠানেও দেখা মিলতো আপনার, এখন কম কেন ?

মেহজাবিন : নাচ আমার প্রিয় একটা জায়গা। নাটকের কাজের চাপে এখন নাচের অনুষ্ঠানে কম সময় দেওয়া হচ্ছে।

জাগো নিউজ : সিনেমা নিয়ে ভাবনা কী?

মেহজাবিন : সাত আট বছর ধরেই সিনেমাতে অভিনয়ের ডাক পাচ্ছি। আমার মনে হয়, আমি নাটক করছি আর নাটকেই বেশি সময় দেয়া উচিত আরও। নাটকে এখন অনেক ধরনের ক্যারেক্টার করা বাকি আছে। সেগুলো করতে চাই আগে। ভবিষ্যতে সিনেমা করবো কি-না সেটা এখন বলা উচিৎ হবে না।

জাগো নিউজ : নিজের পছন্দের কোনো চরিত্রে আছে, যেই চরিত্রে অভিনয় করতে চান কিন্তু এখনো করা হয়নি?

মেহজাবিন : এমন অসংখ্য ক্যারেক্টার আছে। এখনো মার্ডার করার চরিত্রেই অভিনয় করিনি। হা হা হা। বলতে গেলে ক্লিনার, মার্ডারার এমন অনেক চরিত্রেই অভিনয় করতে বাকি।

জাগো নিউজ : একটা প্রবণতা আছে আমাদের এখানে। যখন কোনো তারকা কোনো চরিত্রে অভিনয় করে সফলতা পেয়ে যায় তখন ওই ধরনের চরিত্রেই তাকে দিয়ে অভিনয় করাতে চান সবাই। আপনার ক্ষেত্রে সেই রকম কী হচ্ছে?

মেহজাবিন : আমি মনে করি ওই রকম কিছুই হচ্ছে না। ট্রেন্ড সব সময় ছিল, থাকবে। একটা সময় ট্রেন্ড ছিল ফ্যামিলি ড্রামার। এখন ট্রেন্ড হচ্ছে রোমান্টিক নাটকের। ভালোবাসায় দুঃখ ও সুখ দুইটাই থাকে। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই সুখের দিন থাকে দুঃখের দিনও থাকে। আমরা যখন একটা নাটক করি সেখানে একটা মানুষের জীবনের গল্প দেখাতে চাই। সেখানে হাসি কান্না তো থাকবেই। কেউ হয়তো মারাও যাবে। এটাই তো রিয়্যালিটি।

জাগো নিউজ : আপনার কি মনে হয় না, ‘বড় ছেলে’ নাটকের সফলতার পর আপনাকে নাটকে বেশি কাঁদানো হচ্ছে?

মেহজাবিন : না, আমার সেই রকম মনে হয় না। যা করি সেটা গল্পের প্রয়োজনেই করি। সবার তো আসলে কোনো না কোনো দক্ষতা থাকে। আমি হয়তো ট্রাজেডি কিংবা ইমোশনাল অভিনয় ভালো করতে পারি। আমি সেটাই করবো। জেমস ভাইকে গিয়ে কেউ কখনো বলবে না আপনি ক্ল্যাসিক্যাল গান করেন না কেন? কনকচাঁপা কিংবা রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা আপাকে নিশ্চয় কেউ রক গান গাইতে বলবেন না। এমন সবার কোনো না কোনো স্পেশালিটি থাকে। সেটাকে রেসপেক্ট করা উচিৎ। তাকে স্বাধীনতা দেওয়া উচিৎ। যে যেটা ভালো পারে তাকে সেটাই করানো উচিৎ।

জাগো নিউজ : সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনাকে নিয়ে লেখা একটা কবিতা ছড়িয়ে ছিল কিছুদিন আগে। যেটা জসিমউদ্দিনের কবর কবিতাকে প্যারোডি করা হয়েছে আপনার কান্নামাখা চরিত্রগুলোকে ব্যঙ্গ করে। আরও অনেকের কথাই ব্যঙ্গাত্মকভাবে তুলে আনা হয়েছে। কবিতাটি পড়েছেন?

মেহজাবিন : আমি দেখেছি, কিন্তু পড়ার সময় পাইনি।

জাগো নিউজ : অবিবাহিত তারকাদের পিছু ছাড়ে না একটা প্রশ্ন -বিয়ে কবে? পছন্দের কোনো পাত্র আছে? আপনাকে নিয়ে বিয়ের গুজবও ছড়িয়েছে বেশ কয়েকবার। এ ব্যাপারে কী বলবেন?

মেহজাবিন : এ বিষয়ে আসলে বেশি কিছু বলার নেই। যাদের কাজ নেই তারা গুজবেই ব্যস্ত থাকে। বিয়ে মানুষের জীবনের একটি অনেক বড় সিদ্ধান্ত। আমি নিজের পছন্দে নয়, বাবা মায়ের পছন্দেই বিয়ে করবো।

জাগো নিউজ : সবশেষে কী বলবেন?

মেহজাবিন : আমরা অনেক কষ্ট করে কাজ করি। আমাদের কাজটা দেখবেন। কাজ নিয়ে ভালো মন্দ বলবেন। কীভাবে শুধরানো যায় সেটাও বলবেন। কোনো কাজকে খারাপ বলা অনেক সহজ বা ফেসবুকে কমেন্ট করে দেওয়া অনেক সহজ। কিন্তু গঠনমূলক সমালোচনায় কাজকে উৎসাহ সবাই দিতে পারেন না। সবার কাছে সমর্থন চাই।

দেখুন, রিভিউ লেখা অনেক সহজ। কাজ নামানো অনেক ডিফিকাল্ট। সমালোচনাটা যেনো লজিক্যাল হয় সেই দিকে খেয়াল রাখা উচিৎ। নাটক নিয়ে আজে বাজে মন্তব্য না করে, একটা ছোটো গল্প দিয়ে দিবেন। আপনারা ভালো আইডিয়া দিলে সেটাও গ্রহণ করবো আমরা।

যে-ই সমালোচনা করুন, অবশ্যই আপনার ক্রেডিটসহ করুন। ভালো হয়নি, ফালতু, বস্তা পচা না বলে আমাদের গল্প দিন, আইডিয়া দিন।

এমএবি/এলএ/এমকেএইচ